Duttapukur Blast: বাংলায় যে কোনও বিস্ফোরণে মরে কেন চাঁদরা গ্রামের মানুষ, TV9 বাংলা ঢুঁ মারতেই হাড়হিম তথ্য
Duttapukur Blast: জিরাতের মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে এনআইএ-এও। কারণ জিরাতের ভাই ইশা খাঁ-কে ইতিমধ্যেই মন্ত্রী জাকির হোসেনের ওপর বোমা ছোড়ার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে এনআইএ।
মুর্শিদাবাদ: সুতির নতুন চাঁদরা গ্রাম। সরু মেঠো পথ, একটি বাইক গেলেই ধুলোর ঝড়ে অন্ধকার। আর তবে গ্রামের এক একটা বাড়ি রীতিমতো প্রাসাদপম। দত্তপুকুরের বিস্ফোরণ কাণ্ডে এখন হাইলাইটেড মুর্শিদাবাদের সুতির প্রত্যন্ত এই জোনও। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাই বলছেন, চাঁদরা তো আদতে একটা ‘দুর্গ’। সেই গ্রামে প্রবেশ করা আসলে মৃত্যুপুরীতে পা রাখা। কিন্তু কেন? TV9 বাংলার প্রতিনিধি ধরেছিলেন সেই গ্রামের মেঠো পথ। সত্যিই নিরিবিলি সেই গ্রামে। খুব একটা বাইরের লোকের পা যে সেই গ্রামের মাটিতে পড়ে না, তা বোঝা গেল বাসিন্দাদের চোখেমুখের পরিভাষাতেই। হঠাৎই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি দেখে গ্রামের মোড়ে অতুৎসাহী মানুষের জটলা। আবার তাঁদের কিছু প্রশ্ন করলেই নিজেদের আড়াল করার আপ্রাণ প্রয়াস। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গ্রামই আসলে ‘বারুদের স্তূপ’। দত্তপুকুরের বিস্ফোরণে মুর্শিদাবাদের যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের চার জনই এই গ্রামের বাসিন্দা।
এই গ্রামের পাশেই পাঁকুড় গ্রাম। আরও প্রত্যন্ত এলাকা। দু’পাশে শুধু ক্ষেত, আর মাঝ খান থেকে আল পথ। সেই পথ ধরেই বারুদ চলে আসত বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে। আর জমা হত এই চাঁদরা গ্রামেই। এই গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশেরই পেশা এরকমই। এই বিস্ফোরক আবার চাঁদরা গ্রাম থেকেই পাচার হত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদেরই একাংশের অভিযোগ, চাঁদরা প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতেই বিস্ফোরক মজুত থাকে। পুলিশ সবই জানে! কিন্তু অভিযোগ, পুলিশও নাকি এই গ্রামের ঢুকতে ভয় পায়। সাধারণ মানুষ তো দূর অস্ত।
দত্তপুকুরের বাজি কারখানার মালিক কেরামতের পার্টনার ছিলেন জিরাত। চাঁদরা থেকে বিস্ফোরক সরবরাহ করতেন তিনিই। একটা চেন তৈরি করেছিলেন। গ্রাম থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন আরও তিন জনকে। জিরাত তাঁর কাজের সুবিধার্থে দত্তপুকুরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকছিলেন। কিন্তু সোমবার গিয়ে দেখা গেল, বিস্ফোরণে স্বামীর মৃত্যু পর রাতারাতি গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন জিরাতের স্ত্রী।
সুতি থেকে ঠাকুরনগর-পাঁচপোতা রোডে দত্তপুকুর। গাড়িতে ঘণ্টা পাঁচেকের যাত্রাপথ। ‘বারুদ’ গ্রামের সঙ্গে সংযোগস্থাপন ‘বহির্বিশ্বের’। এই পথেই চলত জিরাতদের যাতায়াত।
জিরাতের মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে এনআইএ-এও। কারণ জিরাতের ভাই ইশা খাঁ-কে ইতিমধ্যেই মন্ত্রী জাকির হোসেনের ওপর বোমা ছোড়ার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। পাশাপাশি পিংলা বিস্ফোরণকাণ্ডের সময়েও নাম জড়িয়েছিল এই চাঁদরা গ্রামের। কারণ সেখানকার মৃতদের তালিকাতেও ছিল চাঁদরা গ্রামের বাসিন্দাদের নাম।
সুতরাং, পরিসংখ্যানই বলছে, রাজ্যের এ যাবৎ যে কোনও বড় বিস্ফোরণের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে সুতির প্রত্যন্ত এই গ্রাম। তাই সোমবারও এই গ্রামের আবহ অত্যন্ত থমথমে। গ্রামবাসীরা তো ক্যামেরা দেখেই মুখ লুকোচ্ছেন। তাঁরা তো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতেই নেই। আর সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বললেন, “এখানে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে। ওরা তদন্ত করছে। পুলিশ দেখবে। যারা যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।” প্রশাসনের ঘাড়েই দায় ঠেলেছেন তিনি। আর বিরোধীরা বলছেন, সবটাই হচ্ছে প্রশাসনের মদতেই। বিজেপি নেতা ধনঞ্জয় ঘোষ “ঝাড়খণ্ড-বিহার থেকে বোমা বারুদ আসছে। বাংলায় তো এখন বোমা-বারুদের কারখানাই তৈরি হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের চাঁদপুর, পাকুড় এলাকা হয়ে বাইরের রাজ্য থেকে লরি লরি বিস্ফোরক আসছে। প্রশাসনের একটা অংশ এর সঙ্গে যুক্ত।”