Disabled Student: স্নান-খাওয়ারও জোর নেই শরীরে, শুধু কলম চালানোর শক্তি কখনও দ্বিতীয় হতে দেয়নি পায়েলকে

Disabled Student: চিকিৎসার খরচ জোগাতেই ঘুম ছুটেছে পরিবারের। এবার পড়াশোনার খরচ কোথা থেকে আসবে তা নিয়েই চিন্তিত পরিবার।

Disabled Student: স্নান-খাওয়ারও জোর নেই শরীরে, শুধু কলম চালানোর শক্তি কখনও দ্বিতীয় হতে দেয়নি পায়েলকে
৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে পায়েল পাল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 25, 2022 | 7:15 AM

দক্ষিণ দিনাজপুর: সম্বল বলতে অপ্রতিরোধ্য মেধা আর মনের অদম্য জোর। শরীরের একটা অংশ কাজই করে না, পরিবারের অর্থের জোরও নেই তেমন। তবে পায়েলকে এলাকার মানুষ প্রায় প্রত্যেকেই চেনেন। কারণ স্কুলে কখনও দ্বিতীয় হয়নি সে। হাঁটাচলা তো দূরের কথা, নিজে স্নান পর্যন্ত করতে পারে না সে। আর তার মাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বরও তাক লাগিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। কিন্তু পরবর্তীতে পড়াশোনা কী ভাবে এগোবে, কোথা থেকে আসবে টাকা, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবার ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের অমৃতখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা পায়েল। ১০০ শতাংশই প্রতিবন্ধী সে। মায়ের কোলে চেপেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল পায়েল। তার ঝুলিতে এসেছে ৮০ শতাংশ নম্বর। মেয়ের সাফল্যে আনন্দিত হলেও, উচ্চ শিক্ষার ব্যয়ভার কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার বাবা, মা। কারণ মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়েই ঋণে জর্জরিত হতে হয়েছে ওই পরিবারকে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পরই শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকায় যান ডিএসপি হেড কোয়ার্টার সোমনাথ ঝাঁ ও বালুরঘাট থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা। জেলা পুলিশ ও বালুরঘাট থানার পুলিশের পক্ষ থেকে পায়েলকে একটি ট্রাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামিদিনে পায়েলকে সাহায্য করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষার বন্দোবস্ত করার কথা বলেছেম পুলিশ আধিকারিকরা।

পায়েল পাল জন্ম থেকেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও এখনও তার উচ্চতা ছোট্ট শিশুর মতই। কোমরের নীচ থেকে কার্যত অসাড়। নিজে স্নান করতে পারে না, চলাফেরা বা খাবার খাওয়ার জন্যও মায়ের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। রুগ্ন হাত দিয়ে কোনও ভারী কাজ করতে পারেনা। শুধুমাত্র কোনও রকমে কলম চালাতে শিখেছে সে। আর তাতেই বাজিমাত। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে কুরমাইল সোনাউল্লা হাই স্কুলে পড়াশোনা করে পায়েল। অষ্টম শ্রেণিতে শুধু একবার দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিল পায়েল। আর কখনও দ্বিতীয় হয়নি। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও অন্যথা হয়নি। স্কুলের ৮০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ৩৬ জন। তাদের মধ্যে পায়েলই প্রথম।

বাবা দিগেন পাল পেশায় দর্জি। তাঁর ওপরই পরিবারের ভার। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা নেই। সমস্ত বাধাকে উপেক্ষা করেই এগিয়ে চলেছে পায়েল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৪। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গণিতে ৮০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৫, ভূগোলে ৯৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই ছাত্রী। আগামিদিনে ভুগোল নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে। পড়াশোনা করে চাকরি করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চায় পায়েল। তার মাধ্যমিকের ফলাফলে গর্বে বুক ভরেছে শিক্ষকদেরও।