ICMR Guideline : ‘মানা সম্ভব নয়’, কোভিড রোধে ICMR এর গাইডলাইন নিয়ে বিভ্রান্তি চিকিৎসক মহলে

Corona Virus : ICMR এর সম্প্রতি প্রকাশিত গাইডলাইন ঘিরে বিভ্রান্তি। চিকিৎসকদের দাবি, অস্ত্রোপচারের আগে এই গাইডলাইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা ঝুঁকিপূর্ণ।

ICMR Guideline : 'মানা সম্ভব নয়', কোভিড রোধে ICMR এর গাইডলাইন নিয়ে বিভ্রান্তি চিকিৎসক মহলে
নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 13, 2022 | 10:31 PM

কলকাতা : দেশে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনার এই তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে স্বাস্থ্য কর্মীদের উপর। করোনার চিকিৎসা করার ভার যাঁদের কাঁধে তাঁদের শরীরেই জাঁকিয়ে বসছে করোনা। ফলে বেহাল দশা স্বাস্থ্য পরিষেবার। এরকম অবস্থায় সম্প্রতি ICMR একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। এই গাইডলাইনে বলা হয়েছে কোনও করোনা আক্রান্ত রোগী যদি উপসর্গহীন হন তাহলে তাঁর সার্জারি করানোর আগে করোনা পরীক্ষা না করালেও হবে। এই ধরনের গাইডলাইনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে চিকিৎসা মহলে। এই সার্জারি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাফ বক্তব্য, কোভিডের কারণে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কমেছে। এর উপরে সংক্রমণের ঝুঁকি বাঁচিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হলে ICMR এর পরামর্শ মানা সম্ভব হচ্ছে না‌। বিভ্রান্তি দূর করতে অবিলম্বে স্বাস্থ্য ভবনের এ বিষয়ে নতুন নির্দেশিকা আনা উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

ICMR প্রকাশিত গাইডলাইনে বিভ্রান্ত চিকিৎসক মহল। কোনও চিকিৎসক বলেই দিচ্ছেন, এই গাইডলাইন মানা সম্ভব নয়। যেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ সেখানে এই ধরনের গাইডলাইন চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসক এবং অন্যান্য সচেতন নাগরিকদের। প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে উপসর্গহীন বলে কি করোনা ছয়ায় না! কারণ আমরা এর আগেও দেখেছি উপসর্গহীন করোনা রোগীর থেকে করোনা কিন্তু বিস্তার করে। এম আর বাঙুরের চিকিৎসক ও জেনারেল সার্জেন মাখনলাল সাহা বলেছেন ,”সার্জারির সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। করোনার এই বাড়বাড়ন্তে আমরা স্বাস্থ্য কর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছি। পজিটিভ হয়ে তো হাসপাতালে এসে সার্জারি করা সম্ভব নয়। সেরকম করোনা পজিটিভ রোগীরও সার্জারি করা সম্ভব হয় না। কিছুদিন আগে বাঙুর হাসপাতালের সুপার বলে দিয়েছিলেন রাত ৯ টা থেকে পরের দিন সকাল ৭ টা পর্যন্ত কোনও এমার্জেন্সি সার্জারি বা পূর্বপরিকল্পিত সার্জারি আর কোনও এমারজেন্সি অবস্টেট্রিক পরিষেবা দেওয়া যাবে না। আমাদের সেই পরিকাঠামো নেই। কারণ আমাদের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর্মী ও সার্জেন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। ” তিনি বলেছেন এইরকম পরিস্থিতিতে ICMR প্রকাশিত গাইডলাইন মেনে চললে তার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

চিকিৎসক ও অঙ্কোসার্জন সৌরভ দত্ত বলেন, “নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি। আমার নিজের কোভিড হয়েছিল। আমার এই সপ্তাহে ৫ জন রোগীর বড় অপারেশন ছিল। ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই করোনা আক্রান্ত। তাই একজনের সার্জারি করেছি। বাকি ৪ জন রোগীর বড় সার্জারি ছিল। কিন্তু তাঁদের সার্জারি বাতিল হয়েছে। এই হাসপাতালে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সার্জারির হার কমেছে। তবে আমার রোগীর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি। প্রায় ৭০ শতাংশ বলা যেতে পারে।”

গাইডলাইন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “আমি গাইডলাইনটা দেখেছি। আমার মনে হয় এই গাইডলাইন হয়তো আরও একমাস দেখে দিলে ভালো হত। কারণ ওমিক্রন সম্প্রতি ভারতে এসেছে। এর কতটা পরবর্তী প্রভাব থাকবে তা আমরা জানি না। এই অবস্থায় আমার যাঁরা ক্যান্সারের রোগী, তাঁদের করোনা পরীক্ষা না করিয়ে অপারেশন টেবিলে নেওয়া একটু বেশিই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।” তিনি আরও বলেন,” এক মাস হয়ে গেলে হয়তো ওমিক্রনের ছবিটা আরও কিছু পরিষ্কার হবে। তখন এই ধরনের নির্দেশ হয়ত কার্যকরী হতে পারে। তখন হয়ত জানা যেতে পারে যে ওমিক্রন নিয়ে অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই অবস্থায় এমার্জেন্সি সার্জারি করা যেতে পারে। এরকম কোনও তথ্য পেলে আমরা এই উপায় অবলম্বন করতে পারি। তবে এই মুহুর্তে একেবারে নয়।” তিনি বলেন, “এই তৃতীয় ঢেউয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ড্রাগের ব্য়বহার নিয়ে বেশ স্ট্রং গাইডলাইন দিয়েছে। এবং তাতে সবাই খুশি। আমার মনে হয় উপসর্গহীন রোগীদের পরীক্ষা করানো হবে কিনা এবং যদি পজিটিভ আসে তাহলে তার কতদিনের মাথায় সার্জারি করা যাবে- এই সংক্রান্ত রাজ্য় সরকারের তরফে একটা গাইডলাইন খুব তাড়াতাড়ি আসা দরকার।” ICMR এর নির্দেশিকা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অর্পণ চক্রবর্তী, বলেন,”এই নির্দেশিকা নিয়ে আমরা নিজেরাই বিভ্রান্ত। এই অতিমারির মধ্যে এই ধরনের নির্দেশিকা পালন প্র্যাকটিকালি সম্ভব নয়। এই নির্দেশিকা কিন্তু স্বাস্থ্য় পরিষেবাকে আরও সমস্যায় ফেলে দেবে।”

আরও পড়ুন : Remdesivir Expired: ৯ লক্ষ টাকার রেমডেজিভির পড়ে পড়ে নষ্ট শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে, দায় কার?