প্রতিটা বলের হিসেব নিয়ে নেমেছিল হনুমা-অশ্বিন

সিডনি টেস্টে শেষ দিনের খেলা নিয়ে TV9 বাংলায় শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের কলম।

প্রতিটা বলের হিসেব নিয়ে নেমেছিল হনুমা-অশ্বিন
Follow Us:
| Updated on: Jan 11, 2021 | 6:02 PM

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

অস্ট্রেলিয়া ৩৩৮ ও ৩১২-৬ (ডিঃ)

ভারত ২৪৪ ও ৩৩৪-৫

(টেস্ট ড্র, সিরিজ ১-১)

ম্যাচ রিপোর্টটা কাকে দিয়ে শুরু করব, বুঝতে পারছি না। চেতেশ্বর পূজারা? ঋষভ পন্থ? হনুমা বিহারি? রবিচন্দ্রন অশ্বিন?

নাকি, অকল্পনীয় ভারতীয় মনোবল দিয়ে শুরু করব লেখাটা? ৩৬ রানে বিপর্যয়ের পরও যারা ঘুরে দাঁড়াতে জানে। মেলবোর্ন ছিনিয়ে নিতে পারে। সিডনিতে নিশ্চিত হার পাল্টে দিতে পারে।

টেস্ট ক্রিকেটের এই এক মজা। এই মনে হয় খেলাটা শেষ। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ায় একটা টিম। অনেক সময় হয়তো ম্যাচও ছিনিয়ে নেয়। না পারলে অন্তত ম্যাচটা আশ্চর্য ড্র করে দেয়। সিডনির পঞ্চম দিন আমি অবাক হয়ে ভারতীয় টিমকে দেখছিলাম। কিছু যুক্তির কথা আগের দিনই তুলে ধরেছিলাম, সেগুলোকেই চমত্‍কার কাজে লাগিয়ে দিল।

আরও পড়ুন : ভারতের ব্যাটিংকে খাটো করে ট্রোলড পন্টিং

রবিবারই বলেছিলাম, সিডনিতে ভারতের জেতা খুব একটা সহজ হবে না। কিন্তু ড্র, সেটা তো করা যায়। আর সেটা যদি করতে পারে, ভারতীয় টিম লড়াইয়ের একটা অন্য আঙ্গিক তুলে ধরবে। তার জন্য দরকার ছিল পূজারার একটা ওর স্টাইলে খেলা ইনিংস। মানে, ২৫০ বলে ৭০-৮০ রান। রাহানে কিংবা পন্থের একটা সেঞ্চুরি। আর হনুমা বিহারি-রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মাটি কামড়ে পড়ে থেকে একটা ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস। সেটা কার্যত করে দেখাল ভারত।

রাহানে সকালে ফিরে যাওয়ার পর সাময়িক একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পূজারা আর পন্থ মিলে ওটা নিমেষে উড়িয়ে দিয়েছিল। পন্থের আগ্রাসী ব্যাটিং আমার বরাবর ভালো লাগে। যে কোনও টিমে একজন এই রকম ব্যাটসম্যান দরকার পড়ে, যে পাল্টা আক্রমণ করবে। বানচাল করে দেবে বিপক্ষের পরিকল্পনা। এতটা চাপ তৈরি করবে যে, প্রতিপক্ষ বোলাররা যেন তার পছন্দের স্পটেই বল রাখে। পন্থ ঠিক সেই কাজটাই অবলালীয় করে গেল। ১১৮ বলে ৯৭ রানের ইনিংসটার কোনও তুলনা হবে না। খারাপ লাগছে, ও সেঞ্চুরিটা মিস করল বলে।

পন্থেরই মতো মন ভরে দেখলাম পূজারাকে। একদিকে ঝড়, উল্টো দিকে যেন শান্ত সমুদ্র। দুই বিরল ভাবনার ব্যাটসম্যানে স্বাদ বদলে যাচ্ছিল। পূজারা ২০৫ বলে ৭৭ রানের ইনিংসটা যদি না খেলত, ভারতের লড়াইটা তা হলে হয়তো এতটা ঝলমলে দেখাত না।

আরও পড়ুন : পেনকিলার নিয়ে পন্থের আগ্রাসী ইনিংসটাই টার্নিং পয়েন্ট

টেস্ট ক্রিকেট যারা ভালোবাসে, তারা জানে, পাঁচ দিনের একটা ম্যাচ সেশন অনুযায়ী হয়। প্রতিটা সেশনের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা না রাখলে কিন্তু একটা টেস্ট জেতা যায় না। সিডনির ম্যাচটা দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল, একটা টেস্ট বাঁচানোর জন্য বল পিছু পরিকল্পনা রাখতে হয়। নাথান লিয়ঁর ওভারের জন্য একরকম। মিচেল স্টার্কের জন্য একরকম। হ্যাজেলউড কিংবা প্যাট কামিন্সের জন্য আর একরকম। কোথাও পরিকল্পনা একটু ধাক্কা খেলেই বিপদ।

প্রতিটা বলের হিসেব নিয়েও যে টেস্ট ক্রিকেট খেলা যায়, তার নমুনা রাখল হনুমা আর অশ্বিন। ৪২.২ ওভার, বলের হিসেব ধরলে ২৫৬। মাঠের চাপ, ঘাড়ের কাছে বিপক্ষের ফিল্ডার, উইকেটের পিছন থেকে টুকরো মন্তব্যগুলো আর গ্যালারির অভব্য আচরণ, সবটা যদি যোগ করি আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে বোধহয়। উল্টো দিকে যখন সবই হাতের বাইরে, তখনই হনুমা আর অশ্বিন চিরকাল মনে রাখার মতো একটা ইনিংস খেলে গেল।

অন্যদের কথা বলতে পারব না। আমি কিন্তু এমনই একটা ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় ছিলাম! আর যাঁরা সনাতনী ক্রিকেট ভালোবাসেন, আমার মতো তাঁরাও বলবেন, টেস্ট ক্রিকেট এখনও বেঁচেবর্তে আছে!