ফুঁসছে মাল নদী, চোখের নিমেষে হড়পা বানে জলের তলায় ১১ টি বাড়ি!

Bengal Flood: বৃহস্পতিবার রাত থেকে একনাগাড়ে বৃষ্টির জেরে মাল শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জল জমতে শুরু করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদী তখন ফুলে-ফেঁপে উঠছে।

ফুঁসছে মাল নদী, চোখের নিমেষে হড়পা বানে জলের তলায় ১১ টি বাড়ি!
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 27, 2021 | 3:50 PM

জলপাইগুড়ি: বৃ্ষ্টি হচ্ছিল একটানা। বেড়েছিল নদীর জলোচ্ছ্বাসও। কিন্তু পরিণতি যে এমন ভয়াবহ হবে তা আন্দাজ করতে পারেননি গ্রামবাসীরা। রাত বাড়তেই বাড়তে শুরু করে নদীর জলস্তর। চোখের নিমেষে হড়পা বানে (Harappan Ban) জলের তলায় শেষ সম্বলটাও! নদীবাঁধে কোনও ক্রমে আশ্রয় নিয়েছেন সকলে। কিন্তু, এরপর? কতদিন চলবে এভাবে? আতঙ্ক, অনাস্থা আর দুশ্চিন্তার কালো মেঘ বিমল রজনীদের কপালজুড়ে।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে একনাগাড়ে বৃষ্টির জেরে মাল শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জল জমতে শুরু করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদী তখন ফুলে-ফেঁপে উঠছে। রাত দশটার কিছু পরে আচমকা বেড়ে যায় জলোচ্ছ্বাস। হড়পা বানে(Harappan Ban) ঘরের দুয়ারে থাবা বসায় নদী। ততক্ষণে ৬টি ঘর জলের তলায় চলে গিয়েছে।জল আরও বাড়তে দেখে বাকি গ্রামবাসীরাও এগোতে থাকেন নদীবাঁধের দিকে। ঘরের মায়া ত্য়াগ করেই।

মাল শহরের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া আপাত শান্ত এই নদী আচমকা এমন ভয়াবহ হয়ে উঠবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কেউ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি নদীর গতিমুখ পরিবর্তন হওয়ায় এই বিপত্তি। সাধারণত বর্ষাকালে বরাবরই সমস্ত পাহাড়ি নদীতে জল বাড়তে থাকে। তাই প্রথম থেকেই চলে বিশেষ প্রস্তুতি। কিন্তু, প্রশাসনের তরফ থেকে কখনওই কোনও পদক্ষেপ করা হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফল ভোগেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল রাত থেকে এখনও পর্যন্ত জলের তলায় ১১টি বাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১৫ টি।

মাল শহরে মূলত শ্রমিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের বসবাস। করোনায় তাঁদের রুজি-রোজগার বেশ অনিশ্চিত। এরমধ্যে প্লাবন পরিস্থিতি যেন বিপদের দোসর। বিমল, সজনী, শঙ্কর, রফিকুলদের বাড়ি এখন জলের তলায়। বিমল বলেন, “আমরা দিন আনি, দিন খাই। আমাদের এত রোজগার কোথায যে বন্যা হলেই বিকল্প খুঁজে পাব। রীতিমতো যুদ্ধ করে বেঁচে রয়েছি। চোখের সামনে সব জলের তলায় চলে যাব। নদীবাঁধে আর কতদিন থাকব! কবে সব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে জানি না।” এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মণিলা রায় বলেন, “এখনও আমাদের বাড়ি জলের তলায় যায়নি। কিন্তু যেভাবে জল বাড়ছে  তেমনটা হতে আর কতক্ষণ!” বিপদের সুর ঘনিয়েছে অন্যান্যদের মধ্য়েও। সকলেই জানিয়েছেন, আরও বৃষ্টি হলে নদী গোটা এলাকা গিলে খাবে।

ঘটনায়, মাল পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য কৌশিক দাস বলেন, “আমরা এলাকাতে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। সকলকে নদীবাঁধের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্য়বস্থা করা হচ্ছে। কিছু অস্থায়ী শিবির তৈরি করা হচ্ছে। দুর্গতদের ত্রাণ ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই ব্যবস্থার যাতে নিষ্পত্তি হয় পুরসভার পক্ষ থেকে সেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ”

শুধু, জলপাইগুড়ির মাল নয়, বানভাসি অবস্থা কোচবিহারেও। সেখানকার, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফাঁসিরঘাট, গোলবাগান, মসজিদপাড়া, পাটাকুড়া এবং রানিবাগান এলাকার প্রায় ২০০টি পরিবার সহায়-সম্বলহীন। তোর্সার ভাঙনে জলের তলায় গোটা গ্রাম। আপাতত নদীবাঁধেই আশ্রয় নিয়ে দিন কাটছে তাঁদের। গত দু’দিনে তোর্সা খানিকটা এগিয়ে এসেছে বাঁধের কাছাকাছি। ফলে শঙ্কাও বা়ড়ছে। এই সঙ্কটে, কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘অনেকে নদীবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে ভবিষ্যতে কোচবিহার শহর বিপদে পড়ে যাবে। আমি সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনের কাছেও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছি। এছাড়াও বেশ কয়েকটি অস্থায়ী শিবির তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে দুর্গতরা সেখানেই আপাতকালীন আশ্রয় পেতে পারেন।” আরও পড়ুন: দুয়ারে জল! নৌকায় পরিষেবা দিতে আসছে সরকার