Mahendra Singh Dhoni : ধোনির বিকল্প কে হতে পারেন? উত্তর কি, ‘ধোনি নিজেই’!
Captain Cool : তুষার দেশপান্ডে ভালোভাবেই বুঝেছিলেন, এই বার্তা মূলত তাঁর জন্যই। সঙ্গে বাকিদেরও সতর্ক করে দেওয়া। কাকতলীয় ঘটনা নাকি অধ্য়াবসায়! মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে একটিও নো বল করেননি সিএসকে বোলাররা।
কলকাতা : গত কয়েক বছরের পরিচিত লাইন, ‘এটিই আইপিএলে ধোনির শেষ মরসুম।’ এই করে কেটে গিয়েছে কয়েকটা বছর। এ বারও এই বাক্য়টি প্রাসঙ্গিক। গত মরসুমের শুরুতেই চেন্নাই সুপার কিংসের নেতৃত্ব ছেড়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রবীন্দ্র জাডেজাকে। কয়েক ম্য়াচ পরই অবশ্য চিত্রটা বদলে যায়। নেতৃত্বের চাপ নিতে পারেননি জাড্ডু। তাঁর ব্য়ক্তিগত পারফরম্য়ান্স খারাপ হয়। নেতৃত্ব ছাড়েন জাডেজা। চোট পেয়ে টুর্নামেন্টের মাঝপথে ছিটকেও যান। আবারও দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এ বারও আইপিএল শুরুর আগে প্রশ্ন উঠছিল, ধোনি কি নেতৃত্ব দেবেন? আদৌ কি সব ম্যাচ খেলবেন? টুর্নামেন্টের এখনও অনেক ম্য়াচ বাকি। অন্তত চেন্নাই সুপার কিংসের প্রথম তিন ম্য়াচ দেখে বলা যায়, ধোনিকে খেলতেই হবে…। কেন না ওঁর বিকল্প আর কেই বা রয়েছে! বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
টিম সিলেকশন : চেন্নাই সুপার কিংসকে অকশন টেবলে মাঝে মাঝে বেহিসেবি মনে হয়। এমন প্লেয়ারদের জন্য় ছোটে, যাঁদের বেশির ভাগকে নিয়েই বাকিরা মাথা ঘামায় না। এ বারের মরসুমে যেন অজিঙ্ক রাহানে। প্রথম দু-ম্য়াচে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। মুম্বইয়ের মাঠেই সুযোগ দেওয়া হল রাহানেকে। বেন স্টোকস, মইন আলির মতো তারকা অলরাউন্ডার নেই। রাহানের মতো ‘ফর্মের’ ধারে কাছে না থাকা, ‘ফুরিয়ে’ যাওয়া এক ব্য়াটারকে সুযোগ দিলেন ধোনি। তাও আবার তিন নম্বরে ব্য়াটিংয়ে পাঠালেন। বড্ড ঝুঁকি হয়ে গেল না! সত্যিই ‘ঝুঁকি’ হল। তবে সেটা মুম্বই শিবিরের। এ বারের আইপিএলে দ্রুততম অর্ধশতরান করেন অজিঙ্ক রাহানে। মাত্র ১৯ বলে। এর মধ্যে আর্শাদ খানের এক ওভারে নিয়েছেন ২৩ রান!
বোলিং চেঞ্জ : জাতীয় দলে তাঁর বোলিং পরিবর্তন এবং ম্য়াচ হারলে সমালোচনা অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ম্যাচে সবচেয়ে খারাপ বল করা কাউকে চাপের মুখে ঠেলে দিয়েছেন এবং ম্য়াচও জিতেছে ভারত। এ বারের আইপিএল প্রসঙ্গে আসা যাক। ঘরের মাঠে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে ম্য়াচ। শেষ দু-ওভারে প্রতিপক্ষর প্রয়োজন আর ৩৭ রান। তরুণ পেস বোলিং অলরাউন্ডার রাজবর্ধন হাঙ্গারকেকরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৯ তম ওভারে বোলিং দেন ধোনি। তাঁর কাছে নির্দেশ ছিল ওয়াইড ইয়র্কার চেষ্টা করা। তাতে যদি কয়েকটা বল ওয়াইডও হয়, কুছ পরোয়া নেহি। তিনটি ওয়াইড দেন রাজবর্ধন। কিন্তু এই ওভারে শেষ অবধি উঠেছিল মাত্র ৯ রান। শেষ ওভারে বোলিং দেন তুষার দেশপান্ডেকে। পরপর দু-ম্য়াচে তাঁকে ইমপ্য়াক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামিয়েছিলেন। প্রথম তিন ওভারে ৩১ রান দেওয়া তুষারের ওপর ভরসা রাখেন অধিনায়ক। সেই ওভারে ১৫ রান যায়। ১২ রানে ম্য়াচ জেতে সিএসকে। প্রশ্ন উঠেছিল, আদৌ পরের ম্যাচে সুযোগ পাবেন তুষার! মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশেই জায়গা পেলেন। ৩ ওভারে ৩১ রান রান দিয়ে ২ উইকেটও নেন তুষার দেশপান্ডে।
ব্যাটার ধোনি : আইপিএলে ৫ হাজারের বেশি রান। অনেকেই বলতে পারেন, আরও অনেকেরই রয়েছে! একদম ঠিক, যদি পাল্টা বলা যায়, তাঁরা কি ৪ নম্বরের পরে ব্য়াট করতে নামেন? ভাবতে হবে। তাই নয় কি! মহেন্দ্র সিং ধোনি কিন্তু সাত নম্বরে নামেন। হাতে গোনা কিছু বল সুযোগ পান। এ বার প্রথম ম্য়াচে ৭ বল সুযোগ পেয়েছেন, ১৪ রান করেছেন। দ্বিতীয় ম্য়াচে ইনিংসের পাঁচ বল বাকি থাকতে নামেন। পরপর দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে তৃতীয় বলে মিস হিটে আউট। তবে ৩ বলে ১২ রানের এই ইনিংসই শেষ অবধি লখনউয়ের বিরুদ্ধে জয়ের ব্যবধান হয়ে দাঁড়ায় সিএসকের। ওয়াংখেড়েতে হতাশা, ধোনি ব্য়াট হাতে নামারই সুযোগ পেলেন না। প্য়াড পরে রেডি হয়েছিলেন, নামতে হয়নি। তবে লোয়ার অর্ডারে এখনও বড় ভরসা এমএসডি।
ডিআরএস : টেকনিক্য়ালি এর পুরো নাম ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম। ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে ধোনি রিভিউ সিস্টেম। বিশ্বের তাবড় তাবড় আম্পায়ারও ধোনি রিভিউ নিলে চাপে পড়েন। মুম্বই ম্য়াচের কথাই ধরা যাক। বাঁ-হাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বোলিংয়ে সুইপ খেলেছিলেন সূর্যকুমার যাদব। লেগ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে বল। দীর্ঘ সময় কট বিহাইন্ডের আবেদন করা সত্ত্বেও আউট দেননি অনফিল্ড আম্পায়ার। ধোনিও দেরি করেননি। সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানান। রিপ্লে-তে পরিষ্কার হয়ে যায়, সূর্যকুমারকে ফিরতে হয় ডাগআউটে।
মাথা ঠান্ডা রাখা : ধোনিকো গুস্সা নেহি আতা? অবশ্যই এসেছে। কিন্তু হাতে গোনা এক-দু বার। বরাবর মাথা ঠাণ্ডা রাখা তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট। হার-জিত যাই হোক, অভিব্য়ক্তি যেন এক থাকে। কোনও বোলার ভুল করলে! তাঁকে রাগ দেখাতে হয় না। মুখ ঘুরিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট। লখনউ ম্য়াচে তুষার দেশপান্ডে বেশ কিছু নো-বল করেন। ধোনি ম্য়াচ চলাকালীন কিছু বলেননি। ম্য়াচ শেষে তুষার ধোনির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। পোস্ট ম্য়াচে সম্প্রচারকারী চ্য়ানেলে একটা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। যদিও সরাসরি কাউকে উদ্দেশ করে নয়। শুধু বলেছিলেন, ‘আমাদের অনেক ওয়াইড-নো বল হচ্ছে। ভুলের সংখ্য়া কমাতে হবে। নয়তো কোন দিন সকালে উঠে দেখবে, আমি দলের সঙ্গে নেই।’ তুষার দেশপান্ডে ভালোভাবেই বুঝেছিলেন, এই বার্তা মূলত তাঁর জন্যই। সঙ্গে বাকিদেরও সতর্ক করে দেওয়া। কাকতলীয় ঘটনা নাকি অধ্য়াবসায়! মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে একটিও নো বল করেননি সিএসকে বোলাররা। ওয়াইড মোট পাঁচটি। তুষার দেশপান্ডে মাত্র একটি ওয়াইড। বাকি চারটি ওয়াইড এ বারের প্রথম ম্য়াচে নামা ডোয়েন প্রিটোরিয়াসের।