Astronaut Bone Density: পৃথিবীতে ফেরার পর মহাকাশচারীদের হাড়ের শক্তি ক্ষয় হতে পারে, গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

হাড়ের ক্ষয় মূলত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবে হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পরে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে মানুষের শরীরের হাড় হারানো শক্তির কেবল মাত্র অর্ধেক পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

Astronaut Bone Density: পৃথিবীতে ফেরার পর মহাকাশচারীদের হাড়ের শক্তি ক্ষয় হতে পারে, গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
হাড়ের ক্ষয় মূলত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবে হয়ে থাকে। প্রতীকী ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 05, 2022 | 4:05 PM

বয়স বাড়লে প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষের শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিকতম একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, মহাকাশচারীরা (Astronauts) দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে তাঁদের হাড়ের ঘনত্ব (Bone Density) কমতে থাকে। সাইন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণাপত্র। সেখান থেকেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে সব মহাকাশচারীরা ছয় মাসের মতো অল্প সময়ের ব্যবধানে মহাকাশে ছিলেন, পৃথিবীতে ফেরার পর তাঁদের হাড়ের শক্তি এবং ঘনত্ব পুনরুদ্ধার করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে গিয়েছিল। এই বিষয়টা মহাকাশে যাঁরা দীর্ঘ সময় থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে খুবই কম দেখা যায়।

এমনটা কেন হয়?

হাড়ের ক্ষয় মূলত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবে হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পরে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে মানুষের শরীরের হাড় হারানো শক্তির কেবল মাত্র অর্ধেক পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষক লেই গ্যাবেলের নেতৃত্বাধীন একটি দল এই বিষয়ে গবেষণা করেছে। স্পেসফ্লাইটে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার পরে হাড়ের পুনরুদ্ধার সম্ভব কি না, তা জানতে 2015 সাল থেকে 17 জন মহাকাশচারীকে অনুসরণ করে আসছেন তাঁরা।

ঠিক কী বলছেন গবেষকরা

লেই গ্যাবেল জানাচ্ছেন, হাড় মানুষের শরীরের জীবন্ত অঙ্গ হওয়ায় তারা সব সময়ই সক্রিয়, ক্রমাগত তারা নিজেদের পুনরুদ্ধার করেই চলেছে। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যেহেতু হাড়ের উপরে প্রভাব ফেলে, তাই তার অভাবে মহাকাশচারীদের হাড় শক্তি হারাতে থাকে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, বার্ধক্যের কারণে 10 বছরে মানুষের হাড়ের যে পরিমাণ ক্ষয় হতে থাকে, তা মাধ্যাকর্ষণের অভাবে ছয় মাসে হাড়ের ক্ষয়ের প্রায় সমতুল্য।

কীভাবে চালানো হল এই গবেষণা

মোট 7 জন মহাকাশচারীর উপরে এই গবেষণা চালিয়েছেন গ্যাবেল ও তাঁর দলটি, তাঁদের মধ্যে চার জন পুরুষ এবং তিনজন মহিলা ছিলেন। মহিলাদের প্রত্যেকের বয়স 47 বছর বা তার আশপাশে। 7 মাসেরও বেশি সময় তাঁরা স্পেস স্টেশনে ছিলেন। ওই মহাকাশচারীদের হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তি পরিমাপের জন্য বিজ্ঞানীরা এইচআর-পিকিউসিটি নামক খুব সুক্ষ্ম একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। চুলের থেকেও পাতলা পায়ের হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তি মাপা যায় এই যন্ত্রের সাহায্যে। মোট চারটি ধাপে মহাকাশচারীদের হাড়ের শক্তি ও ঘনত্ব পরীক্ষা করা হয় – মহাকাশ অভিযানের আগে, সেখান থেকে ফিরে আসার পর, তারও ছয় মাস পর এবং এক বছর পর।

গবেষণায় ঠিক কী দাঁড়াল

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মহাকাশে যদি ছয় মাসেরও কম সময় যদি কোনও নভোচারী থাকেন, তাহলে হারানো হাড়ের ক্ষয় পুনরুদ্ধার করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। যাঁরা ছয় মাসের বেশি সময় থাকেন, তাঁদের হাড় ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার এক বছর থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হাড়ের অন্তত অর্ধেকটা পুনরুদ্ধার করা যায়। তবে, যাঁরা মহাকাশে ছয় মাসের অধিক সময় ধরে থাকেন, তাঁদের হাতের নিচের দিকের হাড় সে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে গ্যাবল বলছেন, এই হাড় শরীরের ওজন বহন করে না। তাই, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাব থাকা সত্ত্বেও তার উপরে সেরকম প্রভাব পড়েনি।

কী করলে মহাকাশে হাড়ের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব

ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্য আর এক অধ্যাপক স্টিফেন বয়েড দাবি করছেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মহাকাশে থাকা নভোচারীরা ভার উত্তলনের মধ্যে দিয়ে হাড়ের ক্ষতি কিছুটা হলেও রোধ করতে পারেন। এই কাজ আসলে শরীরের হাড়কে শক্তি দিতে পারে। তিনি আরও যোগ করেছেন, পৃথিবীতে ফিরে এলেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নভোচারীদের হাড় মোটা হতে শু করে এবং ধীরে ধীরে হৃত শক্তির পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়। যদিও, ট্রাবেকুলা নামক একটি মাইক্রোস্কোপিক টিস্যু থাকে, যা একবার নষ্ট হয়ে গেলে আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।