Demodex Mites: আপনার ত্বকে-চোখে-মুখে ঘাঁটি গেড়ে বসে লক্ষাধিক অদৃশ্য ডেমোডেক্স, আট পায়ের এই পরজীবী কতটা খতরনাক?
Demodex Mites Unknown Facts: এই বিশেষ মাইটের দুটি প্রজাতি রয়েছে— ডেমোডেক্স ফলিকুলরাম, যা প্রধানত আমাদের মুখের লোমকূপে (বিশেষ করে চোখের পাতা এবং ভ্রুতে) বাস করে এবং ডেমোডেক্স ব্রেভিস, যা মুখের এবং অন্যত্র অয়েল গ্ল্যান্ডগুলিতে বাস করে।
Demodex Mites Details: ডেমোডেক্সের নাম শুনেছেন? এ এক এমনই মাইট পরিবারের সদস্য, যার বসবাস মানুষের শরীরে। আমাদের চুলের ফলিকলে বাস করে এবং এটি অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর অয়েল গ্ল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। এই বিশেষ মাইটের দুটি প্রজাতি রয়েছে— ডেমোডেক্স ফলিকুলরাম, যা প্রধানত আমাদের মুখের লোমকূপে (বিশেষ করে চোখের পাতা এবং ভ্রুতে) বাস করে এবং ডেমোডেক্স ব্রেভিস, যা মুখের এবং অন্যত্র অয়েল গ্ল্যান্ডগুলিতে বাস করে। তবে, নবজাতকদের ডেমোডেক্স মাইট থাকে না। প্রাপ্তবয়স্কদের উপরে করা একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে 14 শতাংশের ভিতরে এই ডেমোডেক্সের সন্ধান মিলেছে। তারপর তারই ডিএনএ বিশ্লেষণ করে এবং পরবর্তীতে তা ব্যবহার করেও 100 শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের শরীরেই ডেমোডেক্স ও তার বসবাস করার লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
এই গবেষণা এর আগের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলিকে মান্যতা দিয়েছে। এখন উদ্বেগের বিষয়টি হল, এই মাইটগুলি সমগ্র মানবজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং এই পরজীবীগুলি তাদেরই গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলেমিশে মানুষের শরীরে বাস করতে থাকে, তাহলে তার পরিণতি খুবই ভয়ঙ্কর হতে পারে। আমাদের প্রতিদিনের কোন কোন অভ্যাস, এই যেমন ধরুন, মুখ ধোয়া, মেকআপ লাগানো এই সব বিষয়গুলি এই মাইটকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে নাকি তার বেঁচে থাকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেই বিষয়টাও উঠে এসেছে গবেষণা থেকে। দুই প্রজাতির ডেমোডেক্সের মধ্যে সবথেকে বড় হল ডি. ফলিকুলরাম। এরা এক মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং তার এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত লম্বাও হতে পারে, যেখানে ডি. ব্রেভিস এক মিলিমিটারের এক চতুর্থাংশেরও কম। সবথেকে ভয়ঙ্কর দিকটি হল, এই ডেমোডেক্স প্রজাতিগুলি নিজেদের শরীরের একাধিক প্রজাতির ব্যাকটিরিয়া বহন করে। এই মাইট সনাক্ত করারও একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে সবথেকে ভাল পদ্ধতিটি হল, মাইক্রোস্কোপের স্লাইডে অল্প পরিমাণ সায়ানোক্রাইলেট আঠালো (সুপারগ্লু) ব্যবহার করে ত্বকের বায়োপসি করা।
অনেক মানুষের মধ্যে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে ডেমোডেক্স
আপনার মাথার স্ক্যাল্পে যেমন খুশকির বসবাস, তেমনই আপনার চুলের ফলিকলে বাস করে এই ডেমোডেক্স মাইটরা। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য অস্বস্তির সৃষ্টি হয়, যা শীতকালে অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে খুশকি যেমন আপনি বের করতে পারেন না, ডেমোডেস্ক মাইট চুলের ফলিকল থেকে জিও এক্সট্র্যাক্টর দিয়ে বের করতে পারেন। এই ভয়ানক মাইটগুলি ত্বকের কোষ এবং সিবেবিয়াস তেল খায়, যা তারা একাধিক এনজ়াইম নিঃসরণ করে আগে থেকেই হজম করে। যেহেতু তাদের শরীরে মলদ্বার নেই, তাই তারা মুখ দিয়ে তাদের বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। চুলের ফলিকলই এই মাইটদের বসবাসের জন্য সবথেকে আরামদায়ক জায়গা। সেখানেই এই ক্ষুদ্র প্রাণী সঙ্গম করে এবং ডিম পাড়ে। প্রায় 15 দিনের জীবনকালের পর তারা মারা যায় এবং ফলিকলে ঠিক সেই জায়গাতেই পচে যায়। এদের এই দুর্বল জীবনচক্র যা কিছু লোকের মধ্যে ডেমোডেক্সের কারণে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং একাধিক ক্লিনিকাল প্রভাবও তৈরি করতে পারে।
এদিকে মুখের মাইট ডেমোডেক্স বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি ডেমোডেক্স মাইটগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি অবস্থার পরামর্শ দেয়: ত্বকে ফুসকুড়ি, ব্রণ, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, চোখের পাতার অয়েল গ্ল্যান্ডগুলির ক্ষেত্রে বাধা, যা সিস্টের দিকে পরিচালিত করার কারণে সেখানে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। কর্নিয়া, শুষ্ক চোখ এবং চোখের উপর মাংসের বৃদ্ধি জনিত সমস্যাগুলিও দেখা যায়। এই ধরনের মাইটের সবথেকে ভয়ঙ্কর দিক হল, যখন আমরা এগুলি দ্বারা সংক্রামিত হই, তখন আমাদের জিনগুলি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অন্যান্য প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ একেবারেই প্রতিক্রিয়া দেখায় না, কেউ কেউ আবার কিছুক্ষণের জন্য চুলকাতে থাকে। একইরকম ভাবে, মাইটের সংখ্যা বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে পরিবর্তিত হয়।
মজার বিষয় হল, মাইটের সংখ্যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এবং ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগীদের মধ্যে আরও বেশি পরিমাণে বাড়তে থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভয়ঙ্কর ভাবে হ্রাস করতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাইটের প্রজনন এবং তাদের ক্লিনিকাল প্রভাব বোঝার জন্য আমাদের ইমিউন সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক থেরাপিউটিক যৌগ আছে যা মাইট সংখ্যা কমায়। কিন্তু ডেমোডেক্স আমাদের ত্বকের একটি প্রাকৃতিক অংশ। তাই, গবেষকরা বলছেন, তাদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না করাই ভাল হতে পারে। মানুষ যখন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন, তখন মাইট জনসংখ্যার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। যদিও মানুষের পরিবারের সদস্যদের থেকে ডেমোডেক্সের পুনঃসংক্রমণের সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে, এই মাইট তাদের হোস্টের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে না। সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াও, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলি সংক্রমণের সম্ভাব্য পথ।
ডেমোডেক্সদের বেঁচে থাকার সময় 21 ঘণ্টা
মেকআপ ব্রাশ, টুইজার, আইলাইনার এবং মাস্কারা ব্যবহার করা খুব একটা ভাল বিষয় নয়। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাস্কারায় ডেমোডেক্সের গড় বেঁচে থাকার সময় ছিল 21 ঘণ্টা। মেকআপ ব্যবহারের অন্যান্য দিক, যেমন নিয়মিত ক্লিনজ়িং এবং ফেসিয়াল ওয়াশিং, মাইটের সংখ্যা কমাতে পারে। অন্যান্য কিছু গবেষণায় আবার দেখা গিয়েছে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ধোয়ার পরেও এই মাইটগুলি বেঁচে থাকে। সুতরাং, আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশে বাসা বেঁধে থাকা এই মাইটদের জনসংখ্যাকে আফনি কতটা প্রভাবিত করতে পারেন, তা স্পষ্ট নয়। যদি আপনার চোখের পাতা এবং আশপাশের জায়গাগুলি ফুলে যায়, সেক্ষেত্রে চড়া মেকআপ এড়িয়ে যাওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
গবেষকরা বলছেন, ডেমোডেক্স আমাদের শরীরের স্বাভাবিক অংশ। যদিও আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার তাদের উপস্থিতিতে নেকিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকেন। কারণ, তাঁরা ফুসকুড়ি এবং প্রদাহে ভোগেন। আর এই প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ একমাত্র চিকিৎসকের দ্বারাই সম্ভব। আপনি যদি মনে করেন, বারবার ধুয়ে নিলেই মাইটদের থেকে নিস্তার পাবেন, আসলে তা নয়। তার থেকেও বড় কথা হল, ডেমোডেক্স মাইটদের থেকে সম্পূর্ণ ভাবে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।