অঙ্কন শিল্পে পারদর্শী রোবট সোফিয়া, এবার মানুষের থেকে গান শিখবে সে
হ্যানসন রোবোটিকসের অন্যতম বিখ্যাত এবং স্পেশ্যাল রোবট সোফিয়া। প্রভূত যত্ন নিয়ে সোফিয়াকে তৈরি করেছিলেন ডেভিড। মুখের অঙ্গভঙ্গি অবিকল নকল করে দেখানো, কারও সঙ্গে আলাপচারিতা এবং কথাবার্তা চালানো, যে কাউকে চিনে নেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে সোফিয়ার মধ্যে।
সম্প্রতি একটি ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ৬৮৮,৮৮৮ ডলারে বিক্রি হয়েছিল ওই ছবি। নিলামে এই ছবির যে দাম উঠেছিল ভারতীয় মুদ্রায় তার মূল্য ৫,০৫,৪৯,২৫৮ টাকা (আনুমানিক)। বহুমূল্যের এই ছবি কে এঁকেছেন সেই ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু হয়েছিল অনেকদিন আগেই। অবশেষে জানা গিয়েছে, এই ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক সোফিয়ার সৃষ্টি। মানুষের অনেক গুণ সোফিয়ার মধ্যে থাকলেও, আদতে সে রক্ত-মাংসের মানুষ নয়। বাস্তবে সোফিয়া আসলে একটি রোবট। অনেক গুণ রয়েছে তার। কথা বলতে পারে সোফিয়া, জোকস বলে লোকজনকে হাসাতে পারে। এখানেই শেষ নয়। গানও গাইতে পারে সোফিয়া। সেই সঙ্গে শিল্পকলায় যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে তার।
আরও পড়ুন- বহু লক্ষ বছর আগে মঙ্গলের বুকেও ছিল জল! এখন কোথায় রয়েছে সেই জল? জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা
হংকংয়ের সংস্থা Hanson Robotics তৈরি করেছে সোফিয়াকে। মানুষের মতো দেখতে এই রোবট বানানোর পিছনে মূল কৃতিত্ব রয়েছে ডেভিড হ্যানসনের। তিনিই হংকংয়ের এই সংস্থার সিইও এবং সোফিয়া’র নির্মাতা। বিগত ২৫ বছর ধরে রোবট তৈরি করছেন ডেভিড। তিনি বিশ্বাস করেন যে, রোবট যত বেশি রিয়েলিস্টিক দেখতে হবে অর্থাৎ মানুষের মতো দেখতে হবে, ততই মানুষের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন কাজে সাহায্যও করতে পারবে এইসব রোবট। আর এই বিশ্বাস থেকেই সোফিয়াকে নির্মাণ করেছিলেন ডেভিড।
হ্যানসন রোবোটিকসের অন্যতম বিখ্যাত এবং স্পেশ্যাল রোবট সোফিয়া। প্রভূত যত্ন নিয়ে সোফিয়াকে তৈরি করেছিলেন ডেভিড। মুখের অঙ্গভঙ্গি অবিকল নকল করে দেখানো, কারও সঙ্গে আলাপচারিতা এবং কথাবার্তা চালানো, যে কাউকে চিনে নেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে সোফিয়ার মধ্যে। ২০১৭ সালে সৌদি আরবের নাগরিকত্বও পেয়েছিল সোফিয়া। বিশ্বের প্রথম রোবট সিটিজেন হওয়ার খেতাবও রয়েছে সোফিয়ার কাছেই। এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড বলেছিলেন, “সোফিয়াকে সবসময় আমি সৃজনশীল শিল্পী হিসেবেই দেখেছি, যে অসাধারণ শিল্পকলা সৃষ্টি করতে পারে।” ডেভিড আরও জানিয়েছেন, অসংখ্য প্রযুক্তি আর শিল্পের মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে সোফিয়া। আর তাই নিজেও শিল্পকলা সৃষ্টি করতে পারে এই রোবট। আবেগ এবং ভিস্যুয়াল, দু’ক্ষেত্রেই মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে এই রোবটের।
ইতালিয় শিল্পী Andrea Bonaceto- র সঙ্গে মিলিত হয়ে আর্টওয়ার্ক তৈরি করেছিল সোফিয়া। প্রথমে Andrea Bonaceto সোফিয়ার একটি ছবি এঁকেছিলেন। তারপর সেটাকেই নিউরাল নেটওয়ার্কের সাহায্যে প্রসেস করেছিল সোফিয়া। আর তৈরি করে নিজের ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক। ছবির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘Sophia Instantiation’। ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো ক্লিপে এটাও দেখানো হয়েছে যে ইতালিয় শিল্পীর আঁকা কীভাবে সোফিয়ার ডিজিটাল পেন্টিংয়ে পরিণত হচ্ছে। এমনকি যিনি সোফিয়ার এই ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক প্রচুর খরচ করে কিনেছেন, তাঁর পাঠানো একটি ছবিও (ক্রেতার হাতের ছবি) নিজের সিস্টেমে আপডেট করে নতুন করে এঁকে একটি অরিজিনাল আঁকা তৈরি করেছিল সোফিয়া।
আঁকার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে নিজের কেরিয়ার আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে সোফিয়া। তবে আপাতত এই রোবট মন দিয়েছে সঙ্গীতের দুনিয়ায়। মিউজিশিয়ান হিসেবে এবার নিজের দক্ষতা প্রমাণের সময় এসেছে। আর সেই কাজই এখন নিখুঁত ভাবে করতে চায় সোফিয়া। ইতিমধ্যেই ‘সোফিয়া পপ’ নামের একটি প্রোজেক্টে কাজ শুরু করেছে সোফিয়া। এখানে হিউম্যান মিউজিশিয়ানদের থেকে গান, লিরিক্স, মিউজিক— সবকিছুর তালিম নেবে সে। অঙ্কন শিল্পীর পর মিউজিশিয়ান হিসেবে সোফিয়া কতটা খ্যাতি লাভ করতে পারে সেটা দেখার জন্যই মুখিয়ে রয়েছেন তার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন।