Hooghly: প্রয়াত সাত বারের সিপিএম সাংসদ, প্রবীণ নেতার মৃত্যুতে অভিভাবকহীন হুগলি জেলা নেতৃত্ব
Roopchand Paul: বিগত প্রায় মাস ছয়েক ধরে বয়সজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল প্রবীণ এই রাজনীতিকের। কিন্তু সোমবার রাতে শারীরিক অসুস্থতা আরও বাড়ে তাঁর।
হুগলি : প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক রূপচাঁদ পাল। হুগলি থেকে সাত বারের সাংসদ ছিলেন তিনি। আদ্যোপ্রান্ত বাম ঘরানার রাজনীতিক ছিলেন তিনি। গোটা রাজনীতিক জীবন কাজ করে গিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ সদস্য় হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্য়ায় ভুগছিলেন তিনি। মঙ্গলবার কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্য়ু হয় তাঁর। মৃত্য়ুকালে বর্ষীয়ান রাজনীতিকের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তাঁর মৃত্যুতে রাজ্য রাজনীতিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। জানা গিয়েছে, বিগত প্রায় মাস ছয়েক ধরে বয়সজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল প্রবীণ এই রাজনীতিকের। কিন্তু সোমবার রাতে শারীরিক অসুস্থতা আরও বাড়ে তাঁর। স্নায়ুরোগ সংক্রান্ত সমস্য়া দেখা যায়। দেরি না করে মঙ্গলবার ভোর রাতেই তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করানো হয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হল না। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর।
বাম রাজনীতিতে প্রয়াত রূপচাঁদ পালের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ১৯৫৮ সালে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন তিনি। পরবর্তী সময়ে সিপিআইএম জেলা কমিটির সদস্য হয়েছিলেন তিনি। জেলা সম্পাদক মণ্ডলীরও সদস্য ছিলেন তিনি। বাম শ্রমিক সংগঠন সিআইটিইউ-এর জন্য তাঁর অবদানও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সিআইটিইউ জেলা কমিটির সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই নয়, এর পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। রাজনীতির আঙিনার পাশাপাশি অধ্যাপনার কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। প্রথমে মগড়ায় গোপাল ব্যানার্জি কলেজে এবং পরবর্তী সময়ে নৈহাটির ঋষি বঙ্কিম কলেজের অধ্যাপক ছিলেন তিনি। বাংলা ভাষায় তাঁর ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য।
পর অবশ্য মানুষের সেবায় নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করার জন্য অধ্যাপনা ছেড়ে দেন তিনি। দলের সর্বক্ষণের কর্মী হন। ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলি থেকে জয়ী হয়ে প্রথমবারের জন্য সাংসদ হন তিনি। পরে ১৯৮৪ সলে অবশ্য কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দুমতী ভট্টাচার্যের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর হুগলিকে কার্যত নিজের গড় তৈরি করে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বার সাংসদ হন তিনি। পরে ২০০৯ সাল তৃণমূল প্রর্তী রত্ন দ নাগের কাছে পরাজিত হন তিনি। তারপর আর নির্বাচনে লড়েননি। প্রসঙ্গত, সাংসদ থাকাকালীন হুগলির অন্যতম দাপুটে সিপিএম নেতা প্রয়াত অনিল বসুর সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বর কথাও শোনা যায়। সেই নিয়ে এককালে বিস্তর চর্চাও হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে।
প্রবীণ রাজনীতিকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য় তথা হুগলি জেলা সিপিএম-এর সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, “এটা আমাদের বিশাল বড় এক ক্ষতি। এই ক্ষতিপূরণ সহজে হবে না। তিনি শুধুমাত্র একজন দক্ষ সাংসদ বা সংগঠক… এমন ব্যাপার নয়, তিনি হুগলি জেলায় দলের অন্যতম অভিভাবক ছিলেন। তিনি শারীরিকভাবে যতদিন সুস্থ ছিলেন, কাজ করেছেন। যখন অসুস্থ হয় পড়েছিলেন, তখনও প্রতিনিয়ত পার্টির কাজের খোঁজখবর নিতেন। বিভিন্ন সময়ে পার্টির কাজ পরামর্শ দিয়েছেন। এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
বর্ষীয়ান নেতার স্মৃতিচারণায় মহম্মদ সেলিম বলেন, “উনি পার্টির নেতার পাশাপাশি শ্রমিক, কৃষক, মেহনতী মানুষেরও নেতা ছিলেন। আমি যখন তরুন সাংসদ হিসেবে ছিলাম, তখন ওনাকে আমি পেয়েছি। এখনকার মতো দাপাদাপি করা নেতা নন, ক্ষুরধার বক্তব্য। ওনার ভাষণ সংসদে একটা ইতিহাস। সংসদে ওনার বক্তব্য যা সংরক্ষিত আছে, তা এখনকার সাংসদদের কাছে শেখার বিষয়। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন ভাল শিক্ষক। সমাজের পাঠদানের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার জগতে বহু ছাত্র ছাত্রীদের সমাজের উপযুক্ত মানুষ তৈরি করেছেন।”