Balurghat: চব্বিশেই বিকল দুই কিডনি, চোখে সরকারি চাকরির স্বপ্ন নিয়ে সাহায্যের আবেদন সুমনের
Balurghat: চকভৃগু আঁখিড়াপাড়ার সুমন দে (২৪)। আর পাঁচজন ছেলে মেয়ের থেকে তাঁর জীবনটা সম্পূর্ণ আলাদা৷ বন্ধু-বান্ধবরা যখন খেলাধুলো, ঘোরাফেরা করছেন, তখন তিনি নিজেকে প্রায় এক ঘরে করে নিয়েছেন। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে হঠাৎ তাঁর জীবনটা বদলাতে শুরু করে। ধরা পড়ে কিডনির অসুখ। প্রবল রক্তচাপ থেকে কিডনি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনই ধরা পড়ে রিপোর্টে। এখন শুধুই অপেক্ষা সাহায্যের।
বালুরঘাট: চোখে অনেক স্বপ্ন। পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করবে৷ বাবা-মা কে নিয়ে সুখে সংসার করবে। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ আদৌ হবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়৷ বালুরঘাট পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন দে’র যে দুটি কিডনি বিকল হয়েছে। খুব দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে পরে ঘটতে পারে বড়সড় বিপদ৷ এমনই বলছেন চিকিৎসকেরা।
ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন পেশায় পান ব্যবসায়ী বাবা সুশান্ত দে। বাবা ও মায়ের কাতর আবেদন, ছেলের জীবন বাঁচাতে কোন সহৃদয়বান এগিয়ে আসুক। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি তাঁদের ছেলেকে একটা কিডনি দান করুক। এই আবেদন নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন অসহায় পরিবার। একইসঙ্গে তাঁরা শীঘ্রই সাহায্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে চলেছেন বলে খবর।
চকভৃগু আঁখিড়াপাড়ার সুমন দে (২৪)। আর পাঁচজন ছেলে মেয়ের থেকে তাঁর জীবনটা সম্পূর্ণ আলাদা৷ বন্ধু-বান্ধবরা যখন খেলাধুলো, ঘোরাফেরা করছেন, তখন তিনি নিজেকে প্রায় এক ঘরে করে নিয়েছেন। বর্তমান জীবনটাই চলছে তাঁর নিয়মের বেড়াজালে। নিয়মের বাইরে এক ফোঁটা যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। বন্ধু-বান্ধবও সেভাবে নেই। ঘরের মধ্যেই আবদ্ধ করে নিয়েছেন নিজেকে৷ সপ্তাহে একদিন রবিবার পাড়াতেই একটু ঘোরাফেরা করেন। বাকিদিন বাড়ির বাইরে বিশেষ দেখা যায় না তাঁকে। বাড়ি ছাড়া বাইরের কোনও খাবার খাওয়ার উপরেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ২০২০ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। বর্তমানে টিউশন পড়িয়ে কিছু টাকা রোজগার করলেও ইচ্ছা সরকারি চাকরির।
২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে হঠাৎ তাঁর জীবনটা বদলাতে শুরু করে। ধরা পড়ে কিডনির অসুখ। প্রবল রক্তচাপ থেকে কিডনি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনই ধরা পড়ে রিপোর্টে। কিডনির সমস্যার কথা জানতে পেরে বালুরঘাটে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয় সুমনের। তবে কিডনির অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে জানতে পেরে কালবিলম্ব না করে ছেলেকে নিয়ে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করতে চলে যান সুশান্ত দে। সেখানে চিকিৎসকরা সব রকম পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানান সুমনের শরীরে দুটি কিডনি বিকল হয়েছে৷ যার ফলে অন্তত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে হবে। তা না হলে চিকিৎসা সম্ভব নয়।
কিন্তু মনের জোর কোনওভাবেই কমাতে রাজি ছিলেন না সুশান্তবাবু। তাই ছেলের একাধিক জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন হয়তো ওষুধের দ্বারাই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু তা হয়নি। দিন দিন কিডনির ক্রিয়েটিনের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বর্তমানে খুব দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন না করা হলে পরে ছেলেকে বাঁচানো দুর্দায় হয়ে পড়বে। ছেলের কিডনির খোঁজে সুশান্তবাবু বালুরঘাটের বিভিন্ন অফিস কাছারিতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে মধ্যবিত্ত সুশান্তবাবুর সব সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে৷ আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি কিডনি দানের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
সুমন দে বলেন, বর্তমানে সবকিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। জলও মেপে খেতে হয়। বাইরের সব ধরনের খাওয়া বারণ৷ প্রায় সারাক্ষণ ঘরেই থাকি। বর্তমানে ক্রিয়েটিন ১৩ পেরিয়ে গেছে৷ ডাক্তারবাবু বলেছেন নতুন কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে৷ আমার জীবন বাঁচাতে কেউ যদি কিডনি দেয় আমি ও আমার পরিবার তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
এ বিষয়ে সুমনের বাবা সুশান্ত দে বলেন, আমার একটাই ছেলে। তার দেড় বছর আগে কিডনির রোগ দেখা দিয়েছে৷ বহু চিকিৎসা করিয়েছি। কোনও কিছু হয়নি। কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে ছেলের শরীরে৷ তাহলে পরে সে নতুন জীবন ফিরে পাবে৷ কোনও সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি ছেলেকে একটা কিডনি দান করে তাহলে আমার ছেলেটা নতুন জীবন পাবে। পানের দোকান করে কোনওরকমে সংসার চলে। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সঞ্চয়ের সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলেও উপকৃত হতাম।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সুমনের মা শর্মিষ্ঠা দে বলেন, একটাই ছেলে। ওর দুটো কিডনি খারাপ হয়ে গেছে৷ আমার ছেলেকে বাঁচাতে অন্তত একটা কিডনি কেউ দান করলে আমরা সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।