AFC Cup, ATK Mohun Bagan vs Bengaluru FC: কৃষ্ণা-ম্যাজিকে মলদ্বীপে জন্মদিন সেলিব্রেশন শুভাশিসের
মাঠ কি শুধুই খেলার? বার্থডে সেলিব্রেশনের নয়? শুভাশিস বসু যা করলেন মালদ্বীপের জাতীয় স্টেডিয়ামে, তাতে বুধবার বিকেলে মালেতেই খেলতে খেলতে কেক কাটলেন বলা যেতে পারে! প্রথম গোলটা করিয়েছিলেন। আর দ্বিতীয়টা করলেন।
অভিষেক সেনগুপ্ত
এটিকে-মোহনবাগান-২ : বেঙ্গালুরু এফসি-০ (কৃষ্ণা ৩৯, শুভাশিস বসু ৬৭)
এক, রয় কৃষ্ণা ম্যাজিক কি এ বারও দেখা যাবে? দুই, গত আইএসএলের সেরা তারকা হুগো বোমাস কি প্রথম ম্যাচ থেকেই মেলে ধরবেন নিজেকে?
এই দুটো প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই বুধবার মলদ্বীপের দিকে চোখ রেখেছিলেন সবুজ-মেরুন জনতা। গোল দিয়ে মরসুম শুরু করে দিলেন ফিজির স্ট্রাইকার। আর ফরাসি মিডফিল্ডার? এটুকু বলে দেওয়া যায়, কৃষ্ণার সঙ্গে তাঁর দুরন্ত তালমেল দেখার অপেক্ষা শুরু হয়ে গেল। ৭১ মিনিটে মাঠ ছাড়ার আগে যে ছাপ প্রথম ম্যাচেই রেখে গেলেন বোমাস।
শুধু কি তাই, এএফসি কাপের প্রথম ম্যাচেই বাগান-উত্সব শুরু হয়ে গেল। মলদ্বীপের জাতীয় স্টেডিয়ামে বেঙ্গালুরু এফসিকে ২-০ উড়িয়ে দিল আন্তনিও হাবাসের টিম। প্রথম ম্যাচে জয় আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়াল টিমের, তেমনই মরসুমের শুরু থেকেই প্রত্যাশা বেড়ে গেল সমর্থকদের। নব্বই মিনিটে যা পারফর্ম করলেন অমরিন্দর সিং, প্রীতম কোটালরা, তাতে পরের পর্বে যাওয়ার রাস্তা অনেকটাই মসৃণ হয়ে গেল।
FT | ?? @atkmohunbaganfc 2-0 @bengalurufc ??
? Goals from @RoyKrishna21 and birthday boy @subhasis_bose15 get the Mariners off to a winning start in Group D!#AFCCup2021 | #AMBvBFC pic.twitter.com/t00p4IHWQF
— #AFCCup2021 (@AFCCup) August 18, 2021
কঠিন ম্যাচ খুব সহজে জেতাটাই যে কোনও কোচের ক্যারিশমা। তিনি বিপক্ষকে কাটাছেঁড়া করবেন। ফাঁকফোকরগুলো খুঁজে রাখবেন। যখন প্রয়োজন হবে, সেগুলো কাজে লাগিয়ে তিনটে পয়েন্ট তুলে আনবেন। হাবাসের কোচিং তত্ত্ব যে এমনই, ভারতে কোচিং করানোর সময় গত কয়েক বছর ধরে এটা বারবার বুঝিয়েছেন। পাশাপাশি, গোল হোক আর নাই হোক, তাঁর টিম গোল হজম করে না। বেঙ্গালুরু ম্যাচে যেন হাবাস আরও একবার হাজির হলেন নিজের কোচিং ঘরানা নিয়ে। শুরুটা করলেন ধীরে। বল দখলের চেষ্টা করলেন প্রথমার্ধে। বলের খোঁজে গিয়ে অকারণে ডিফেন্স ঘাঁটলেন না। বরং তিরিশ মিনিট পর খেলায় ফেরার বার্তাটা দিলেন গোল করে। যে কোনও প্রতিপক্ষকে পাল্টা চাপে ফেলে দেওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। ০-১ পিছিয়ে থাকলে যে কোনও টিমই বিরতির পর বাড়তি তাগিদ নিয়ে মাঠে নামে। আর তখনই করে বসে ভুলটা। যেখান থেকে গোলও খেয়ে যায়। বেঙ্গালুরু ম্যাচে ফেরার আগেই ২-০ করে ফেলল মোহনবাগান। খেলাটা ওখানেই শেষ।
মাঠ কি শুধুই খেলার? বার্থডে সেলিব্রেশনের নয়? শুভাশিস বসু যা করলেন মলদ্বীপের জাতীয় স্টেডিয়ামে, তাতে বুধবার বিকেলে মালেতেই খেলতে খেলতে কেক কাটলেন বলা যেতে পারে! প্রথম গোলটা করিয়েছিলেন। আর দ্বিতীয়টা করলেন। ম্যাচের সেরা যে তিনি, কোনও সন্দেহ নেই। ৩৯ মিনিটে কর্নার থেকে হুগোর ক্রসটা প্রথম হেডে এগিয়ে দিয়েছিলেন শুভাশিসই। সেখান থেকে ফ্লিক হেডে প্রথম গোল রয় কৃষ্ণার। আর দ্বিতীয়টা, বাঁদিক থেকে ডেভিড উইলিয়ামসের বাড়ানো বল বক্সের মধ্যে পেয়ে যান বাঙালি সাইডব্যাক। বল ধরে চকিত টার্ন নিয়েই শট নেন গোলে। বেঙ্গালুরুর কিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু বুঝতেই পারেননি। ৪৬ মিনিটের গোলটার পর মোহনবাগানের আর ভাবার দরকার ছিল না। ভাবতেও হয়নি।
যে কোনও কোচই মরসুমটা শুরু করেন প্র্যাক্টিস ম্যাচ দিয়ে। পর পর কয়েকটা প্রস্তুতি ম্যাচ টিমের জড়তা কাটিয়ে দেয়। বোঝাপড়া তৈরি হয়। নিজেদের চিনে নিতে সুবিধা হয়। এই এটিকে-মোহনবাগানের গত বার যা খুব বেশি দরকার ছিল না। দেশি-বিদেশি অধিকাংশ ফুটবলার গতবারের টিমে থাকায়। এ বার টিম নতুন মুখ বেশ কিছু। কিন্তু করোনার কারণে সেই অর্থে প্র্যাক্টিসের সুযোগ পাননি হাবাস। প্র্যাক্টিস ম্যাচ তো অনেক দূরের ব্যাপার। এএফসি কাপের প্রথম ম্যাচ বাগান জিতলেও কিন্তু ফিটনেস নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যাবে। ৭১ মিনিটে তুলে নিতে হল হুগোকে। প্রথমার্ধেই হ্যামস্ট্রিংয়ে সামান্য টান অনুভব করছিলেন। ডেভিড উইলিয়ামসও খুব একটা ফিট কিনা, প্রশ্ন থাকবে।
শুধু একটা বিষয় ঘুরেফিরে আসছে। সুনীল ছেত্রী কি ফর্মে নেই? গত আইএসএলে সে ভাবে খেলতে পারেননি। ভারতীয় টিমের ক্যাপ্টেনকে নিয়ে কথাও উঠেছিল। কিন্তু জাতীয় টিমের হয়ে আবার গোল করেছিলেন। সেই সুনীলই মোহনবাগান ম্যাচে সে ভাবে ছাপই রাখতে পারলেন না। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে তুলেও নেন জার্মান কোচ মার্কো পাজেইওলি।
সুনীল বা তাঁর টিম বেঙ্গালুরু নয়, এই ম্যাচ মোহনবাগানের। বেঙ্গালুরু যতই ছন্দে না থাকুক, যতই টিমের নড়বড়ে ব্যাপারটা ধরা পড়ুক, মরসুমের এই প্রথম ম্যাচ তৃপ্তিই দিল সবুজ-মেরুনকে। টিমকে ছন্দের শিখরে নিয়ে যেতে হলে জয় আর গোল দুটোই দরকার। হাবাসের থেকে ভালো আর কে জানেন!
এটিকে মোহনবাগান: অমরিন্দর, প্রীতম, সুমিত, শুভাশিস, দীপক, লেনি, ম্যাকহিউ, মনবীর, হুগো (বিদ্যানন্দ ৭১), রয় (সাহিল ৮৯), ডেভিড (লিস্টন ৭৯)।