বাবুলালকে ভাইফোঁটাও দিতেন শুভ্রজিতের বোন, ১৫ বছরের বন্ধুত্বে ছেদ স্রেফ একটা কারণেই! বিরাটি খুনে নয়া তত্ত্ব

Birati TMC Murder: প্রয়োজনে 'ম্যান পাওয়ার সাপোর্ট' দেওয়ার আশ্বাস দেন। শুভ্রজিতের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা।

বাবুলালকে ভাইফোঁটাও দিতেন শুভ্রজিতের বোন, ১৫ বছরের বন্ধুত্বে ছেদ স্রেফ একটা কারণেই! বিরাটি খুনে নয়া তত্ত্ব
নিজস্ব চিত্র (ডান দিকে- অভিযুক্ত বাবুলাল)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 22, 2021 | 10:26 AM

বিরাটি: একুশে জুলাই রাতে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় বিরাটির তৃণমূল কর্মী শুভ্রজিত্ দত্তের। রাতের ঘটনার রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারে নি বিরাটি বণিক মোড়। বরং সময় যত এগোচ্ছে, এলাকায় দানা বাঁধতে শুরু করেছে একাধিক গুঞ্জন। গলির মুখে অত্যুত্সাহীদের জটলা। অপরিচত মুখ দেখলেই চলছে নিজেকে আড়াল করার প্রয়াস। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় মোতায়েন পুলিশ। ইতিমধ্যেই আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে পুলিশ।

খুনের নেপথ্যে উঠে আসছে বাবুলাল নামে স্থানীয় এক ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ীর নাম। তাঁর সঙ্গে একুশের দুপুরে বচসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন শুভ্রজিত্। হাতাহাতিতে মাথা ফাটে বাবুলালের, রাতে খুন হন শুভ্রজিত্। আপাতত খুনের মোটিভ হিসাবে বাবুলাল-তত্ত্বকেই খাঁড়া করে তদন্তে এগোচ্ছে পুলিশ।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাবুলালের সঙ্গে শুভ্রজিতের সম্পর্ক প্রায় ১৫ বছরের। দু’জনেই এলাকায় ইমারতি দব্যের সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এমনকি দু’জনের এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল যে, শুভ্রজিত ওরফে পিকুনের বোন এমনকি ৬ বছর আগেও বাবুলালকে ভাইফোঁটা দিয়েছেন নিয়মিত। সম্পর্কে চিড় ধরে বাবুলাল পিকুনের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ধার নেওয়ায় পর।

বাবুলাল শুভ্রজিতকে বলেছিলেন, সিন্ডিকেটের বড় আলিসান অফিস হবে। এটা ব্যবসায়িক বিনিয়োগ। পরে ব্যবসার পরিধি বাড়লে বাবুলাল সেই টাকা পিকুনকে ফেরত দেবেন। পিকুনের মা রেখা দত্ত আয়ার কাজ করেন। তিনিই কোনওরকমে ধার দেনা করে সেই টাকা জোগাড় করেন। বিপত্তি বাধে ২০১৮ সালের পর সেই টাকা ফেরত চাওয়ায়।

দু’জনের ব্যবসায়িক বিচ্ছেদ ঘটে। এলাকার আরেক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ী বিপ্লব (মহারাজ) মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভ্রজিতের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বাবুলালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বিজেপির। নানারকম পুলিশ কেসে জড়িয়ে বাবুলাল এলাকাছাড়া হন।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে এলাকাছাড়া বাবুলাল আবার ফিরে আসেন। ভোটে এলাকায় বিজেপির ‘বাহুবলী’ নেতা হিসাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন বলিষ্ঠ চেহারার বাবুলাল। এদিকে, বাবুললাল ফিরে আসায় মহারাজ গোষ্ঠী অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে। মহারাজ জানতে পারেন, শুভ্রজিত্ বাবুলালের কাছে ৪ লক্ষ টাকা পান। তিনিও বারবার শুভ্রজিতকে বলেন, টাকা ফেরত চাইতে।

প্রয়োজনে ‘ম্যান পাওয়ার সাপোর্ট’ দেওয়ার আশ্বাস দেন। শুভ্রজিতের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। সেক্ষেত্রেও এখন টাকার দরকার। তাই শুভ্রজিত্ও মহারাজের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান । কিন্তু কিছুতেই টাকা ফেরত দিতে চাইছিলেন না বাবুলাল। তারই জেরে ২১ জুলাই দুপুরে বাবুলালকে টার্গেট করা হয়। অভিযোগ, তাঁর মাথায় একটি মার্বেল টাইলস দিয়ে আঘাত করে ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এই খবর বাবুলাল গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর পর থেকেই শুভ্রজিত টার্গেট হয়ে যায়। বিকেলের পর থেকেই তাঁর গতিবিধির দিকে নজর রাখছিল বাবুলাল গোষ্ঠী।

রাতে নৈশ কার্ফু, শুনশান এলাকা। স্থানীয় পার্টি অফিস থেকে শুভ্রজিত্ বেরোতেই তাঁকে ধাওয়া করে দুটি বাইক। তারমধ্যে দ্বিতীয় বাইকের চালকের আসনের পিছনে বসা আততায়ী পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁকে গুলি করে। স্থানীয় যুবক নাকি ভাড়া করা সুপারি কিলার, তা এখনও স্পষ্ট নয়। একটি দেশি পিস্তলে ৬ টি কার্তুজ থাকে। তার মধ্যে ৫ টিই নিহতের শরীরে মিলেছে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে মাত্র একটি। অর্থাৎ আততায়ীরা পেশাদার বলেই প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান। আরও পড়ুন: দোকানের সামনে চপ্পল, রাস্তায় রক্তের ছাপ অস্পষ্ট! বিরাটিতে তৃণমূল কর্মী খুনে মায়ের বয়ানে নয়া তত্ত্ব

COVID third Wave