Clean Water From Urine: মহাকাশে বড় সাফল্য! নিজেদের প্রস্রাব থেকেই পানীয় জল তৈরি করে ফেললেন নভোচারীরা
যে সিস্টেমের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সাফল্য অর্জন করেছেন, তা ক্রু মেম্বারদের নিঃশ্বাস এবং ঘাম থেকে নির্গত আর্দ্রতাযুক্ত বর্জ্য জল সংগ্রহ করার জন্য ডিজ়াইন করা হয়েছে। সেখান থেকে এটিকে ওয়াটার প্রসেসর অ্যাসেম্বলিতে (WPA) পাঠিয়ে পানীয় জল তৈরি করা হয়েছে।
Drinking Water In Space: মহাকাশ অন্বেষণে বড়সড় সাফল্যের মুখ দেখলেন নভোচারীরা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে তাঁরা এবারও জলও তৈরি করে ফেলেছেন। আর তার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কীসের সাহায্য নিয়েছেন শুনলে অবাক হয়ে যাবেন! প্রস্রাব করে এবং আর্দ্রতাকে কাজে লাগিয়েই মহাকাশে বেঁচে থাকার জন্য জলের যোগান পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। গবেষণা দলটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের এনভায়রনমেন্টাল কন্ট্রোল অ্যান্ড লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম (ECLSS) ব্যবহার করে এই অনন্য মাইলফলকটি অর্জন করে ফেলেছেন।
যে সিস্টেমের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সাফল্য অর্জন করেছেন, তা ক্রু মেম্বারদের নিঃশ্বাস এবং ঘাম থেকে নির্গত আর্দ্রতাযুক্ত বর্জ্য জল সংগ্রহ করার জন্য ডিজ়াইন করা হয়েছে। সেখান থেকে এটিকে ওয়াটার প্রসেসর অ্যাসেম্বলিতে (WPA) পাঠিয়ে পানীয় জল তৈরি করা হয়েছে। এই ইউরিন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (UPA) ভ্যাকুম ডিস্টিলেশনের মাধ্যমে প্রস্রাব থেকে জল পুনরুদ্ধার করে। এই ডিস্টিলেশন বা পাতনের প্রক্রিয়াটি সমুদ্রের নোনা জলের মতো প্রস্রাবের ব্রিন তৈরি করে, যাতে অতি অবশ্যই পানীয় জলের কিছু উপাদান থাকে।
এখন ওই ব্রিন থেকে পানযোগ্য জল পুনরুদ্ধারের জন্য বিজ্ঞানীরা একটি নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা করছেন, যার নাম ব্রিন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (BPA)। এই BPA বা ব্রিন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি হল এমনই এক সাবসিস্টেম যা বর্জ্য জল নিষ্কাশন করতে পারে, শূন্য মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশে তা কতটা ব্যবহারযোগ্য তারই মূল্যায়ণ করা হচ্ছে। ইউরিন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি দ্বারা উৎপাদিত ব্রিনে জলকে নিয়ে যাওয়া হয় এই সাবসিস্টেমের মাধ্যমে এবং সেখানে একটি বিশেষ মেমব্রেন প্রযুক্তির সাহায্যে ওই জলকেই বাষ্পীভূত করতে ব্রিনের উপরে উষ্ণ ও শুষ্ক বাতাস চালানো হয়। সমগ্র প্রক্রিয়াটি আর্দ্র বায়ুর জন্ম দেয়, যা ক্রু মেম্বারদের নিঃশ্বাস এবং ঘামের পাশাপাশি স্পেস স্টেশনের জল সংগ্রহ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
জনসন স্পেস সেন্টারের ওই গবেষণা দলের সদস্য ক্রিস্টোফার ব্রাউন এই পদক্ষেপটিকে মহাকাশে নভোচারীদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন। মহাকাশে জল পুনর্ব্যবহার করার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি ব্যাখ্যা করছেন, সীমিত জল সরবরাহের পাশাপাশি এই পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে মাত্র 2 পাউন্ড জল হারিয়ে বাকি 98% সঞ্চালন অব্যাহত রাখা আসলে তাঁদের জন্য এক অনন্য অর্জন। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মহাকাশে যে জল তৈরি হচ্ছে, তা পৃথিবীতে মানুষের পানীয় জলের মতোই পরিষ্কার। ক্রিস্টোফার ব্রাউন জানাচ্ছেন, ক্রু মেম্বারদের সরাসরি প্রস্রাব পান করতে হচ্ছে না। কিন্তু তা পুনরুদ্ধার করে ফিল্টার করে আখেরে নভোচারীদের পেটে পরিষ্কার পানীয় জলই ঢুকছে বলে যোগ করলেন তিনি।
মহাকাশে দীর্ঘ সময় ভ্রমণের জন্য জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মহাকাশচারীদের বেঁচে থাকা এবং সুস্থতার জন্য জল অপরিহার্য। হাইড্রেশন, খাবার তৈরি করা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির জন্য পৃথিবীর মতোই মহাকাশেও জলের দরকার। বিশুদ্ধ জলের অবিরাম সরবরাহ ছাড়া ক্রু মেম্বারদের স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতার সঙ্গে ব্যাপক ভাবে আপস করা হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, মহাকাশযানে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম টিকিয়ে রাখতে জল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইলেকট্রোলাইসিসের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন তৈরি করতে এবং তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য জল ব্যবহৃত হয়। তার থেকেও বড় কথা হল, ক্ষতিকারক মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে সুরক্ষা দিতে মহাকাশচারীদের একমাত্র অস্ত্র জল।