ISL 2021-22: স্ট্র্যাটেজি আর অরিন্দমের ভুলে ডার্বি উৎসব বাগানে

নব্বই মিনিটের একটা ম্যাচ অনেক গল্প বলে। অরিন্দম, শুভমরা থাকেন সে সব কাহিনিতে। কিন্তু কিছু গল্পে হিরো হয়ে যান প্রত্যাশিত কিছু মুখ। রয় কৃষ্ণার মতো, মনবীর-লিস্টনদের মতো! ৩-০ কি শুধুই স্কোরলাইন? আইএসএলের তিন ডার্বি ম্যাচেও যে তিনবার জিতল মোহনবাগান!

ISL 2021-22: স্ট্র্যাটেজি আর অরিন্দমের ভুলে ডার্বি উৎসব বাগানে
ISL 2021-22: স্ট্র্যাটেজি আর অরিন্দমের ভুলে ডার্বি উৎসব বাগানে (ছবি-আইএসএল টুইটার)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 27, 2021 | 11:06 PM

অভিষেক সেনগুপ্ত

এটিকে মোহনবাগান-৩: এসসি ইস্টবেঙ্গল-০ (কৃষ্ণা ১২, মনবীর ১৪, লিস্টন ২৩)

ভাগ্য টেনে তোলে কখনও। ভাগ্যই কখনও টেনেও নামায়। একই মঞ্চে অনেক সময় দেখা যায় উত্থান আর পতনের যুগপৎ খেলা। অরিন্দম ভট্টাচার্য গতবারের আইএসএলের (ISL) সেরা কিপার। কে জানত, ভুলের অন্ধকারে ডুবতে হবে তাঁকে। কে-ই বা জানত, তাঁরই মঞ্চে প্রবেশ হবে আর এক বাঙালি কিপারের। ডার্বি এমনই। নায়ক চেনায়। নায়কের জন্ম দেয়। ভাগ্যিস! শুভম সেন যদি না থাকতেন, ৫-০-র সীমাহীন অন্ধকারে ডুবেই যেত ইস্টবেঙ্গল!

মাত্র ১১ মিনিটের ঝড়। আর তাতেই রীতিমতো বিপর্যস্ত লাল-হলুদ টিম। ১২, ১৪ এবং ২৩ মিনিট! এটিকে-মোহনবাগানের পর পর ৩ গোলে ম্যানুয়েল দিয়াজ নামের এক স্প্যানিশ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছেন। রয় কৃষ্ণা, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, হুগো বোমাস রীতিমতো সুনামি তুলেছেন পাসের। আর তাতেই ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স বেআব্রু। কৃষ্ণা শুরু করলেন গোল দিয়ে। মনবীর, লিস্টনরা পরের ১১ মিনিটে তাঁর সঙ্গী। ভাস্কোর তিলক ময়দান তো বটেই, ভারতীয় ফুটবল জুড়ে তখন ঢুকে পড়েছে ৫-০ হারের আতঙ্ক। একের পর এক ভুল করে যাচ্ছেন অরিন্দম। ফাস্ট পোস্টে দাঁড়িয়ে গোল খাচ্ছেন। জঘন্য আউটিংয়ে উপহার দিচ্ছেন গোল। এমন পরিস্থিতি যে কোনও কোচ যা করে থাকেন, দিয়াজ তা-ই করলেন। ৩৩ মিনিটে অরিন্দমকে তুলে নামালেন উত্তরপাড়ার শুভমকে। নেতাজি ব্রিগেডের কিপার প্রথমার্ধেই দুটো নিশ্চিত গোল সেভ করলেন। দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটা। না হলে এই আইএসএলের প্রথম ডার্বির ফল ৩-০-র বদলে ৫-০ কিংবা ৬-০ ও হতে পারত!

ভারতীয় ফুটবলে প্রায় এক দশক আগে পা দিয়েছিলেন আন্তনিও হাবাস। ধীরে ধীরে তাঁর ভারতীয়করণ হয়ে গিয়েছে। বলা ভালো, বাঙালি হয়ে গিয়েছেন। বড় ম্যাচের আবেগ, উন্মাদনা, সমীকরণ, আর্তি, দাবি— সব বোঝেন। আর তাই, যে কোনও ডার্বির আগে নিজের টিমকে চাপহীন রাখার চেষ্টা করেন। যাতে বড় ম্যাচের চাপ সবুজ-মেরুন ড্রেসিংরুমে না ঢুকে পড়ে। দিয়াজ দেশোয়ালি হলেও এত কিছু অল্প সময়ের মধ্যে বুঝবেন কী করে! কিন্তু ফুটবলের অঙ্কটা তো বোঝেন? স্ট্র্যাটেজি তো বানাতে পারেন? অভিজ্ঞতার ঝুলি যতই ভরপুর হোক, ডার্বি ম্যাচে একটাই ভুল করলেন দিয়াজ, ৩-৪-৩ ছকে টিম নামিয়ে। তাঁর হাতে ছয়ের দশকের অরুণ ঘোষ- জার্নেল সিং-টাইটারি আব্দুল রহমানের মতো ডিফেন্ডার নেই। একটা সুধীর কর্মকার কিংবা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য নেই। যাঁরা তিন ডিফেন্সেও বিপক্ষকে মাত করে দিতে পারবেন। রাজু-টমিসলাভ-পর্চেদের দিয়ে মোহনবাগানের মতো ভয়ঙ্কর টিমকে হারানো দূরের কথা, থামানোও যায় না। তার থেকেও বড় ভুল, আদিল খানকে শুরু থেকে না খেলানো। চোটই যদি থাকবে, তা হলে বদলি হিসেবে এলেন কেন? আর কোচ যদি নামাবেনই, তা হলে এত দেরি কেন?

বড় ম্যাচের অনেক অন্ধকার থাকে। বড় ম্যাচের অনেক আলোও থাকে। গত আইএসএলে দু’দফায় এটিকে-মোহনবাগান অপরাজিত। এই আইএসএলও জয় দিয়েই শুরু করল হাবাসের টিম। হাবাস ম্যাচের পালস বোঝেন। ছন্দ তুলতে পারেন। ছন্দ ঘোরাতেও পারেন। খুব ভলো করে জানতেন, হুগো বোমাসকে থামিয়ে সাপ্লাই লাইন কাটতে চাইবে লাল-হলুদ। তাই লিস্টন কোলাসোকে সামনে এগিয়ে দিয়ে বোমাসকে পিছন থেকে খেলালেন। তাতেই মাঝমাঠ অনেক ঝকঝকে। ৪-৩-৩ ছকে নামা মোহনবাগানের দুই স্টপার প্রীতম কোটাল ও শুভাশিস বসু চমৎকার খেললেন। দুটো প্রান্ত দারুণ ব্যবহার করল বাগান। আর তাতেই দিয়াজের টিমের রক্ষণ আলগা হয়ে গেল। সেই সুযোগটাই কাজে লাগালেন কৃষ্ণারা।

১২ মিনিটে গোলের দরজা খুলে ফেললেন কৃষ্ণা। চাপ সামলাতে না সামলাতে ২ মিনিটের মাথায় ২-০ মনবীরের। গত মরসুমেও চমৎকার খেলেছিলেন মনবীর। এই মরসুমেও ছন্দে রয়েছেন তিনি। দেশি-বিদেশি মিশ্রনটাই হাবাসের টিমের ইউএসপি। কৃষ্ণা, হুগোদের পাশে ভারতীয় ছেলেরাও নিজেদের মেলে ধরছেন। ৯ মিনিটে আবার ৩-০। এ বার লিস্টন কোলাসো। বোমাসের থ্রোটা খুব সহজেই তুলে নিতে পারতেন অরিন্দম। কিন্তু তিনি ঝাঁপাতেই হাত থেকে বল বেরিয়ে গেল। আর তা ধরে নিয়ে গোল দিয়ে গেলেন লিস্টন।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে আরও ২ গোল হতে পারত। হতে পারত বিরতির পরও। আদিল নামায় লাল-হলুদ রক্ষণ কিছুটা জমাট না হলে। কিন্তু এই মোহনবাগান তৃপ্তির ফুটবল খেলে গেল। উল্টো দিকে যেই থাকুক না কেন, সেরা দেওয়ার কথা হাবাস প্রায়ই শোনান। শুধু যে শোনান না, টিমকে সে ভাবে তৈরিও করেন, কৃষ্ণারা আরও একবার প্রমাণ করলেন।

নব্বই মিনিটের একটা ম্যাচ অনেক গল্প বলে। অরিন্দম, শুভমরা থাকেন সে সব কাহিনিতে। কিন্তু কিছু গল্পে হিরো হয়ে যান প্রত্যাশিত কিছু মুখ। রয় কৃষ্ণার মতো, মনবীর-লিস্টনদের মতো! ৩-০ কি শুধুই স্কোরলাইন? আইএসএলের তিন ডার্বি ম্যাচেও যে তিনবার জিতল মোহনবাগান!

ইস্টবেঙ্গল: অরিন্দম (শুভম ৩৩), রাজু (আদিল ৫৫), টমিসলাভ (ডের্ভিসেভিচ ৪৬), পর্চে, জয়নার, সিডওয়েল (চিমা ৫৯), লালরিনলিয়ানা (অমরজিৎ ৩৩), বিকাশ, রফিক, নাওরেম, পেরোসেভিচ।

মোহনবাগান: অমরিন্দর, প্রীতম, ম্যাকহিউ, দীপক (আশুতোষ ৮৭), শুভাশিস, মনবীর, লেনি, লিস্টন (প্রবীর ৭৬), হুগো (উইলিয়ামস ৬৭), কৃষ্ণা, কাউকো।