Margram Blast: বখরা নিয়ে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নাকি শাসক-বিরোধী কাজিয়া? মাড়গ্রাম কাণ্ডে TV9 বাংলার অন্তর্তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
Margram Blast: ২০১৮ সালে ফের তৃণমূলের প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। খাতায় কলমে সুজাউদ্দিন এখনও তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, তার পাশের এলাকাতেই পঞ্চায়েত সদস্য সুজাউদ্দিন।
বীরভূম: মাড়গ্রামে বোমার (Margram Blast) আঘাতে জোড়া মৃত্যু। এর নেপথ্যে কি কংগ্রেস-তৃণমূল রেষারেষি নাকি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে প্রাণ দিতে হল তরতাজা দুটো প্রাণকে। মাড়গ্রামে TV9 বাংলার অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রধান অভিযুক্ত সুজাউদ্দিন আহমেদ ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাড়গ্রাম ১ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। আগে কংগ্রেস করলেও, তিনি প্রধান হন তৃণমূলের টিকিটে জিতে। ২০১৮ সালেও তৃণমূল প্রতীকে জিতে পঞ্চায়েত সদস্য হন। এখনও খাতায় কলমে সুজাউদ্দিন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য। পঞ্চায়েতের প্রধান হতে না পেরে সুজাউদ্দিন প্রথমে বিজেপিতে, পরে কংগ্রেসে যোগ দেন। সোমবার সকালে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়েছে মাড়গ্রাম। সেখানে চায়ের দোকানে বসে থাকা স্থানীয় এক বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলতেই জানা গেল বেশ কিছু তথ্য। ওই বৃদ্ধ বলেন, “সুজাউদ্দিন একবার তৃণমূল, একবার কংগ্রেস, একবার বিজেপি…এই সবই করে। ওদের কাজটাই ওই।” আবার আরেক ব্যক্তি বলেন, “সুজাউদ্দিন এখনও তৃণমূলেরই সদস্য রয়েছেন। সদস্য থাকাকালীনই বিজেপিতে গেল ও। তারপর বিজেপি থেকে সভাপতি হল, আবার কংগ্রেসে চলে এল।” আরেক ব্যক্তি বলেন, “ওরা তো সবসময়ই পয়সা খাওয়া-খাওয়ি করে। পঞ্চায়েতের পয়সা খায়। এই নিয়ে লেগে যায় দুপক্ষের দ্বন্দ্ব।” এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, “এই গ্রামটাই বেশিরভাগ পঞ্চায়েতে ছিল। কিন্তু এখন মাড়গ্রাম ১ ও ২ নম্বর পুরোটাই তৃণমূল হয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগ এলাকা দখল নিয়েই ঝামেলা।”
সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশই বলছেন, গোটা লড়াইটাই তৃণমূল বনাম বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের। প্রধান এক অভিযুক্ত সুজাউদ্দিনকেই ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সুজাউদ্দিন ছিলেন লাল্টু শেখের দাদা মাড়গ্রাম ১ নম্বর পঞ্চায়েত প্রধান ভুট্টো শেখের পূর্বসূরি। তিনি সেসময় কংগ্রেসের টিকিটে জেতেননি। তিনি তৃণমূলের প্রতীকেই জিতেছিলেন। ২০১৮ সালে ফের তৃণমূলের প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। খাতায় কলমে সুজাউদ্দিন এখনও তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, তার পাশের এলাকাতেই পঞ্চায়েত সদস্য সুজাউদ্দিন।
২০১৮ সালে জেতার পর সুজাউদ্দিনকে প্রধান করা হয়নি। আর সেটাই তাঁকে বিক্ষুব্ধ করেছিল বলেই গ্রামবাসীদের একাংশ বলছেন। তাই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, পরে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে গিয়েছেন। হাসান বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ছে মাড়়গ্রাম ১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েত। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এটা কংগ্রেসী এলাকা বলেই পরিচিত। দীর্ঘদিন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেস থেকেই। ২০২১ এর নির্বাচনের আগে এখানে বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের মিল্টন রশিদ। একুশের নির্বাচনের পর কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে থেকে সুজাউদ্দিনের মতো আবার কেউ কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এই লড়াই একেবারেই এলাকা দখলের লড়াই। কারণ পঞ্চায়েতের টাকা। পঞ্চায়েতের একাধিক বিষয়ে বিভিন্ন দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠে আসছে, তার ব্যতিক্রম মাড়গ্রামও নয়।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “তৃণমূল কর্মীদের হত্যা করার জন্য কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএম সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখত। এই তিনটে দল একত্রিত হয়ে বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। সুজাউদ্দিন তাদের হাতিয়ার। খাতায় কলমে ওই তৃণমূলের হলেও ও তো আর তৃণমূলের ছিল না।”
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মাড়গ্রামের ঘটনা দুঃখজনক ঘটনা। যাঁরা খুন হলেন তাঁরা তৃণমূল, যাঁরা খুন করলেন বলে অভিযোগ, তাঁরাও তৃণমূলেরই প্রতীকে জেতা। মাঝে আবার সিপিএম-কংগ্রেস-মাওবাদীদের গল্প করার লাভ কী?”
বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “বাংলায় এসবই হচ্ছে। জমি-পয়সা দখলের লড়াই হচ্ছে তৃণমূল- তৃণমূলের মধ্যেই। বাকি যা কংগ্রেস-বিজেপি করা হচ্ছে, ওসব গল্প।”