পৃথিবীর বুকে বোঝা বাড়াচ্ছে মানুষের সৃষ্টি, সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা

মূলত ভূপৃষ্ঠের উপর মানুষের সৃষ্টির বোঝা বলতে রাস্তঘাট, হাইওয়ে, বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু বিল্ডিং, গাড়ি এইসব বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ইনফ্রাস্ট্রাকচার যা তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে সেইসবই এখন পৃথিবীর বুকে অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পৃথিবীর বুকে বোঝা বাড়াচ্ছে মানুষের সৃষ্টি, সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা
বায়োমাস অর্থাৎ গাছ, জঙ্গল এবং প্রাণীদের তুলনায় ম্যানমেড মাসের পরিমাণ বেড়েছে।
Follow Us:
| Updated on: Dec 13, 2020 | 6:23 PM

পৃথিবীর উপর ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছে মানুষের বিভিন্ন সৃষ্টি। একুশ শতকে এসে যে বাতাসে আমরা শ্বাস নিই, যে জল আমরা পান করি, আর যেসব খাবার আমরা খাই, এছাড়া বাকি সব জিনিসেই প্রভাবে পড়েছে মানুষের। বুদ্ধি আর ক্রিয়েটিভিটিকে হাতিয়ার করে ‘আউট অফ দ্য বক্স’ ভাবতে শিখেছে মানুষ। যার জেরে উন্নতিও হয়েছে দ্রুত গতিতে।

কিন্তু এই উন্নতির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ভূপৃষ্ঠে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন কিছু আবিষ্কার হচ্ছে। মডার্ন লাইফস্টাইলের জেরে ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে পৃথিবী। ম্যানমেড অর্থাৎ মানুষের তৈরি সবকিছুই আজকাল পৃথিবীর বুকে বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। কারণ মানুষের তৈরি সব জিনিস পরিবেশ বান্ধব বা এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি নয়। ফলে ক্ষতিকর কার্বনের মাত্রা বাড়ছে বিশ্বে। আর লাগামছাড়া ভাবে কার্বনের বৃদ্ধি যে পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সেকথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সময় যত এগোচ্ছে পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রাকৃতিক জিনিসের তুলনায় মনুষ্য সৃষ্টির চাপ বাড়ছে। এই ওজনের বোঝা ভূপৃষ্ঠ কতদিন ঠিক ভাবে বইতে পারবে তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। আর এইসবের মধ্যেই উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে সংবাদসংস্থা এএফপি-র একটি রিপোর্ট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রাস্তাঘাট, বিভিন্ন বহুতল এবং অন্যান্য মানুষের তৈরি জিনিসের ওজন প্রতি ২০ বছরে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।

মূলত ভূপৃষ্ঠের উপর মানুষের সৃষ্টির বোঝা বলতে রাস্তঘাট, হাইওয়ে, বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু বিল্ডিং, গাড়ি এইসব বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ইনফ্রাস্ট্রাকচার যা তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে সেইসবই এখন পৃথিবীর বুকে অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে এই ওজন ১.১ টেরাটন। যা ১.১ ট্রিলিয়ন টনে পৌঁছতে বেশি সময় লাগবে না। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে এই বোঝা। সেই সঙ্গে পাশাপাশি কমবে ভূ-গর্ভে সঞ্চিত বিভিন্ন সংরক্ষিত শক্তির পরিমাণ। এইসব শক্তি যেমন- কয়লা, পেট্রোলিয়াম পুনরায় উৎপাদন সম্ভব নয়।

সভ্যতা যত এগিয়েছে, বিশেষ করে কৃষি বিপ্লব এবং শিল্পায়নের পর থেকে বায়োমাস অর্থাৎ গাছ, জঙ্গল এবং প্রাণীদের তুলনায় ম্যানমেড মাসের পরিমাণ বেড়েছে। পরিবেশের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। বেড়েছে দূষণের মাত্রা। ইকোসিস্টেম এবং ইকোলজি নিজস্ব ভারসাম্য হারিয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বদল এসেছে কৃষিকাজে। কৃষি বিপ্লবের পর ভূমির ব্যবহার এবং চাষ-আবাদের ধরন বদলেছে। জোর দেওয়া হয়েছে শিল্পের উপরে। দ্রুত গতিতে সবুজায়ন আর শিল্পায়ন হওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাপনের অভ্যাসও বদলেছে। তাতে সুবিধে যেমন হয়েছে তেমনই একেবারে বারোটা বেজে গিয়েছে পরিবেশের। রাস্তাঘাট, ইমারৎ, ড্যাম এসব তৈরির জন্য অরণ্য নিধন হয়েছে যথেচ্ছ পরিমাণে। কংক্রিটের জঙ্গলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইট-বালি-সিমেন্টের পরিমাণ আরও বেড়েছে। তার ফলেই মানব সভ্যতা পৃথিবীর বুকে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময় থাকতে সতর্ক না হলে আগামী দিনে সমূহ বিপদের সম্মুক্ষীন হবে মানবজাতি।