Jalpaiguri National Highway: ফোর লেন জাতীয় সড়ক তৈরির জটিলতা কাটল, জমি জরিপের কাজ শেষ পর্যায়ে

Jalpaiguri National Highway: উল্লেখ্য, ১৩ বছর আগে ২০০৮ সালে প্রথম ধূপগুড়ি শহরকে বাইপাস করে মহাসড়ক করার জন্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন।

Jalpaiguri National Highway: ফোর লেন জাতীয় সড়ক তৈরির জটিলতা কাটল, জমি জরিপের কাজ শেষ পর্যায়ে
জাতীয় সড়কের জটিলতা কাটল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 05, 2022 | 12:36 PM

জলপাইগুড়ি: ১৩ বছর পর মহাসড়ক তৈরির জমিজট কাটল ধূপগুড়িতে। রাজ্যের সব জায়গায় জমি জরিপের কাজ সম্পন্ন হলেও ধূপগুড়িতে এসে থমকে যায় ফোর লেন জাতীয় সড়ক তৈরির কাজ নানান জটিলতার কারণে। উল্লেখ্য, ১৩ বছর আগে ২০০৮ সালে প্রথম ধূপগুড়ি শহরকে বাইপাস করে মহাসড়ক করার জন্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন।

জমির মাপজোক করতে গিয়েই বারংবার বাধার মুখে পড়েন প্রশাসনের আধিকারিক থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। জমির মালিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ , রাস্তা অবরোধ থেকে শুরু করে আধিকারিকদের ঝাঁটা নিয়ে তাড়া পর্যন্ত হয়। দেশের অন্যান্য জায়গায় ফোর লেন মহাসড়ক তৈরির কাজ সম্পন্ন হলেও ধূপগুড়িতে এসে জমি জরিপের কাজ আটকে যায়। যার ফলে হস্তক্ষেপ করতে হয় স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি দায়িত্ব দেন তৎকালীন রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেবকে। সেই দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে জমির মালিক এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের মধ্যে টানাপোড়েনের পর অবশেষে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যায়ে জমি জরিপের কাজ সম্পন্ন হল সুষ্ঠভাবে।

১৩ বছর যাবৎ চলছিল জমি জরিপের মহাকর্মযজ্ঞ। শেষ ধাপে গত শনিবার থেকে শুরু হয়ে এদিন পর্যন্ত শেষ পর্যায়ের মোট আড়াই কিলোমিটার জরিপ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাইপাস নির্মাণে আর বাধা রইল না। শেষ পর্যায়ের টানা তিন দিনে বারোঘড়িয়া মৌজার দেড় কিলোমিটারের পাশাপাশি মধ্য বোড়াগাড়িতে দুশো মিটার এবং পুর এলাকায় রেল লাইন পাড় করে উত্তর বোড়াগাড়ি হয়ে খলাইগ্রাম মৌজায় জাতীয় সড়কের সঙ্গে ঘেঁষে পর্যন্ত দুই ধাপে পাঁচশো ও তিনশো মিটারের চূড়ান্ত জরিপ এদিন শেষ হয় বিনা বাধায়। সব মিলে ধূপগুড়ির দক্ষিণ প্রান্তে ঝুমুর ব্রিজ পেরিয়ে পূর্ব আলতাগ্রাম মৌজার মোট ১৩ জন মালিকের ৫.০৫ একর জমির ওপর দিয়ে শুরু হবে বাইপাসের পথচলা।

এরপর ভেমটিয়া মৌজায় ৩৭ জন জমি মালিকের ৯.৪৮ একর জমির ওপর দিয়ে গিয়ে পথ মিশবে বারোঘড়িয়া মৌজায়। সেখানে ২৫৯ জনের মোট ৫৮ একর জমির ওপর দিয়ে গিয়ে পথ মিশবে মধ্য বোরাগাড়ি মৌজায়। সেখানে ১৯৭ জন মালিকের ৩৭.৬০ একর জমির ওপর দিয়ে যাবে বাইপাস।

এরপর উড়ালপুল হয়ে পুর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তর বোরাগাড়ি মৌজার ৭৯ জন মালিকের ৪২.৬৫ একর জমির ওপর দিয়ে ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের সামনে দিয়ে এগিয়ে খলাইগ্রাম মৌজায় ১২ জন জমি মালিকের ২.১১ একর জমির ওপর দিয়ে গিয়ে জংলিবাড়ি এলাকায় ফের জাতীয় সড়কে মিশবে বাইপাস মহাসড়ক। সব মিলে ছয়টি মৌজার ওপর দিয়ে ৮ কিলোমিটার ২১৫ মিটার বাইপাস মহাসড়ক নির্মাণে ৫৯৭ জন জমি মালিকের মোট ১৫৪-৮৯ একর জমি প্রয়োজন হচ্ছে।

উল্লেখ্য ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে এই বাইপাস নিয়ে ধূপগুড়ি ডাকবাংলো ভবনে জমি মালিকদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন তৎকালীন জেলা পরিষদ সভাধিপতি তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বনমালি রায়। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন ঘিরে তখন জমি সমস্যা একেবারে তরতাজা ইস্যু।

ফলে প্রথম বৈঠকের পরেই শুরু হয় জোরাল বিরোধিতা। এরপর লাগাতার ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর তৎকালীন বাম নেতারা আর নতুন করে জমি অধিগ্রহণে আগ্রহ দেখাননি।

এদিকে ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাইপাসের জন্যে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত এলাকার বাসিন্দা ও জমি মালিকেরা মিলে ‘সারাবাংলা কৃষি জমি বাস্তু ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটি’ গড়ে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দেয়।

২০১১ সালে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় বদলের পরেও ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় স্থিমিতই থাকে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি। এদিকে ২০১৪ সালে কেন্দ্রের ক্ষমতায় বদলের পর ফোর লেন নির্মাণে নতুন করে গতি আনে কেন্দ্র সরকার। জমি জট কাটিয়ে দ্রুত জমি হস্তান্তরে চাপ তৈরি হয় রাজ্যের ওপর।

সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ধূপগুড়ি বাইপাস সমস্যার সমাধানের দ্বায়িত্ব দেন রাজ্যর মন্ত্রী গৌতম দেবকে। শুরু হয় নতুন করে আলোচনা। মাঝে ২০১৬ বিধানসভা ভোটের জন্যে কিছুদিন স্থিমিত থাকার পর ফের ২০১৭ সালের গোড়ায় ফের গৌতম দেবের নেতৃত্বে শুরু হয় জমি মালিক ও প্রশাসনের আলোচনা।

মাঝে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০১৯ এর লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সাময়িক বিরতি থাকলেও মোটের ওপর সচল ছিল প্রশাসনিক কাজ। মাঝে গত বছর নভেম্বর এবং চলতি বছরের এপ্রিলে দুই দফায় জমি মাফা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ান উত্তর বোড়াগাড়ি এবং খলাইগ্রাম মৌজার অনিচ্ছুক জমি মালিকরা।

অবশেষে জমি জরিপের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তিতে মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন।