Balurghat: নেশামুক্তি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক মৃত্যু যুবকের

Balurghat: এনিয়ে পরিবারের তরফ থেকে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের লোকেদের সঙ্গে কথা বলা হয়। যাতে তারা কিছু টাকা কম নেয় এবং তাদের কিছু সময় দেয়।

Balurghat: নেশামুক্তি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক মৃত্যু যুবকের
মৃতের ভাই ও বাবা (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 02, 2023 | 11:15 AM

বালুরঘাট: নেশামুক্তি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক মৃত্যু। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরে। মৃতের নাম শুভজিৎ সরকার (৩০)।বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ থানার বিননগর এলাকায়৷ পেশায় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী। গত সোমবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় ওই যুবকের।খবর পেয়ে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ বুধবার দেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠায় ৷ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন পরিবার। এদিকে অভিযোগ পেলে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে বলে জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, রায়গঞ্জের শুভজিৎ পেশায় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি। দীর্ঘদিন ধরেই ছেলে নেশার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল। অনেক কিছু করেও নেশা ছাড়াতে পারেননি পরিবার। তাই মাস ছয়েক আগে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর কালিতলা এলাকার একটি নেশা মুক্তি কেন্দ্র দিয়েছিলেন ছেলেকে। যাতে ছেলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। বিগত কয়েক মাসে অনেকটা সুস্থ হয়েও উঠেছিল শুভজিৎ সরকার (৩০)।

সপ্তাহ খানেক আগে প্রথমে শুভজিতের পরিবারকে জানানো হয় যে সে অসুস্থ। পরিবারের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের তরফ থেকে জানানো হয় প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করানো হয়েছে শুভজিতের। এর জন্য খরচ হয়েছে। তারা যদি শুভজিৎকে বাইরে চিকিৎসা করাতে চায় তাহলে সব মিলিয়ে ২৭ হাজার টাকা দিতে হবে। তা না হলে শুভজিৎকে ছাড়বেন না তাঁরা৷

এনিয়ে পরিবারের তরফ থেকে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের লোকেদের সঙ্গে কথা বলা হয়। যাতে তারা কিছু টাকা কম নেয় এবং তাদের কিছু সময় দেয়। কিন্তু নেশা মুক্তি কেন্দ্রের তরফ থেকে সাফ জানানো হয় টাকা না দিলে শুভজিতকে ছাড়া যাবে না। এরই মধ্যে গত সোমবার শুভজিৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকালে পরিবারকে জানানো হয় বিষয়টি। ওই দিন শুভজিৎকে ডাক্তার দেখানো হয়। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরা টাকা নিয়ে গঙ্গারামপুরে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় ওইদিন বিকেলে জানানো হয় শুভজিৎ বেশি অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর কিছু বাদে ফের পরিবারকে ফোন করে জানানো হয় তাঁদের ছেলে মারা গেছে।

ওই দিন গঙ্গারামপুর সুপার স্প হাসপাতলে আসেন পরিবারের সদস্যরা। এসে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, তাদের ছেলেকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। অথচ নেশা মুক্তি কেন্দ্রের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল হাসপাতালে মারা গেছে শুভজিৎ। এই বিষয়টি জানাজানি হতেই ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন মৃতের পরিবার। এদিকে এমন অভিযোগ পেতে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ গতকাল মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাননি। বুধবার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা সদরে পাঠানো হয়। যদিও এই নিয়ে অভিযোগ ওঠা নেশা মুক্তি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তরফে কারোর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে মৃত যুবকের বাবা অশোক সরকার জানান যে, তাঁর ছেলেকে প্রায় ছয় মাস আগে গঙ্গারামপুর কালিতলা এলাকার একটি নেশা মুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিলেন। প্রতি মাসেই ওই কেন্দ্রে আসতেন। কিন্তু ছেলেকে সব কথা বলতে দেওয়া হত না। ভিতরের কোনও খবর দিলে পরে তাঁর উপর অত্যাচার চালানো হত। গত একসপ্তাহ আগে প্রথম জানানো হয় তার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ছেলে অসুস্থ থাকলেও সেভাবে কোনো রকম চিকিৎসা করা হয়নি। এদিকে বকেয়া টাকা জন্য চাপ দিতে থাকে। ছেলের চিকিৎসা করায়নি ঠিক মত। তার জন্য ছেলের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, এনিয়ে কোনও অভিযোগ এখনও পাননি। অভিযোগ পেলে পরে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে বালুরঘাট পরানপুর এলাকার একটি নেশা মুক্তি কেন্দ্রে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করা হয়। নেশা মুক্তি কেন্দ্রের যারা কর্মী তারা খুন করেন ওই ব্যক্তিকে৷ প্রথমে ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের সামনে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। স্থানীয়দের নজর এড়াতে তড়িঘড়ি নেশা মুক্তি কেন্দ্রের কর্মীরা ওই ব্যক্তিকে বাইকে করে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর ফের একবার এই ঘটনা সামনে এসেছে ৷ অভিযোগ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে চলার নেশা মুক্তি কেন্দ্রগুলোর কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই।