স্রেফ নেশায় কলকাতার মাসাজ পার্লারে দেহ বিকচ্ছেন উচ্চবিত্ত দেবিকা

Massage Parlors Crime: কলকাতার বাইরে 'বাঙালি মেয়েদের' চাহিদা বেশি। বাইরের ক্লায়েন্টরা বাঙালি মেয়েদের চায় খুব। দেবিকা জানায়, তারা মনে করেন বাঙালি মেয়েরা যেমন সুন্দরী, তেমনি যৌন সুখ দিতে অন্যান্য শহরের মেয়েদের তুলনায় বেশি পারঙ্গম।

স্রেফ নেশায় কলকাতার মাসাজ পার্লারে দেহ বিকচ্ছেন উচ্চবিত্ত দেবিকা
Follow Us:
| Updated on: Oct 06, 2021 | 7:23 PM

‘টাকা চাই। যে কোনওভাবে আমার টাকা চাই। এই মুহূর্তে ডোজ না নিলে আমি বাঁচব না। তোরও অবস্থা খারাপ, ভেবে দেখ তুই ডোজ না নিয়ে থাকতে পারবি তো?’ বয়ফ্রেন্ডের বলা কথাগুলো ভেবে দেখার সময় পায় না দেবিকা। শরীরের মধ্যে অসম্ভব জ্বালা, গত দেড় দিন ধরে ডোজ নিতে পারেনি সেও। মাথা ঘুরছে, কেউ যেন হাতুড়ি পিটছে মাথার ভিতর, সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। নাহ টাকা তারও চাই। টাকা না থাকলে ‘ওরা’ ডোজ দেবে না। বাড়ি থেকে ছিটকে বেরোয় বছর বাইশের দেবিকা। এমন একজনকে সে জানে, যে তাকে টাকা দিতে পারবে। অনেক টাকা প্রায় ৫ হাজার। কিন্তু তার জন্য বাবার বয়সী সেই লোকটির সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। সময় নেই আর ভাবার। লোকটিকে ফোন লাগায় সে।

ভাবলেশহীন মুখে প্রথমবার নিজেকে বেচার ঘটনা বলে যায় নিউ আলিপুরের বাসিন্দা দেবিকা বিশ্বাস (নাম পরিবর্তিত)। সল্টলেকের একটি নামী মাসাজ পার্লারের এখন তিনি অন্যতম সেরা ম্যাসিওর। খুব যে অভাবের তাড়নায় তিনি এ পথে পা বাড়িয়েছেন, তা কিন্তু নয়। বরং উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে, নামী ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রী এবং বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে কলসেন্টার স্টার্টআপ চালানো দেবিকা এ পথে এসেছেন নেশায়। ড্রাগ অ্যাডিক্টেড দেবিকা। এত অল্প বয়সে কেন সে এমন মারণ নেশায় আক্রান্ত? প্রশ্ন করতেই চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে দেবিকার। খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় যেমন হয়, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে অল্পস্বল্প মদ, সিগারেট খেতাম। কখনও সখনও এক দুবার গাঁজা। কিন্তু বাড়ির লোক ভাবল আমি ড্রাগ অ্যাডিক্টেড। একদিন আমাকে একটা রিহ্যাবে ভর্তি করে দেয় তাঁরা। সেখান থেকেই আমি জেদ করি। রিহ্যাবেই দু’-একজনের সঙ্গে আলাপ হয়। তারপর থেকেই কোকেন, ব্রাউন সুগার, হ্যাসের নেশা করতে শুরু করি আমি’।

বাড়ির প্রতি এত রাগ কেন দেবিকার? মা-বাবার কথা উঠতেই ক্ষণিকের জন্য চোখেমুখে একটা রাগ ফুটে উঠেই মিলিয়ে যায় তার। খুব ভাল করে লক্ষ্য করলে তা বোঝাও যায়। ফ্ল্যাশব্যাকে দেবিকার ছেলেবেলা। বাবা কম্পিউটার ব্যবসায়ী। মা-বাবা ভাইকে নিয়ে বেশ স্বচ্ছল পরিবার দেবিকাদের। কিন্তু মা হঠাৎ জড়িয়ে পড়েন একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে। শুরু হয় বাবা-মায়ের অশান্তি। তা গড়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত। ভাইকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন দেবিকার মা, নতুন সংসার পাতেন। বাবারও নতুন বান্ধবী জোটে। বাবা আর সেই বান্ধবী লিভ-ইন করেন। এখান থেকেই শুরু হয় দেবিকার চোরাস্রোতে ভেসে যাওয়া। রিহ্যাবেই পরিচয় হয় বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে। সেখান থেকেই ড্রাগে হাতেখড়ি। এরপর নিজের বাড়ির কাছেই একটি ঘর ভাড়া নেয় দেবিকা। বাবার সঙ্গে থাকলেও মাঝে মাঝে ভাড়া বাড়িতে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গেও থাকেন। তার সঙ্গে মিলেই শুরু করেছিলেন ১০জন কর্মী নিয়ে একটি কলসেন্টার স্টার্টআপ। এ জন্য বাবার কাছ থেকে কিছু টাকাও ধার নেন। কিন্তু লকডাউনে ক্লায়েন্টরা টাকা আটকে দেন, ফলে সমস্যায় পড়ে যান দুজনেই। লোকসানের মুখ দেখতে শুরু করে ব্যবসা। ফলে ভাত জুটলেও, জোটে না নেশার বস্তু।

এরপর নিজেই নেট ঘেঁটে মাসাজ পার্লারের এক এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে সল্টলেকের এক পার্লারে তাঁর আগমণ। এই যে এখানে এসেছেন, দেহ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন, বয়ফ্রেন্ড জানেন? প্রশ্ন শুনে হাসে দেবিকা। তারপর জবাব দেন, ‘ওই তো আমাকে পাঠায়। তবে আগে পাঠাত না। জানত সবই। প্রথম প্রথম ঝামেলা করত। কিন্তু জানো তো নেশার ‘উইথড্রয়াল’ কি ভয়ঙ্কর হয়। যখন টাকা থাকে না, নেশার জিনিস পাওয়া যায় না, তখন থাকতে না পেরে ওই যেতে বলে।’ এখন দেবিকা মুম্বই, দিল্লির মত প্রধান শহরের নানা মাসাজ পার্লারে ‘সার্ভিস’ দিতে যান। যথেষ্টই চাহিদা তাঁর, আর সল্টলেকের এই পার্লারে তো তিনি রীতিমতো ‘হট প্রপার্টি’। তাঁর কথায়, কলকাতার বাইরে ‘বাঙালি মেয়েদের’ চাহিদা বেশি। বাইরের ক্লায়েন্টরা বাঙালি মেয়েদের চায় খুব। দেবিকা জানায়, তারা মনে করেন বাঙালি মেয়েরা যেমন সুন্দরী, তেমনি যৌন সুখ দিতে অন্যান্য শহরের মেয়েদের তুলনায় বেশি পারঙ্গম।

দেবিকার সঙ্গে কথা বলতে বলতে এক অদ্ভুত জগত খুলে যায়। কলকাতা সহ দেশের অন্যান্য শহরের মাসাজ পার্লারের এক অজানা দিক খুলে যায়। আর ড্রাগের নেশার এক ভিন্ন ভয়াল দিক ধরা পড়ে। যেখানে উচ্চবিত্ত পরিবারের, নামী স্কুলের এমন কতশত দেবিকা নিজেদের বিকিয়ে দেয় স্রেফ নেশায়। কথা বলতে বলতেই পাঁচ মিনিট সময় চেয়ে নিয়ে ব্যাগ থেকে সিরিঞ্জ বের করে ঘরের টেবিলের দিকে এগিয়ে যায় সে। হাতের উপর একটা রবার ব্যান্ড বাঁধে, শিরা ফুটে ওঠে হাতের উপর। আঙুলের আলতো চাপে একদলা বিষ ঢুকে যায় তার শরীরে। ফের বিছানায় এসে বসে সে। এখন তার শরীরে কে হাত দিল, কে দিল না কিছুই এসে যায় না তার। এখন সে এক অন্য জগতের বাসিন্দা। এখানে মা-বাবার অশান্তি নেই, অসহ্য ছেলেবেলা নেই, নেই বয়ফ্রেন্ডের অস্তিত্বও। সবটাই এত বাহ্য।

আরও পড়ুন: ‘বিছানা ছেড়ে একবার বেরিয়ে যাওয়ার পর, কেউ কথা রাখে না’, আক্ষেপ ‘সোনাজয়ী’ কলগার্লের