Fraud Case: ভুয়ো অ্যাপ মোবাইলে ইনস্টল করে লিঙ্ক দিতেই ৬ লক্ষ টাকা গায়েব যুবতীর
Balurghat: ধৃত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আন্তঃরাজ্য প্রতারণা চক্রের আরও বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে ৷ সেইসব পাণ্ডাদের ধরতে ভিন রাজ্যের পুলিশের সহায়তা নিচ্ছে জেলা সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ।
বালুরঘাট: হ্যাকারদের অ্যাপ মোবাইলে ইনস্টল এবং ওটিপি শেয়ার করতেই যুবতীর অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা। এই সাইবার প্রতারণা চক্রের পাঁচ পান্ডাকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করল সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। ধৃত পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে বালুরঘাট জেলা আদালতে তোলা হলে পরে বিচারক ১৩ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। আর একজন আদালতে জামিন পেয়েছেন। ধৃত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আন্তঃরাজ্য প্রতারণা চক্রের আরও বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে ৷ সেইসব পাণ্ডাদের ধরতে ভিন রাজ্যের পুলিশের সহায়তা নিচ্ছে জেলা সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের এক যুবতীর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে যায়। সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরেই বালুরঘাটে সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবতী ৷ এদিকে সাইবার থানার পুলিশ অভিযোগ পেতেই ঘটনার তদন্ত নেমে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ও কুমারগঞ্জ এলাকা থেকে মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। ধৃত ৫ জনের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছর মধ্যে। ধৃত পাঁচ জনের মধ্যে একজন যুবক খুবই দুঃস্থ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবককে ১০০০ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার বিভিন্ন ডকুমেন্টস(নথি) নিয়ে ভার্চুয়াল ভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলেন বাকি চার যুবক। ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দুঃস্থ যুবকের নাম ঠিকানা ও তথ্য ব্যবহার করা হলেও ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয় অন্যের। যার ফলে ব্যাঙ্ক থেকে নতুন অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন নথি কুরিয়ারের মাধ্যমে কোথায় পাঠানো হচ্ছে সেই সব তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যান ওই চার যুবক।
এ দিকে, পঞ্চম যুবক যাকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়, তার কাছে ব্যাঙ্কের নথি পৌঁছনোর আগেই বাকি চার যুবক সেই ব্যাঙ্কের নথি ও এটিএম কার্ড কুরিয়ার থেকে তুলে নেয় ৷ এবং তা আবার প্রতারণা চক্রের অন্য পাণ্ডাদের পাঠিয়ে দেন ৷ এর ফলে পঞ্চম যুবক হাতে ব্যাঙ্কের কিছুই পানি। অথচ পঞ্চম যুবকের অ্যাকাউন্টেই প্রতারণার টাকা ক্রেডিট করা হত। সেই জায়গা থেকে তার তথ্য পুলিশের কাছে আসে।
অন্যদিকে ওই যুবতী তাঁর ক্রেডিট কার্ডের চার্জ কমানোর জন্য গুগলে সার্চ করতে থাকে। সেই সময় অচেনা নম্বর থেকে ওই যুবতীর কাছে ফোন আসে। এবং তাতে ফোনের ওপারের ব্যক্তি নিজেকে ক্রেডিট কার্ড ডিপার্টমেন্ট লোক বলে পরিচয় দেন। ক্রেডিট কার্ডের চার্জ কমাতে গেলে পরে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে মোবাইলে বলে যুবতীকে বলা হয়। এবং একটি ওটিপি ও কিছু তথ্য দিতে হবে বলে জানানো হয়৷ তাহলে পরেই ক্রেডিট কার্ডের চার্জ কমে যাবে। ওই যুবতী বিষয়টি সত্যি ভেবেই হ্যাকারদের বলা অ্যাপ নিজের মোবাইলে ইন্সটল করেন এবং হ্যাকারদের সঙ্গে ওটিপি শেয়ার করেন। এরপরে হ্যাকাররা ওই যুবতীর মোবাইল অ্যাকসেস নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। আর মোবাইলেই ছিল ব্যাঙ্কের অ্যাকসেসও। সেখান থেকে যুবতীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার নিমিশের মধ্যেই গায়েব করে দেন। এমনকী যুবতীর ফিক্স ডিপোজিট ভেঙে টাকা গায়েব করা হয় ৷ প্রতারণার শিকার হয়েছেন বিষয়টি বুঝতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেতেই মোট পাঁচজনকে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার তাদের বালুরঘাট জেলা আদালতে তোলা হয়। বালুরঘাট জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৩ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত পাঁচজনের মধ্যে চারজনই সাইবার প্রতারণা চক্রের অন্যতম মূল পান্ডা। এরা সকলেই মোবাইলে সিদ্ধহস্ত। এদের সকলের বাড়ি জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ৷ এই প্রতারণা চক্রের জাল আরো অনেক বড়। যেখানে আন্তঃরাজ্য প্রতারণা চক্রের হদিস মিলেছে। এই চক্রের সন্ধান চালাছে জেলা সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ।
ডিএসপি হেডকোয়ার্টার সোমনাথ ঝাঁ জানান আন্তঃরাজ্য সাইবার প্রতারনা চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে চারজন সাইবার প্রতারণার অন্যতম মূল পান্ডা। এদের সকলের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং এদের বয়স ২২ থেকে ২৫ এর মধ্যে। তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের নাম-পরিচয় এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ এই চক্রের জাল আরো অনেক বড়। ধৃতদের ১৩ দিনের পুলিশি হেফাজত নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে আরও বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ দিনাজপুর সাইবার ক্রাইম থানার এটি একটি বড় সাফল্য। তবে এখন পর্যন্ত ওই যুবতীর টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি। সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।