Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Brazil Football: পেলে-নেইমারের ব্রাজিলেও মেয়েদের ফুটবল খেলা ছিল নিষিদ্ধ!

যে সময় ব্রাজিলে ফুটবল বিপ্লব শুরু হয়, যে সময় পেলে নামের এক আশ্চর্য নায়কের উত্থান, যে সময় লাতিন আমেরিকান ফুটবলকে প্রাণ দিয়েছিল ব্রাজিল, সেই সময় ব্রাজিলে ফুটবল ছিল শুধু 'ছেলেদের খেলা'।

Brazil Football: পেলে-নেইমারের ব্রাজিলেও মেয়েদের ফুটবল খেলা ছিল নিষিদ্ধ!
পেলে-নেইমারের ব্রাজিলেও মেয়েদের ফুটবল খেলা ছিল নিষিদ্ধ!Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 15, 2023 | 8:00 AM

সাও পাওলো: বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলিয়ে দেশের নাম কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে ব্রাজিলই (Brazil)। পেলের দেশ, কাফু, রোনাল্ডোর দেশ, নেইমারের দেশ। যে দেশের রক্তে বইছে ফুটবল, সংস্কৃতির ধারা, উৎসবের রন্ধ্রে, বেঁচে থাকার গল্পে রয়েছে ফুটবল। সেই দেশেই কিনা ফুটবল (Football) খেলা একসময় ছিল নিষিদ্ধ। না, ছেলেদের জন্য নয়। নিষিদ্ধ ছিল মেয়েদের জন্য! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। আর ক’দিন পরেই শুরু হবে মেয়েদের বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যৌথ আয়োজক। মেয়েদের বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ কম নেই। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগে এক আশ্চর্য গল্প শোনালেন দিলমা মেন্ডেস (Dilma Mendes)। ফুটবলের বিরাট তারকা ছিলেন দিলমা। এখন কোচ হিসেবেও বেশ পরিচিত। যে ফুটবল তাঁকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে, তারকা করেছে, সেই তাঁরই ছেলেবেলা কেমন ছিল? সদ্য দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন দিলমা, তুলে ধরল TV9Bangla Sports

যে সময় ব্রাজিলে ফুটবল বিপ্লব শুরু হয়, যে সময় পেলে নামের এক আশ্চর্য নায়কের উত্থান, যে সময় লাতিন আমেরিকান ফুটবলকে প্রাণ দিয়েছিল ব্রাজিল, সেই সময় ব্রাজিলে ফুটবল ছিল শুধু ‘ছেলেদের খেলা’। মেয়েরা চাইলেও খেলার অনুমতি পেতেন না। সামাজিক বৈরিতা কেন ছিল? কেন মেয়েদের রাখা হয়েছিল ব্রাত্য? প্রায় চার দশক ধরে মেয়েদের ফুটবল খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। ১৯৭৯ সাল নাগাদ যা ওঠে। দিলমার জন্ম গত শতাব্দীর সাতের দশকে। ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি অনুরক্ত, খেলার ভক্ত, খেলার জন্য় পাগল। সেই তাঁর ফুটবলার হওয়ার কাহিনি যে কোনও সিনেমাকে হার মানাবে। ফুটবলের জন্য পাগল দিলমা মাঠে ছেলেদের সঙ্গে খেলার জন্য আইসক্রিম খাওয়াতেন নিয়মিত। কিন্তু তাতেও যে ফুটবল-স্বাদ পূরণ হত, তা নয়। মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেখলে পুলিশ হাজির হত মাঠে। দিলমাকেও এমন পরিস্থিতির মুখে বেশ কয়েকবার পড়তে হয়েছে। মাঠের ধারে যে কারণে গর্ত খুঁড়ে রেখেছিলেন দিলমা। পুলিশের গাড়ি দেখলেই সেই গর্তে লুকিয়ে পড়তেন। তাতেও যে নিষ্কৃতি মিলত, তা নয়। অনেক সময় ফুটবল খেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরাও পড়ে যেতেন। পুলিশ থানায় নিয়ে যেত তাঁকে। এতবার থানায় যেতে হয়েছিল, সংখ্যাটা ভুলে গিয়েছেন দিলমা।

ব্রাজিলের তারকা বলছেন, ‘ছেলেবেলায় জানতাম, পুলিশ তাদেরই ধরে, যারা খারাপ কাজ করে। কিন্তু ফুটবল খেলা তো খারাপ কিছু নয়। তা হলে আমাকে ধরা হত কেন, বুঝতে পারতাম না। তবে পুলিশ আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত না। তবে পুলিশ পরিষ্কার বলে দিত, ফুটবল খেলাটা আমার জন্য নয়। ওটা ছেলেদের খেলা।’

১৯৪১ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট গেতুলিও ভার্গাস আইন করে মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্র্যাক্টিস করার ক্ষেত্রেও ছিল নিষেধাজ্ঞা। ব্রাজিলের মতো ফুটবল খেলিয়ে দেশে এমনটা যে হতে পারে, এই প্রজন্মের কেউ হয়তো ভাবতেই পারবেন না। ফুটবল খেললে কী শাস্তি মিলতে পারে, তার অবশ্য কোনও রূপরেখা ছিল না। পুলিশ নিজের মতো করে ঠিক করত শাস্তির মাপকাঠি। অবশ্য ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো ইউরোপের অনেক জায়গায় মেয়েদের ফুটবল খেলার ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু ব্রাজিলের মতো আইন পাস করা হয়নি।

যতই আইন হোক, মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ করা যায়নি ব্রাজিলে। কেউ ছেলেদের মতো পোশাক পরে খেলতেন, কেউ আবার রাতে খেলতেন। মেয়েদের ফুটবল নিয়ে গবেষণা করা সিলভানা গোয়েলনার তাঁর বইয়ে, ‘নেভার স্টপড প্লেয়িং’এ এমন গল্পই তুলে ধরেছেন।

মেয়েদের ফুটবল বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুটবলার দিলমা বলছেন, ‘থানা থেকে ফিরে আসার পরের ব্যাপারটা ছিল আরও কঠিন। আমার বাবা চাইতেন আমি ফুটবলটা খেলি। অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ছিল আরও কঠিন। থানা থেকে বাড়ি ফিরলেই মা-ভাইদের মার খেতে হত। আমার অনেক বন্ধু যে কারণে ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়েছিল।’

ফুটবল সাম্য একসময় ফিরেছিল ব্রাজিলে। মেয়েরা নির্ভয়ে আবার ফিরেছিলেন মাঠে। দিলমা দীর্ঘদিন খেলেছেন ব্রাজিলের হয়ে। ১৯৯৫ সালে অবসর নেন। মেয়েদের জাতীয় টিমেরও কোচ হয়েছেন। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার পর্ব হয়তো ভুলে গিয়েছেন অনেকে। কিন্তু দিলমারা আজও মনে রেখে দিয়েছেন।