South Dinajpur Incident: দু’দিন ধরে ভেবেই চলছিল দিদা ঘুমোচ্ছে, ঠিক খেতে দেবে… বছর নয়ের অবুঝ রানি বাড়িতেই কাটাল নরক-যন্ত্রণা
North Dinajpur Incident: ছোট থেকেই অভাব-অনটন থাকায় নাতনির চিকিৎসা করাতে পারেননি। যার ফলে আর পাঁচটি মেয়ের মত সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল না রানি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওই এলাকায় পচা গন্ধ বেরছিল।
দক্ষিণ দিনাজপুর: দু’দিন আগে দিদা মারা গেছে। কিন্তু অবুঝ মেয়ে সেটাও জানত না। ভেবেছিল দিদা শুয়ে আছে। কিছু বাদে হয়তো উঠবে। উঠে তাকে খাবার দেবে। এই করেই কেটে গেছিল দু’দুটো দিন। খাবারের অপেক্ষায় দিদার পাশে দু’দিন ধরে বসেছিল একরত্তি মেয়েটি। কিন্তু দিদার কোনও সাড়া আর মেলেনি। পরে প্রতিবেশীরা জানতে পারলেন আসল কারণ। দিদা যে দু’দিন আগেই চলে গিয়েছেন! কিন্তু অবুঝ রানি কিছুই বলতে পারেনি প্রতিবেশীদের। রানি যে আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক নয়। সে বিশেষ ভাবে সক্ষম। সেভাবে কথাও বলতে পারে না। এমনকি হাঁটাচলাও ঠিক ভাবে করতে পারে না।
মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ফরেস্ট এলাকার স্মৃতি ঝাঁ(৭২)-এর মৃত্যু হয়। ঘুমের ঘরে মৃত্য়ু হয় তাঁর। তার দু’দিন পর বৃহস্পতিবার জানতে পারেন স্থানীয়রা। বিকট গন্ধ পেয়েই প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। গন্ধের উৎস সন্ধানে তাঁরা স্মৃতির বাড়িতে গেলে বিষয়টি দেখতে পান। মৃত দিদার পাশেই বসেছিল নাতনি। বিষয়টি নজরে আসার পরই খবর দেওয়া হয় কুমারগঞ্জ থানার পুলিশকে।
পুলিশের সহায়তায় স্থানীয়রা দেহটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাতদন্তের পর দেহটি প্রতিবেশীদের হাতেই তুলে দেওয়া হয়৷ তাঁরাই সম্মিলিতভাবে সৎকারের দায়িত্ব নেন।
স্মৃতি ঝাঁর স্বামী রুহিণী ঝাঁয়ের মৃত্যু হয়েছে অনেকদিন আগেই। এক মেয়ে ও তাঁর স্বামীরও মৃত্যু হয়েছে কয়েক বছর আগে। এক ছেলে থাকলেও তার কোন খোঁজ নেই। এদিকে স্মৃতিদেবীর মেয়ের মানসিকভাবে সক্ষম এক মেয়ে রয়েছে। তাকে নিয়েই কোন রকমে দিন গুজরান হত তাঁর। পাড়া-প্রতিবেশীরাই তাঁকে সাহায্য করতেন। কিন্তু বয়সের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন স্মৃতি। নাতনি রানিকে নিয়েই সংসার ছিল তাঁর।
ছোট থেকেই অভাব-অনটন থাকায় নাতনির চিকিৎসা করাতে পারেননি। যার ফলে আর পাঁচটি মেয়ের মত সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল না রানি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওই এলাকায় পচা গন্ধ বেরছিল। স্থানীয়দের নজরে আসতেই বৃদ্ধার বাড়ির দিকে এগিয়ে যান। তখনই নজরে আসে বৃদ্ধার ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আর তার পাশেই বসে আছে তাঁর নাতনি রানি। স্মৃতিদেবীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ।
সবকিছু খতিয়ে দেখার পর পুলিশ মনে করছে, গত মঙ্গলবার বিকেলেই মৃত্যু হয়েছে স্মৃতির। কিন্তু রানি ভেবেছিল তার দিদা ঘুমোচ্ছে। দুদিন ধরে সেও না খেয়েই বসে রয়েছে। অসুস্থ নাবালিকাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন প্রতিবেশীরা।
প্রতিবেশীদের এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রানি। কারণ এতদিন পর্যন্ত সে তার দিদার সঙ্গে থাকত। বর্তমানে তার আর কেউ নেই। আপাতত ওই নাবালিকাকে প্রতিবেশী একজনের বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীরা পুরো বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের তরফে ওই নাবালিকাকে কোন হোমে থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়ত সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে, আশায় প্রতিবেশীরা।