Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

সময় মুঠোয় নেই, তবু টোকিওর স্বপ্নপূরণে অবিচল দ্যুতি

বর্তমানে পাতিয়ালার জাতীয় শিবিরে অনুশীলন করছেন দ্যুতি। টোকিও অলিম্পিকের (Tokyo Olympics) ছাড়পত্র হাসিল করাই এখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।

সময় মুঠোয় নেই, তবু টোকিওর স্বপ্নপূরণে অবিচল দ্যুতি
টোকিও গেমসের স্বপ্নে বুঁদ ভারতের স্পিডস্টার!
Follow Us:
| Updated on: Jun 16, 2021 | 6:21 PM

সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

টোকিও অলিম্পিকের (Tokyo Olympics) ছাড়পত্র হাসিল করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য ভারতের দ্রুততম মেয়ে দ্যুতি চাঁদের (Dutee Chand)। দ্যুতির কেরিয়ার ততটা মসৃণ কোনও দিনই ছিল না। একসময় ছিল না দৌড়নোর জন্য ভালো জুতো। মিলত না পেট ভরা খাবার। অভাব অনটন ছিল বরাবরের সঙ্গী। কেরিয়ারের শুরুর দিকে, একসময় নদীর ধারে দৌড়তেন দ্যুতি। যাতে পায়ে পাথর না ঢুকে যায়। সেই দ্যুতি এখন ভারতের হয়ে বিভিন্ন ইভেন্টে পদক জিতছেন। পাশপাশি ভারতকে আশা দেখাচ্ছে টোকিওতেও পদকের। ওড়িশার মেয়ে দ্যুতির অদম্য জেদই তাঁকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে এসেছে। মহামারির কারণে বিভিন্ন ইভেন্ট বাতিল হলেও টোকিওর ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ রয়েছে দ্যুতির কাছে।

বর্তমানে পাতিয়ালায় অনুশীলন করছেন দ্যুতি। ১০০ মিটারের অলিম্পিক মার্ক ১১.১৫ সেকেন্ড সময়ে দৌড় শেষ করতে পারেননি। তবে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে তিনি টোকিও গেমসে জায়গা করে নেবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্যুতি রয়েছেন ৪২ নম্বরে। অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জনের শেষ সময়সীমা ২৯ জুন। তালিকা প্রকাশিত হবে ১ জুলাই।

সেনকো গোল্ডের আয়োজিত ভার্চুয়াল প্রেস মিটে দ্যুতি বলেন, “করোনার জন্য অনেক ইভেন্ট বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু সে সব ভেবে এখন আর লাভ নেই। সামনেই টোকিও অলিম্পিক। সেখানে ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য সামনের ইভেন্টে নিজের সেরাটা দেব। ২১ জুন থেকে ভারতীয় গ্র্যান্ড প্রিক্স শুরু হবে এবং জাতীয় আন্তঃরাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হবে ২৫ জুন। আমি সেখানে ১১.১৫ সেকেন্ডে শেষ করার জন্য চেষ্টা করব। এটা করতে পারলে সরাসরি আমি টোকিওর ছাড়পত্র পাব। আর না হলে আমি র‌্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাব।”

তিনি আরও বলেন, “টোকিওতে ১১.১০ সেকেন্ডের কম সময় নিয়ে ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছনোর চেষ্টা করব। অলিম্পিক বিশাল বড় ইভেন্ট। সেখানে অনেক প্রতিযোগী ১১ সেকেন্ডের কম সময়ে দৌড় শেষ করেন। আমাকেও সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোতে হবে।”

করোনার কারণে অনুশীলনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, এমনটাই বলছেন অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত দ্যুতি। দৈনিক ৬ ঘণ্টা করে অনুশীলনে সময় ব্যয় করেন তিনি। কোচের কথা মত থাকে বিভিন্ন এক্সারসাইজ। জিমে ওয়েট ট্রেনিং থেকে সুইমিং, কোনও কিছুই বাদ নেই দ্যুতির দৈনন্দিন রুটিনে। বর্তমানে পাতিয়ালার জাতীয় শিবিরে অনুশীলন করছেন দ্যুতি। টিভি নাইন বাংলার প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “অনুশীলনের পাশাপাশি এখানে সব অ্যাথলিটদের ডায়েটের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আমি এখানে দৈনিক কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা অনুশীলন করি। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ট্রেনিং করি। তার পর বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আবার অনুশীলন করি। জিমে ঘাম ঝরানোর পাশাপাশি রয়েছে সাঁতার কাটা, ওজন তোলাও।”

অলিম্পিকে সাফল্য পেতে হলে ১১ সেকেন্ডের নীচে নামাতে হবে সময়। যা মাথায় রেখে ট্রেনিং চলছে তাঁর। দ্যুতি বলেন, “ফেব্রুয়ারি থেকে আমি স্পিড প্র্যাক্টিসে মনোযোগ দিয়েছি। ৬০ মিটার, ৮০ মিটার ও ১০০ মিটার দৌড়ে অনুশীলন করি। ট্রেনিংয়ের সময় ১০০ মিটার দৌড় আমি ছ’বার করে করি। আমার কোচ আমাকে বলেছে, আমার শক্তি বেড়েছে। তাই আমি অনুশীলনে আরও বেশি পরিশ্রম করছি।”

অনেক ইয়ুথ তাঁকে আইকন মানেন। এ ব্যাপারে দ্যুতি বলেন, “আমার জীবনে প্রচুর চড়াই উতরাই এসেছে। আমি আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, তা আমার পরিশ্রমের ফল। তাই কেউ আমাকে অনুপ্রেরণা মানলে সেটা আমার সাফল্যের জন্যই।”

অলিম্পিকে মেয়েদের ৪x১০০মিটার রিলেতে ১৬ টি দল অংশ নেবে। টোকিওর সময়সীমা ৪৩.০৫। ২০১৯ সালের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পর ভারত বর্তমানে ৪৩.৮১ পয়েন্ট নিয়ে ২২ নম্বরে রয়েছে। দ্যুতির কথায়, “৬ বছর ধরে রিলে টিমের সঙ্গে যুক্ত আছি। আমি, হিমা, ধনলক্ষী ও অর্চনা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা চারজনই ১১.৬০ সেকেন্ডের কমে দৌড়তে পারি। আমরা ৪৩.০৫ এর মধ্যে শেষ করার ক্ষমতাও রাখি। আমরা পোল্যান্ডো বিশ্ব রিলেতে অংশগ্রহণ করতে পারলে আমাদের রিলে টিম অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করতে পারত।”

দ্যুতির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা হয়েছে। সেই সব তোয়াক্কা না করে এগিয়ে গেছেন তিনি। তাঁর পার্টনারের ব্যাপারেও বহুবার উঠেছে নানা কথা। তবে, দ্যুতি কিন্তু নিজের সঙ্গীর সঙ্গে খুশিতেই আছেন। সমালোচনা তো চলতেই থাকবে। তাতে আটকে থাকার কোনও মানে হয় না। এমনটাই মনে করেন দ্যুতি। তাঁর কথায়, “ভালোবাসা কোনও অপরাধ নয়। সকলেই ভালোবাসতে পারে। তবে হ্যাঁ, কেউ একই লিঙ্গের কাউকে ভালোবাসে কেউ বা অন্য লিঙ্গের কাউকে। এখানে সমস্যটা কোথায়? আমার পার্টনার একজন মহিলা। আমি আমার পার্টনারের সঙ্গে বেশ খুশিতেই আছি। ও আমাকে খুব পছন্দ করে। আমরা একে অপরকে সবসময় খুশি দেখতে চাই। নিজেদের সুখী রাখতে চাই। জীবনে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই।”

সব সরিয়ে রেখে আপাতত টোকিও গেমসের স্বপ্নে বুঁদ ভারতের স্পিডস্টার!

আরও পড়ুন: WTC Final: যে ভাবে WTC ফাইনালে বিরাট-পন্থরা