AFC CUP : পিছিয়ে পড়েও সেমিফাইনালে এটিকে মোহনবাগান

রয় কৃষ্ণা বল ধরলেই ত্রিভূজ তৈরি করছিলেন সুশান্ত ত্রিপুরা. বিশ্বনাথ ঘোষ, তপু বর্মনরা। যাতে কোনও ভাবেই বল নিয়ে না বেরোতে পারেন ফিজির স্ট্রাইকার।

AFC CUP : পিছিয়ে পড়েও সেমিফাইনালে এটিকে মোহনবাগান
গোলের পর সেলিব্রেশন উইলিয়ামস ও কৃষ্ণার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 24, 2021 | 8:57 PM

অভিষেক সেনগুপ্ত

বসুন্ধরা কিংস-১ : এটিকে মোহনবাগান-১ (জোনাথন ২৮, ) (উইলিয়ামস ৬২)

সবুজ-মেরুন ইতিহাসে এ বার এএফসি কাপও ঢুকে পড়ল। সাউথ জোন চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউট পর্যায়ে উঠে পড়ল আন্তনিও হাবাসের টিম। বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে ড্র করলেই হত। ০-১ ম্যাচ পিছিয়ে থেকে ম্যাচ শেষ ১-১। ৭ পয়েন্ট নিয়ে জোনাল সেমিফাইনালে রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসরা। ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে যদি জিততে পারেন, বেঙ্গালুরু এফসিকে ছুঁয়ে ফেলবে এটিকে মোহনবাগান। ভারতীয় টিম হিসেবে একমাত্র সুনীল ছেত্রীরাই এএফসি কাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল। মোহনবাগান কিন্তু স্বপ্ন দেখাতেই পারে।

প্রতিপক্ষ যদি চেনা হয়, চাপ বেশি হয়। তিনি যদি আবার কোচ হন, তা হলে তো কথাই নেই। অস্কার ব্রুজো যেমন। গোয়ার স্পোর্টিং ক্লুবে কোচিং করার সময় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে চাপে রাখতেন। শেষ বাঁশি পর্যন্ত টেনশনে থাকত দুই প্রধান। ভারতের সীমা পেরিয়ে স্প্যানিশ কোচ এখন বসুন্ধরার দায়িত্বে। কিন্তু তাঁর কোচিংয়ের পুরনো ঝাঁঝ কমেনি। দুই ব্রাজিলিয়ান ও আর্জেন্টেনিয়ান এবং একঝাঁক বাঙালিকে নিয়ে ম্যাচ প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন অস্কার। যদি তাঁর টিম অতিআক্রমণাত্মক না হত। যদি দ্বিতীয়ার্ধটা ১০ জনে খেলতে না হত। যদি আর একটু ট্যাকটিক্যাল হতেন অস্কার। সেখান থেকেই ম্যাচ ঘোরালেন হাবাস। স্রেফ মাথা ঠান্ডা রেখে।

প্রথমার্ধে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা বোধহয় বসুন্ধরাই ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। ২০১৩ সালে জন্ম বাংলাদেশের ক্লাবের। ২০১৭ সাল থেকে প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলছে টিম। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। পরের বছর কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন অস্কার ব্রুজো। হাবাসের টিমকে থামানোর জন্য তিনটে কাজ করলেন অস্কার। এক, রেহান কাজিকে দিয়ে মনবীর সিংয়ের ওঠা-নামা বন্ধ করে দিলেন। আগের দুটো ম্যাচে মনবীরের গতি, কাট করে চকিতে ঢুকে আসা চাপে রেখেছিল বিপক্ষকে। বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ সেটা করতে দিলেন না।

দুই, রয় কৃষ্ণা বল ধরলেই ত্রিভূজ তৈরি করছিলেন সুশান্ত ত্রিপুরা. বিশ্বনাথ ঘোষ, তপু বর্মনরা। যাতে কোনও ভাবেই বল নিয়ে না বেরোতে পারেন ফিজির স্ট্রাইকার।

তিন, দুরন্ত ছন্দে থাকা টিমকে থামাতে হলে শুরুতেই যদি কোনও বিপক্ষ টিম আগ্রাসী ফুটবল খেলে, চাপে রাখা যায়। পর পর কয়েকটা কড়া ট্যাকল, ফাউল করে সবুজ-মেরুনকে শুরুতেই মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলে দিয়েছিল বসুন্ধরা। প্রথমার্ধের খেলা ধরলে ৪টে হলুদ কার্ড দেখল অস্কারের টিম। কৃষ্ণাকে করা ফাউলটার জন্য কিন্তু বাংলাদেশের টিমের প্লেয়ারকে লাল কার্ডও দেখাতে পারতেন রেফারি। সেটাই এল প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে। শুভাশিসকে ফাউল করায় লাল কার্ড দেখলেন সুশান্ত। আগেই অবশ্য একটা হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তিনি। খেলাটা ওখানেই শেষ করে ফেলল বসুন্ধরা।

প্রথমার্ধ জুড়ে সবুজ-মেরুন খারাপ খেলেনি। বিপক্ষের বক্সের বারবার হানা দিয়েছে টিম। গোলমুখও খুলে ফেলেছে। কিন্তু গোলটাই যা আসেনি। বিপক্ষের আক্রমণাত্মক ফুটবলের পাশাপাশি লিস্টন কোলাসো সহজ দুটো সুযোগ নষ্ট করেন। লিস্টনের সমস্যা হল বড় বেশি বল হোল্ড করেন। অ্যাটাকিং থার্ডে বল পজেশন রাখতে পারেন না। অভিজ্ঞতা কম বলেই এমন হয়। সেই তিনিই বিরতির পর কিছুটা সামলে নিলেন নিজেকে। তবে, হুগো বোমাসের না থাকা গভীর ছাপ ফেলছিল বাগানে। কৃষ্ণা-ডেভিড-লিস্টনের পিছন থেকে বল বাড়ানোর কাজটা প্রথম ম্যাচ থেকে শুরু করেছেন তিনি। মাজিয়া ম্যাচে বিরতির পর নেমে দুটো গোল করিয়েছেন ফরাসি মিডফিল্ডার। বসুন্ধরা ম্যাচে এই কাজটাই কেউ করতে পারছিলেন না। লেনি এখনও নিজের ছন্দটা খুঁজে পাননি। বল না পেয়ে কৃষ্ণাকেই নামতে হল নীচে। খেলা তৈরির জন্য।

২৮ মিনিটে ১-০ করে ফেলে বসুন্ধরা। বক্সের মাথা থেকে ব্রাজিলিয়ান জোনাথন রিস ফের্নান্ডেজের জোরালো শট। কিছুটা নিজেদের দোষেই গোলটা খেয়েছিল বাগান। ডেভিড উইলিয়ামস, লেনি রড্রিগেজরা অমরিন্দরের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। আচমকা শট যে নেবেন জোনাথন, বোধহয় বুঝতে পারেননি। প্রথম পোস্টে দাঁড়িয়েই গোল খেয়ে যান অমরিন্দর। জোনাথনকে কেন শট নেওয়ার সময় দিল সবুজ মেরুন ডিফেন্স, সেটাই আশ্চর্যের।

বিরতির পর অন্য মোহনবাগান মাঠে নামল। কৃষ্ণা, উইলিয়ামস, ম্যাকহিউরা অভিজ্ঞতা দিয়ে উতড়ে দিলেন ম্যাচটা। ৬২ মিনিট ১-১ করে ফেলে হাবাসের টিম। ১০ জনে খেলা বসুন্ধরা গোলমুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করলেও তা কাজে লাগেনি। বাঁ দিক থেকে লিস্টনের মাইনাস পেয়ে যান উইলিয়ামস। অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড কোনও ভুল করেননি। তার কিছু পরে ২-১ করতে পারত মোহনবাগান। উইলিয়ামসের দূরপাল্লার শটটা থেকে।

মিস, কার্ড, গোল এ সব কেউ মনে রাখে না। শুধু মনে থেকে যায় টিমের সাফল্য। সবুজ মেরুনের জোনাল সেমিফাইনালে ওঠাটা হাবাসকে তৃপ্তি দিল, সন্দেহ নেই। ট্রফির গন্ধ পেয়ে গিয়েছে মোহনবাগান!

এটিকে মোহনবাগান: অমরিন্দর, আশুতোষ, প্রীতম, ম্যাকহিউ, শুভাশিস, মনবীর, দীপক (সাহিল ৯৪), লেনি, লিস্টন, কৃষ্ণা, উইলিয়ামস (বিদ্যানন্দ ৯১)।