Municipal Elections 2022 : বিজেপি-তৃণমূলকে উড়িয়ে ‘হামরো’র জয়, সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে সমীকরণ?

Hamro Party : দার্জিলিংয়ে জয় পেল না বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস। আঞ্চলিক দলেই ভরসা রাখল পাহাড়বাসী। দার্জিলিং পুরসভায় পুরবোর্ড গঠন করতে চলেছে তিন মাস আগে উঠে আসা হামরো পার্টি।

Municipal Elections 2022 : বিজেপি-তৃণমূলকে উড়িয়ে 'হামরো'র জয়, সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে সমীকরণ?
গ্রাফিক্স : টিভি৯ বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 02, 2022 | 5:36 PM

দার্জিলিং : উত্তরবঙ্গে বরাবরই বিজেপির দৌরাত্ম্য। অন্তত গত কয়েক লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখলে বোঝা যায় পাহাড়ে বিজেপির জোর কতখানি। গত বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি উত্তরবঙ্গে ভাল ফলাফল করেছে। তৃণমূলও গত বিধানসভা নির্বাচন থেকে উত্তরবঙ্গে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছে। গতবছর বিধানসভা ভোটের সময় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন। তবে বিধানসভা ভোটে তার কোনও ফল পায়নি তৃণমূল কংগ্রেস। তবে শিলিগুড়ি পুরনিগমের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বাম দুর্গ ভেঙে খাতা খোলে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারল না তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপির কেউই। পাহাড়ের মানুষ বেছে নিলেন একটি নতুন আঞ্চলিক দলকে। মাস কয়েক আগে সংগঠিত হামরো পার্টির উপরই ভরসা রাখল দার্জিলিঙের মানুষ।

কারা এই হামরো পার্টি?

মাত্র তিন মাস আগে আত্মপ্রকাশ করে পাহাড়ের এই আঞ্চলিক দল (Hamro Party)। দার্জিলিং গিয়ে গ্লেনারিস যাননি এরকম খুব কম মানুষই আছেন। গ্লেনারিসের প্রসঙ্গ আসার কারণ এই হামরো পার্টি। হামরো পার্টির প্রতিষ্ঠাতাই হলেন গ্লেনারিসের কর্তা অজয় এডওয়ার্ড। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও রাজনৈতিক দিক থেকে বেশ সক্রিয় তিনি। পাহাড়ে শান্তি স্থাপন করাই তাঁর দলের মূল উদ্দেশ্য। পুরসভা নির্বাচনে জয় পেয়ে সেই উদ্দেশ্য সফলের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি। তাঁর ওয়ার্ডে তিনি পরাজিত হলেও জয় পেয়েছে তাঁর দল। সেই দলেই ভরসা রেখে এগিয়ে যাবেন তিনি। দার্জিলিং পুরসভায় জয় পেয়ে তিনি জানিয়েছেন, এইবার ভয়মুক্ত থাকতে পারবে পাহাড়ের বাসিন্দারা। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, মেয়রের চেয়ার তাঁর লক্ষ্য ছিল না। তাই তাঁর ওয়ার্ড ২২ নম্বরের পরাজয় তিনি সাবলীলভাবে মেনে নিয়েছেন। খোলা মনে নিজের হার স্বীকার করার পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন পাহাড়ে আর একদিনও বনধ হবে না। এইখানে বলে দিতে হবে না, পাহাড়ে আগে কত ঘন ঘন বনধ হত। এবং তার জেরে বিপর্যস্ত হত সাধারণ মানুষের জনজীবন।

কীভাবে উঠে এসেছে হামরো পার্টি?

হামরো পার্টির নেতার সঙ্গে ইতিমধ্যেই পরিচয় হয়ে গিয়েছে। এই দল কীভাবে আত্মপ্রকাশ করল? কবে থেকেই বা এই দলের পথ চলা শুরু? পেশায় রেস্তোরাঁর মালিক হলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হামারো পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অজয় এডওয়ার্ড বেশ অনেকদিন ধরেই। হামরো পার্টির আঞ্চলিক দল হিসেবে পথ চলা শুরু মাত্র তিন মাস আগে। নতুন দল শুরু করার আগে হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ড জিএনএলএফ সভাপতি মন ঘিষিংয়ের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন৷ সকলেরই জানা, বিভিন্ন ইস্যুতে পাহাড় বারবার উত্তপ্ত হয়েছে। পাহাড়ের মানুষের জনজীবন ব্যাহত হয়েছে রাজনীতির দোলাচলে পড়ে। পাহাড়ে এইসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যেই মাস পাঁচেক আগে দিল্লি গিয়েছিলেন অজয় এডওয়ার্ড। সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। কিন্তু এই সফরকে ঘিরে জিএনএলএফ নেতা মন ঘিসিংয়ের সঙ্গে তাঁর মন কষাকষি শুরু হয়।

জিএনএলএফের (GNLF) দার্জিলিং শাখার প্রাক্তন সভাপতিও ছিলেন অজয় এডওয়ার্ড। একুশের বিধানসভা ভোটে প্রার্থীপদ নিয়ে বিরোধ বাধে দলের সঙ্গে। বিধানসভা ভোটে দার্জিলিং আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন অজয় অনুগামীরা। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে ওই কেন্দ্র থেকে নীরজ জিম্বাকে প্রার্থী করেছিলেন ঘিসিং। এরপরই ফাটল চওড়া হয়। একদা ঘিসিং ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত থাকলেও দূরত্ব বাড়তে থাকে ঘিসিং এবং এডওয়ার্ডের মধ্যে। বিধানসভা নির্বাচনের পরই দল ছাড়েন এডওয়ার্ড। তাঁর দল ছাড়ার কথা প্রকাশ্য়ে আসার পর তাঁর অনুগামীরাও একে একে দলত্যাগ করেন।

পাহাড়বাসীর সমর্থন নিয়ে দল গঠন

জিএনএলএফ থেকে বেরিয়ে আসার পর টানা তিনমাস তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান অজয় এডওয়ার্ড। এইভাবে তিনি পাহাড়ের মানুষের সমস্যা, জটিলতা, অভাব এবং চাহিদা জানার চেষ্টা করেন। নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে পাহাড়ের অসহায়, দুঃস্থদের সাহায্য়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। সেইসময়ই তিনি নতুন দল গড়ার কথা ঘোষণা করেন গ্লেনারিস কর্তা। দলের মূল উদ্দেশ্য হবে পাহাড়বাসীর পাশে দাঁড়ানো। তিনি জানিয়েছিলেন, পাহাড়বাসীর সমর্থন নিয়েই দল গড়া হবে।

হামরো পার্টির নির্বাচনী প্রতীক কী?

পাহাড়বাসীর হিতের জন্য দল গঠন করেন গ্লেনারিস কর্তা অজয় এডওয়ার্ড। তাই হামরো পার্টির দলের নাম নির্বাচনও ছেড়ে দেন পাহাড়বাসীর উপর। দলের নাম ঠিক করার সময় তালিকায় ছিল ২০০ এর বেশি নাম। এই ২০০ এর মধ্যে ৪ টি নাম বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেই চারটি নামের মধ্যে ছিল জনশক্তি, জনতা আন্দোলন পার্টি, জন আওয়াজ এবং হামরো পার্টি। সোশ্য়াল মিডিয়াতে এই চারটি নামে ভোটাভুটি হয়। তারপর হামরো পার্টি নামটিই চূড়ান্ত হয় পাহাড়বাসীর ভোটে। দলের পতাকার রং সাদা। তার মধ্য়ে নীল রঙের একটি বৃত্ত। তাতে খুকরির প্রতীক এবং শান্তির প্রতীক উড়ন্ত পাখি। আপাতত এককভাবেই নির্বাচন লড়ছে হামরো পার্টি।

মাত্র তিন মাস আগে অজয় এডওয়ার্ডের নেতৃত্বে গঠিত হয় হামরো পার্টি (Hamro Party)। বিজেপি, তৃণমূল, গোর্খার, জিএনএলএফ মত তাবড়-তাবড় দলগুলিকে পিছনে ফেলে দার্জিলিং পুরসভা দখল করল অজয় (Ajay Edward) ওয়ার্ডের নেতৃত্বাধীন এই দল। যেখানে পাহাড়ে সাংসদ,বিধায়ক দুই বিজেপির সেখানে পুরভোটে বিজেপি-জিএনএলএফ জোট ধরাশায়ী হয়েছে। তাহলে পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে হামরো পার্টির ভূমিকার দিকে তাকিয়ে পাহাড়বাসী।

আরও পড়ুন : Municipal ELection Counting 2022: নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতেই শুধু অশান্তি, মারপিটে জখম ৫