মদ্যপ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বচসা-হাতাহাতির জেরে বন্ধ পরিষেবা, কোভিড ওয়ার্ডে জমেছে বাথরুমের জল, যত্রতত্র ছড়িয়ে পিপিইকিট!

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এদিন বিকেলেই স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বালিটিকুরি কোভিড হাসপাতালের ডেপুটি সুপার। সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয় বলে জানান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক।

মদ্যপ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বচসা-হাতাহাতির জেরে বন্ধ পরিষেবা, কোভিড ওয়ার্ডে জমেছে বাথরুমের জল, যত্রতত্র ছড়িয়ে পিপিইকিট!
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 12, 2021 | 10:45 PM

হাওড়া: বেলাগাম করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাজ্যে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ ভয় ধরাচ্ছে ক্রমশ। হাসপাতালে নেই শয্যা। পাওয়া যাচ্ছে না অক্সিজেন, ওষুধ কিছুই। এই পরিস্থিতিতে যখন কোভিড বিধি, সতর্কতা ও স্বচ্ছতা ভাইরাস মোকাবিলার সবচেয়ে জরুরি হাতিয়ার তখন হাওড়ার বালিটিকুরি কোভিড হাসপাতালের (Baltikuri Hospital) ছবি রীতিমতো ভয় ধরিয়েছে। হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বচসার জেরে গোটা একদিন বন্ধ থাকল পরিষেবা। কোভিড রোগীদের শোচনীয় অবস্থা দেখে শিউরে উঠলেন সকলে!

বুধবার সকালে, হাসপাতাল চত্বরে দেখা যায়, যত্রতত্র পড়ে রয়েছে পিপিইকিট। কোভিড ওয়ার্ডে জমা হয়েছে বাথরুমের জল। এমনকী, বন্ধ থাকে রোগীদের খাবার দেওয়ায। অনেকেই অভিযোগ করেন, খাবার তো দূরের ব্যাপার, প্রয়োজনীয় পানীয় জলটুকু পর্যন্ত দেওয়া হয়নি তাঁদের। প্রায় ২৪ ঘণ্টা এমনই অস্বাস্থ্য়কর পরিবেশে কাটান বালিটিকুরি হাসপাতালের রোগীরা। তাঁদের অভিযোগ হাসপাতালের স্বাস্থ্য়কর্মীদের মধ্যে বচসা ঝামেলার জেরে গোটা দিন বন্ধ থাকে পরিষেবা।

হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন সমস্যার সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার রাত থেকে। হিল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক অস্থায়ী কর্মীর অভিযোগ, ওদিন রাতে  তাঁদেরই এক  সহকর্মীকে হাসপাতালের সুপারভাইজ়ার লাল্টু বিশ্বাস মদ্যপ অবস্থায় মারধর ও গালিগালাজ করেন। জল এতদূর গড়ায় যে বুধবার হাসপাতালের মধ্যেই ফের দুই পক্ষে ফের এক প্রস্থ হাতাহাতি হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর অভিযোগকারী স্বাস্থ্যকর্মী হিল্লোল-সহ মোট ৩৭ জন স্বাস্থ্য়কর্মী হাসপাতালের সমস্ত কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁদের দাবি, অভিযুক্ত লাল্টু বিশ্বাসকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ, অভিযুক্তের আচরণে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যদিও পাল্টা লাল্টু বিশ্বাসের অভিযোগ, তাঁকে মিথ্যা ফাঁসানো হচ্ছে। এরফলেই প্রায় সারাদিন বন্ধ থাকে হাসপাতালের পরিষেবা। এমনকী কোভিড ওয়ার্ডের (COVID ward) মতো জরুরি বিভাগে থাকা রোগীরাও কোনও পরিষেবা পাননি। ঘটনায় রীতিমতো শঙ্কিত হয়ে পড়েন রোগীরা।

এদিন হাসপাতালে সুজন সাঁতরা নামে এক রোগীর পরিজন বলেন, “এখানে এসে জানতে পারি আমার মা কে দুপুর থেকে কোনও খাবার দেওয়া হয়নি। অক্সিজেন লেভেল কমলেও কেউ নজর করেননি। মনিটরিং করার কোনও মানুষ নেই। কন্ট্রোল রুমে বার বার ফোন করেও কোনও সদুত্তর মিলছে না। তাই মা কে এখানে না রেখে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” পরিষেবা না পাওয়ার জন্য এদিন হাসপাতালে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখান রোগীর আত্মীয়রাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এদিন বিকেলেই স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বালিটিকুরি কোভিড হাসপাতালের ডেপুটি সুপার। সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয় বলে জানান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে এমনটাই জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: তৈরি হচ্ছে জেলার সর্ববৃহৎ কোভিড হাসপাতাল, ক্যানিংয়ে এসে পৌঁছল ৫০ টি শয্যা, সৌজন্যে ‘গো ধার্মিক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’