FIFA World Cup: পায়ে পায়ে বলের বদল, সাদা-কালো টেলস্টার থেকে বিতর্কে মোড়া ফুটবল
প্রথমবার কোন বল দিয়ে বিশ্বকাপ খেতাব জেতে দিয়োগো মারাদোনার দেশ?
প্রতি চারবছর অন্তর শুরু হয় ফুটবল (Football World Cup) নামক খেলাটির সেরা দেশের খোঁজ। চার বছর সময়টা নেহাত কম নয়। ফুটবলের মহাযজ্ঞের প্রতিটি সংস্করণের আগে পরিবর্তন আনা হয় ফুটবলে। আকৃতি, ওজন এক থাকলেও বদল আসে ডিজাইনে, গঠন এবং রংয়ের ছোঁয়ায় আসে পরিবর্তন। ১৯৭০ সালের আগে পর্যন্ত কোনও অফিশিয়াল বল দিয়ে খেলা হত না বিশ্বকাপ। মেক্সিকো বিশ্বকাপে সেবার খেলা হয় টেলস্টার বল (Adidas Telstar Ball) দিয়ে। কালের বিবর্তনে ফুটবল বিশ্বকাপের বলের বিবর্তনের গল্পটাও বেশ টানটান।
অ্যাডিডাস টেলস্টার (১৯৭০)
২০টি সাদা হেক্সাগন এবং ১২টি কালো রঙা পেন্টগনের সমারোহে মেক্সিকো বিশ্বকাপের টেলস্টার ফুটবলটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সাদা-কালো টেলিভিশনের সেটে বলটি যাতে আরও উজ্জ্বল দেখায় তাই এমন ডিজাইন। ফুটবলারদের বলের গতি বুঝতে সুবিধা হত। ফুটবলের এই ডিজাইনের সঙ্গে ফুটবলপ্রেমীরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ১৯৭৪ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে টেলস্টার ডুরলাস্ট বল দিয়ে খেলা হয় ফাইনাল ম্যাচ। ডিজাইনে কোনও পরিবর্তন ছিল না।
অ্যাডিডাস ট্যাঙ্গো (১৯৭৮)
টেলস্টার থেকে ট্যাঙ্গো। বিশ্বকাপ ফুটবলে অ্যাডিডাস ট্যাঙ্গোর আবির্ভাব ১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে। রঙের পরিবর্তন না হলেও ডিজাইনে টেলস্টার ও ট্যাঙ্গোর মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেকটাই। দাম তখন £50। ট্য়াঙ্গোর ডিজাইন চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিত। খালি চোখে দেখলে মনে হত একইরকম দেখতে ১২টি প্যানেল রয়েছে। যদিও প্যানেল ছিল ২০টি। পরবর্তী দুই দশক ধরে অ্যাডিডাস ট্যাঙ্গো বল দিয়ে খেলা হয়েছে ফুটবল। এই বল দিয়েই প্রথমবার বিশ্বকাপ খেতাব জেতে দিয়োগো মারাদোনার দেশ।
অ্যাডিডাস ট্যাঙ্গো এসপানা (১৯৮২)
১৯৮০ সাল থেকে আসল চামড়ার বলের চেয়ে সিন্থেটিক লেদারের বল বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফুটবল বিশ্বকাপও স্রোতে গা না ভাসিয়ে থাকতে পারেনি। স্পেন বিশ্বকাপের বলের উপরে রবারের একটি পাতলা আস্তরণ দেওয়া হয়। রং বা ডিজাইনে পরিবর্তন না থাকলেও শুধু একটি ফিচারের জন্য এই বলটির অন্যান্য বিশ্বকাপের থেকে ছিল একেবারে আলাদা। ভেজা মাঠে বলের ওজন বেড়ে যাওয়া ছিল বড় সমস্যা। ট্যাঙ্গো এসপানার পলিইউরেথন ফোম বলে জল ঢোকা আটকাতে ছিল সক্ষম। পরের বিশ্বকাপে অ্যাডিডাস অ্যাজটেকা নামক বলটি ছিল পুরোপুরি সিন্থেটিক। মেক্সিকোর অ্যাজটেকা স্থাপত্যকে সম্মান জানিয়ে ফুটবলটির ডিজাইন তৈরি।
অ্যাডিডাস ট্রাইকালার (১৯৯৮)
সাদা-কালোর জমানা শেষ। ফুটবলারদের পায়ে পায়ে রঙ বেরঙা বলের আনাগোনা। লাল, নীল, সাদা রঙের সমাহার। ফ্রান্সের পতাকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৯৮ সালের সিন্থেটিক ফোমে মোড়া ফুটবলটি তৈরি করা হয়।
বিতর্কিত বিশ্বকাপ বল
৯৪ সালের আমেরিকা বিশ্বকাপে খেলা বলটির নাম অ্যাডিডাস কোয়েস্ট্রা। মহাজাগতিক নিয়ে আমেরিকানদের ভালোবাসাকে মাথায় রেখে ডিজাইনে ব্যবহার করা হয় স্পেস টেকনোলজি। পলিস্টাইরিন ফোমে মোড়া থাকার দরুণ বলটির গতিও বেড়ে গিয়েছিল। স্ট্রাইকারদের পোয়াবারো। গতিময় বলের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ উপভোগ করছিলেন। ঠিক বিপরীত অবস্থা গোলকিপারদের। তাদের অভিযোগ, বাতাসে অনিয়মিত এই বল।
বল নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপে। রামধনুর দেশের ফুটবল বিশ্বকাপের বলটির নাম দেওয়া হয় অ্যাডিডাস জাবুলানি। যার অর্থ, উদযাপন করা। বলটি প্রকাশ্যে আসা পর দেখা গেল, উদযাপন করার মতো কিছুই নেই। উল্টে ভুরি ভুরি অভিযোগ। আসলে বলটি ছিল ভীষণ পলকা। ফুটবলারদের এত হালকা বল মোটেও পছন্দ ছিল না। বল নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এছাড়া বলটির আচরণে ছিল অনিশ্চয়তা।