Murshidabad: বাবার মতো রোদে-জলে ঘুরে হকারি করতে হবে না, বাড়ির স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ছেলে ধরবে স্টেথো

NEET: "আমার জীবনে অনেক আশা ছেলেকে নিয়ে। ও স্বপ্ন পূরণ করেছে আমার।'' ছেলের ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়া নিয়ে গর্বিত ফেরিওয়ালা বাবা।

Murshidabad: বাবার মতো রোদে-জলে ঘুরে হকারি করতে হবে না, বাড়ির স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ছেলে ধরবে স্টেথো
নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 04, 2021 | 2:30 PM

মুর্শিদাবাদ: সকালের আলো ফোটার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বাবা। ফেরেন সেই রাতে। সারাদিন খেটেখুটে রোজগার আর কতটুকু হয়! তাই দিয়ে কোনওক্রমে চালাতে হয় সংসার। ফেরিওয়ালা বাবার যন্ত্রণা দূর করার প্রতিজ্ঞা সেই ছোট থেকেই নিয়েছিলেন সোহেল। বড় তাকে হতেই হবে, এই ছিল লক্ষ্য। অবশেষে নিট (NEET) -এর ফল বেরতেই খুুশি সোহেল আনোয়ার। ছেলে ডাক্তার হতে যাচ্ছে। আনন্দে চোখে জল ফেরিওয়ালা বাণী ইসরাইল।

সাইকেলে চেপে গ্রামে গ্রামে কাপড় ফেরি করাই বাণীর পেশা। প্রতিদিন চরম পরিশ্রম করে দিনল শেষে যে উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। কোনওরকমে সংসার চালান সামসেরগঞ্জের যাদবনগর গ্রামের বাণী ইসরাইল। সেই দারিদ্রের মধ্যে বাড়ির মেজো ছেলের পড়াশোনায় কোনও প্রভাব পড়তে দেননি তিনি। সেই মেজো ছেলে এবার সর্বভারতীয় মেডিকেল পরীক্ষায় জায়গা করে নিয়েছে। ছেলে কিছুদিন পরে স্টেথো ধরে রোগীদের পরীক্ষা করবে, ভাবতেই যেন চোখে জল আসছে ফেরিওয়ালা বাবার।

ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটের ফলাফল প্রকাশিত হতেই আনন্দের জোয়ার বাণী ইসরাইলে ঘরে। মেজো ছেলে সোহেল আনোয়ার এমবিবিএসে পড়ার সুযোগ পেয়েছে এবার। ডাক্তারি পরীক্ষায় সোহেল আনোয়ারের র‍্যাঙ্ক ১২,৫৫০। প্রাপ্ত নম্বর ৬১৬। এর আগে বড়ো ছেলে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ করে নিয়েছেন। মেজো ছেলেরও ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার খবরে খুশির হাওয়া পরিবার থেকে যাদবনগর গ্রামের বাসিন্দারা।

ভাঙা ঘরটাতে বসে সোহেল বলেন, “ভাল  লাগছে। টেন পর্যন্ত বাড়ির এখানেই পড়াশোনা করেছি। তার পর কালিয়াচকে চলে গিয়চেছিলাম। সেখানে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা করি। প্রথমবার ব্যর্থ হয়েছি। পরের বার লক্ষ্যে পৌঁছলাম। ডাক্তারি পড়তে পারব। আমার নিটে র‍্যাঙ্ক হয়েছে ১২, ৫৫০। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। ছোট থেকে বাবা-মা আমার জন্য লড়েছেন। আমার ছোট থেকে স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। এখন খুুশি আমি।”

আর বাবার কথায়, “আমার জীবনে অনেক আশা ছেলেকে নিয়ে। ও স্বপ্ন পূরণ করেছে আমার। আমার ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। স্থানীয় বিডিও সাহেবও খুব সাহায্য করেছেন। জীবনে এত খুশি কোনওদিন হইনি। দুটো ছেলে এমবিবিএস পড়বে আমার। আমাকে এত সম্মান দিয়েছে ওরা। বড় ছেলে বহরমপুরে মেডিকেল পড়ছে। আর মেজো ছেলে এবার ডাক্তারি পড়তে যাচ্ছে। আমার চাওয়ার আর কিছু নেই।”

উল্লেখ্য, সোমবার প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এনট্রান্স টেস্ট (NEET) ইউজি-এর ফল। এই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরে দেশের প্রথম সারির মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস (MBBS) কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান পড়ুয়ারা। সেই নিট ইউজি পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছেন বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা সৌম্যদীপ হালদার। আবার উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হওয়ার পর এবার সর্বভারতীয় ডাক্তারি পরীক্ষাতেও তাক লাগালেন মুর্শিদাবাদের কান্দির রুমানা সুলতানা।

আরও পড়ুন: Rumana Sultana: উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া রুমানা তাক লাগালেন সর্বভারতীয় মেডিকেল পরীক্ষাতেও, স্কোর ৯৯.৯২%