উঠোনজুড়ে চাপচাপ রক্ত, নিথর হয়ে বসে বাড়ি মালিক! শালিমারে ব্যবসায়ীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য

Death Mystery: শিবপুরের শালিমার কোল ডিপোয় নিজের বাড়িতেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল এক পরিবহণ ব্যবসায়ীর। একতলা বাড়ির ঘরের সামনের উঠোন থেকেই মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হল বুধবার।

উঠোনজুড়ে চাপচাপ রক্ত, নিথর হয়ে বসে বাড়ি মালিক! শালিমারে ব্যবসায়ীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য
প্রতীকী চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 15, 2021 | 11:20 PM

হাওড়া: শিবপুরের শালিমার কোল ডিপোয় নিজের বাড়িতেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল এক পরিবহণ ব্যবসায়ীর। একতলা বাড়ির ঘরের সামনের উঠোন থেকেই মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হল বুধবার। অনিল মিশ্র (৫৭) নামে ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের দাবি, বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে এসে বাড়িতে রাখা নিজের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তের পর শিবপুর থানার পুলিশও তেমনটাই মনে করছে। কিন্তু শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল ওই ব্যবসায়ী ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে কেন আত্মহত্যা করতে গেলেন সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। মৃত্যুর পিছনে অন্য কারণগুলিও খুঁটিয়ে দেখছেন তাঁরা।

শালিমারে কোল ডিপোর ১৬ নম্বর পিটিআর সাইডিংয়ে একান্নবর্তী বর্ধিষ্ণু পরিবারের সদস্য অনিল মিশ্র। এদিন সকালে বাড়ির মহিলারা যখন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তখন হঠাৎই বাড়ির বাইরে উঠোনে একটি গুলির শব্দ পান তাঁরা। বাড়ির সদস্যরা ছুটে এসে দেখেন, মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উঠোনে পড়ে রয়েছেন অনিলবাবু। মৃতদেহের পাশেই পড়ে রয়েছে তাঁর লাইসেন্স প্রাপ্ত বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রটি। তাঁরা দেখেন মাথার ডানদিকে কপালের কাছে গুলি লেগে গভীর ক্ষত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র ঘর থেকে বার করে বাইরে বেরিয়ে নিজে গুলিবিদ্ধ হলেন অথচ বাড়ির কেউ তা টের পেলেন না কেন তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

এদিকে ঘটনার পরই ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত হয়ে শিবপুর থানায় খবর দেন। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল কে কান্নান জানান, প্রাথমিক তদন্তের পর মনে হচ্ছে ব্যবসায় মন্দা চলায় মানসিক অবসাদ থেকেই আত্মঘাতী হয়েছেন পরিবহণ ব্যবসায়ী। তাঁর লাইসেন্স প্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

এদিন ঘটনার পর বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে মৃতের খুড়তুতো ভাই গান্ধী মিশ্র জানালেন, অনিলবাবুর বাবা ব্রজ কিশোর মিশ্র তিন বছর আগে মারা যাওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। তার উপর শালিমারে পারিবারিক পরিবহণ ব্যবসাও করোনা আবহে ঠিকমতো চলছিল না। শালিমারে তাঁদের ২০টি পণ্যবাহী লরি রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার হয়ে পণ্য পরিবহণ করে লরিগুলি। কিন্তু কোভিড শুরু হওয়ার পর থেকেই শালিমারের সেই লরিগুলি ঠিকমতো না চলায় ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, ব্যবসা মন্দা চলায় আর্থিক স্বচ্ছলতা কমে যায়। সেই থেকেই মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। আর এই অবসাদেই আত্মহননের পথ বেছে নেন ব্যবসায়ী। স্বচ্ছল বর্ধিষ্ণু পরিবারে অনিল মিশ্ররা চার ভাই। তাঁরা সবাই পরিবার নিয়ে ওই একই বাড়িতেই থাকেন। মৃত অনিলবাবুর স্ত্রী সরস্বতী মিশ্র গৃহবধূ। ব্যবসায়ীর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে আদিত্য মিশ্র কানাডায় চাকরি করেন। এক মেয়ে রিচা মিশ্র বিহারের পাটনার চিকিৎসক। অপর মেয়ে জ্যোতি মিশ্র বর্তমানে কলকাতায় স্নাতকোত্তরের ছাত্র। এদিন মৃত ব্যবসায়ীর বাড়িতে দাঁড়িয়ে তাঁর বন্ধু একে সিং জানালেন, ইদানিং থাইরয়েড ও সুগারে কাবু হয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনিল। অধিকাংশ সময়ই বসে, শুয়ে কাটাতেন। তার উপর ব্যবসা মন্দা চলায় মানসিক অবসাদও ছিলো। সেই অবসাদ থেকেই আত্মহনন বলে মনে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বিজেপি কর্মীকে ভ্যাকসিন না দেওয়ায় নিজের কর্মীকে শো-কজ অভিষেকের