প্রয়াত অলিম্পিয়ান নিখিল নন্দী
নিখিল নন্দীর পরিবারকে বলা হত ফুটবলের পরিবার। একা নিখিল নন, তাঁর আর দুই দাদা ও এক ভাই ফুটবলার ছিলেন। অনিল, অজিত ও সুনীল নন্দীরাও ময়দানে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছেন।
TV9 বাংলা ডিজিটাল: এই ডিসেম্বরেই ছিল যুগোস্লাভের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটা। ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকের সেমিফাইনালে ভারতীয় টিমের কোচ রহিমসাহেব প্রথম একাদশে একটাই পরিবর্তন এনেছিলেন। মাঝমাঠে খেলিয়েছিলেন নিখিল নন্দী নামের এক তরুণকে। অবিশ্বাস্য দমের জন্য ময়দান যাঁকে ডাকত ‘হিউম্যান লোকোমোটিভ’ নামে। ওই ম্যাচে নিখিলের অফুরান দৌড় বারবার সমস্যায় ফেলেছিল বিপক্ষকে। মারিয়াপ্পা কেম্পিয়া, নূর মহম্মদের সঙ্গে জুটি বেঁধে নিখিলদের মাঝমাঠে লড়াইয়ের গল্প এখনও শোনান প্রবীণরা। রহিমসাহেবের টিম ম্যাচটা জেতেনি। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে চিরকালীন ছাপ রেখেছে ওই অলিম্পিক। মেলবোর্ন অলিম্পিকে চতুর্থ হয়েছিল ভারত।
৬৪ বছর পর আর এক ডিসেম্বরে চলে গেলেন সেই ম্যাচের অন্যতম নায়ক নিখিল নন্দী। ৮৮ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থই ছিলেন কিছুদিন। সেপ্টেম্বরে করোনাও হয়েছিল। তবে, সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছিলেন। কিন্তু এ বার আর লড়াই করতে পারলেন না। মঙ্গলবার দুপুরে নাগেরবাজারে নিজের বাড়িতে প্রয়াত হলেন নিখিল।কেমন প্লেয়ার ছিলেন নিখিল নন্দী? ১৯৫৬ সালের অলিম্পিকে খেলা বদ্রু ব্যানার্জি ফোনে বললেন, ‘টাফ ট্যাকল করত। ওকে পেরিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। তার থেকেও বড় কথা, অলরাউন্ড এবিলিটি ছিল ওর। যে কোনও পজিশনেই খেলতে পারত। রেলের হয়ে ওর বিরুদ্ধে যখনই খেলতাম, খুব সমস্যায় পড়তে হত। অফুরন্ত দম ছিল নিখিলের। পর পর দুটো ম্যাচ খেলে দিতে পারত।’
প্রবাদপ্রতীম কোচ বাঘা সোমের হাত ধরে উত্থান নিখিলের। রেলের হয়েই যে কারণে খেলেছেন সারা কেরিয়ার। ১৯৫৮ সালে পিকে ব্যানার্জি, নিখিল নন্দীর রেল কলকাতা লিগে প্রথম ও শেষবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পিকে যেমন ১২ গোল করেছিলেন, নিখিল তেমনই ডিফেন্সিভ মিডিও হিসেবে বারবার আটকে দিয়েছিলেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহামেডানের মতো বড় টিমগুলোকে।
আরও পড়ুন:জল্পনার অবসান, সিডনিতেই হবে তৃতীয় টেস্ট
নিখিল নন্দীর পরিবারকে বলা হত ফুটবলের পরিবার। একা নিখিল নন, তাঁর আর দুই দাদা ও এক ভাই ফুটবলার ছিলেন। অনিল, অজিত ও সুনীল নন্দীরাও ময়দানে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছেন। অজিত দেশের হয়েও খেলেছিলেন। তবে নিখিল বরাবরই ছিলেন ভাইদের থেকে অনেক এগিয়ে। ১৯৫৬ সালে ভেটারেন্স ক্লাব বিচারে প্রথম বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন নিখিলই। খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে চলে আসেন তিনি। মূলত ছোটদের কোচিংয়েই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। কিংসটন এডুকেশনাল ইন্সটিটিউটের সেন্ট্রাল জেলের মাঠে কিছু দিন আগেও কোচিং করাতে দেখা যেত তাঁকে। নিখিল বিশ্বাস করতেন, তরুণ প্রজন্ম থেকেই নতুন তারকা তুলে আনা সম্ভব।
বদ্রু বলছিলেন, ‘আমার সঙ্গে আত্মীক যোগ ছিল। কিছু বছর আগে যখন মারাদোনা এল, ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল, কী পরব বদ্রুদা? ও যে নেই, মেনে নিতে পারছি না।’ পিকের সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক ছিল নিখিলের। এক সঙ্গে চুটিয়ে রেলের হয়ে খেলেছেন দু’জন। পিকেকে নিজের বাড়িতেও এনে রেখেছিলেন নিখিল। সেই বন্ধু পিকে ক’দিন আগে চলে গিয়েছেন। মারা গিয়েছেন চুনীও। নিখিলও চলে গেলেন অজানা ফুটবল মাঠের দিকে।