পুরমন্ত্রীকে ‘বাইরে গিয়ে দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে পুরপ্রশাসকের পদ থেকে ইস্তফা জিতেন্দ্র তিওয়ারির

আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন তিনি। সঙ্গে  পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের উদ্দেশেও দিলেন বিস্ফোরক বার্তা।

পুরমন্ত্রীকে 'বাইরে গিয়ে দেখে নেওয়ার' হুমকি দিয়ে পুরপ্রশাসকের পদ থেকে ইস্তফা জিতেন্দ্র তিওয়ারির
ইস্তফার আগে পুরকর্মীদের উদ্দেশে জিতেন্দ্র বক্তব্য রাখছেন
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 17, 2020 | 5:02 PM

আসানসোল: পুরপ্রশাসকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি (Jitendra Tewari)। সঙ্গে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য। আসানসোলের সদ্য প্রাক্তন পুরপ্রশাসক এদিন বলেন, “আসানসোলের অনেক কিছুই হওয়ার ছিল। কিন্তু এই পুরমন্ত্রীর আমলে তা কখনই সম্ভব নয়। তবে অপেক্ষা করে যান কটা দিন। এই পুরমন্ত্রীকে কীভাবে সরাতে হয়, তা বাইরে গিয়ে দেখে নেব।”

তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল থেকে ইস্তফা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যখন রাজনীতির কুশীলবরা উত্তেজনায় ফুটছেন, তখনই ইস্তফা দিয়ে বিশেষ আলোচনার মধ্যে চলে এলেন জিতেন্দ্রও! আগামী শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল জিতেন্দ্রর, ফলে তার আগেই এই ইস্তফা আঁচ করতে পারেনি রাজনৈতিক মহল। দু’টি ঘটনার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কয়েক ঘণ্টার। কিন্তু দুইয়েরই রাজনৈতিক তাৎপর্য ও তৃণমূলের উপর তার প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। একদিকে, দলের কাছে ‘কৃতজ্ঞতা’ স্বীকার করে নেত্রীর উদ্দেশে চিঠি লিখে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু। আর অন্যদিকে দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক কথা বলে পুর প্রশাসন থেকে ইস্তফা দিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ার।

এদিন ইস্তফা দেওয়ার আগে পুরনিগমের মুখোমুখি ভবনে পুরকর্মীদের ডেকে জিতেন্দ্র কথা বললেন মিনিট পনেরো। আসানসোল প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে  আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর গলায় ক্ষোভের সুর।  ফিরহাদ হাকিমকে লেখা চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেদিন চিঠিতে যা লিখেছিলাম, যা অভিযোগ করেছিলাম, সেই সমস্যা সমাধানে কোনও কথাই হয়নি। শুধু কথা হয়েছে, কেন চিঠি লিখেছি, কোন ভাষায় লিখেছি, তাতে কী মানে দাঁড়ায়… এসব নিয়েই। আসানসোলের জন্য ওরা আর কোনও কাজ করতে রাজি নয়।”

ফিরহাদ হাকিমের নাম না করে তিনি বলেন, ” ওঁ পুরমন্ত্রী থাকলে কাজ করা যাবে না। কেন চিঠি দিলাম, তা নিয়েই কথা হচ্ছে। ‘ওঁ আমার ভাইয়ের মত’…এসব বলে কী হবে! কাজটা তো করতে হবে। কাজটাই হচ্ছে না। আসানসোল বঞ্চিত।” এরপরই পুরকর্মীদের উদ্দেশে যে কথাগুলো বললেন, তা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তিনি বলেন, “চিন্তা করবেন না। তিন-চার মাস একটু সংযতভাবে থাকবেন। যাঁরা আসবেন, তাঁরাও আপনাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে একটু মানিয়ে নেবেন। তিন-চার মাস পর আবার আমি ফিরে আসব। এই কথা দিয়ে গেলাম।”

জিতেন্দ্র এই কথাটাই কানে বিঁধেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে কি জিতেন্দ্রও দলবদলের ইঙ্গিত দিলেন? জল্পনা কিন্তু ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। জিতেন্দ্র বলেন, “আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচনের পর আবার আমাদের লোকরাই এখানে আসবেন। যাঁরা আসবেন, তাঁরা আপনাদের সব সমস্যার সমাধান করবেন।” এরপরই ফিরহাদের নাম না করে তিনি বলেন,  “বর্তমান সরকারের যে মন্ত্রী এখন ক্ষমতায় আছেন, তিনি যতদিন ওই চেয়ারে থাকবেন আমাদের আসানসোলের সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি তো এখন আছেন। ওটা আপনাদের কাজ নয়। ওটা আমাদের কাজ। কীভাবে তিনি ওই পদে না থাকেন, সেটা আমি বাইরে গিয়ে বুঝে নেব।”

জিতেন্দ্র যখন এই কথাগুলি বলছেন, তখন হাততালি দিতে থাকেন কক্ষে উপস্থিত পুরকর্মীরা। উল্লেখ্য, ফিরহাদ-জিতেন্দ্র দ্বৈরথের সূত্রপাত হয়েছিল গত সোমবারই। পুরমন্ত্রীকে একটি চিঠি লেখেন জিতেন্দ্র। যা প্রকাশ্যে আসাতেই বিতর্কের সূত্রপাত। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন,  “কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের ২০০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে আসানসোল। রাজনৈতিক কারণে পুরদফতর এই টাকা নিতে দেয়নি। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে কেবল রাজনৈতিক কারণে।”

এরপরই ফিরহাদ বলেন, “আসানসোলের উন্নয়নের জন্য ওঁকে অনেক টাকাই দেওয়া হয়েছে। সেসব তো চিঠিতে লেখেনি। ও নিশ্চয়ই গ্যাস খেয়ে লিখেছে।” রাতারাতি জিতেন্দ্রকে নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব বৈঠকে বসবেন বলে খবর রটে। যদিও ফিরহাদ বলেন, “সাত আটবার ফোন করার পরও জিতেন্দ্র ফোন ধরেননি। ফলে বৈঠক হচ্ছে কে বলল!” যদিও গত সোমবার রাতেই খবর হয়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ক্যামক স্ট্রিটের অভিষেকের দফতরে জিতেন্দ্রকে ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে থাকার কথা ছিল পিকে-রও। পরে জিতেন্দ্র জানান, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর ৫ মিনিটের জন্য মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে সময় দেবেন। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকেই সমস্যার কথা জানাতে চেয়েছিলেন জিতেন্দ্র। কিন্তু তার আগেরদিনই, অর্থাৎ ১৭ তারিখ পুরপ্রশাসকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি।