CM Mamata Banerjee: চুপ থেকে কী বার্তা দিলেন মমতা? বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘সবই নাটক’

CM Mamata Banerjee: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

CM Mamata Banerjee: চুপ থেকে কী বার্তা দিলেন মমতা? বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘সবই নাটক’
হিঙ্গলগঞ্জের সভায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 29, 2022 | 3:55 PM

উত্তর ২৪ পরগনা: এ দৃশ্য আগেও দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও প্রকাশ্যে আমলাদের ধমকেছেন। কিন্তু মঙ্গলবারে হিঙ্গলগঞ্জের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা কিছুটা নজিরবিহীন। অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। সরকারি আধিকারিক ও আমলাদের ওপর প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করে মঞ্চে মুখ গোমড়া করে বসেছিলেন টানা ১৭ মিনিট। সামনে অসংখ্য দেহাতি মানুষের ভিড়, স্টেজে তখন আমলরা একে একে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন প্রশাসনিক প্রধানকে, তাঁর মানভঞ্জনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দিকে ফিরে তাকাননি পর্যন্ত। রেগেই চুপ করে বসেছিলেন। সরকারি কাজে সরকারি আধিকারিকরা যাতে কোনও ভাবেই ফাঁকি না দেন কিংবা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে না যান, এ দিনের মুখ্যমন্ত্রীর আচরণে সে বার্তা স্পষ্টত। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আম জনতাকে পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারি আমলাদের। আর সেই দায়িত্বে যাতে কোনওরকমের খামতি না থাকে, বিভিন্নি প্রশাসনিক বৈঠকে আধিকারিকদের সে বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই বৈঠকে আগেও উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্তাদের পাশাপাশি, প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও ধমক দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আগেও নির্দেশ দিয়েছেন, দাঁড়িয়ে থেকে মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে। সরকারি পরিষেবা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে হবে, সেদিকে যেন খেয়াল রাখেন উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরাও, মুখ্যমন্ত্রীর বলা সেই বার্তা আরও বেশি করে প্রতীয়মান হল হিঙ্গলগঞ্জের সভায়।

বনবিবির পুজো উপলক্ষে শীতবস্ত্র উপহার দিতে হিঙ্গলগঞ্জে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মঞ্চে ওঠার পরই জানতে পারেন, আদৌ সেই শীতবস্ত্র এসে পৌঁছয়নি সেখানে। ১৫ হাজার শীতবস্ত্র রাখা রয়েছে বিডিও অফিসে। এরপরই ক্ষোভ ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। স্টেজে উপস্থিত প্রশাসনের এক আধিকারিকের উদ্দেশেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ““এগুলো কোথায় রেখেছেন? কাকে দিয়েছেন? ১৫ হাজার কোথায় রেখেছেন?” উল্লেখ্য, এর আগে অনেকক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে, ত্রাণের টাকা, ত্রিপল, পরিষেবা থেকে অনেক সময়ই অনেক দুর্গত বঞ্চিত হয়েছে। সরকারি পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক ক্ষেত্রে। তাই মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট করলেন, ” “আমি তো বলেছি, আমরা সরাসরি দেব, কারোর মারফত দেব না, শোনা হয়নি কেন? আমি বিডিও অফিসে রাখার জন্য তো পাঠায়নি। যদি বিডিও, আইসি, ডিএম রা ঠিক মতো কাজ না করে, আমি পদক্ষেপ করব।” সরকারি আধিকারিকদের ধমক দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি তিনি। বলেছেন,”এটা যতক্ষণ না আসছে আপনারা বসুন, আমিও বসলাম… ” কথার কথা নয়, তিনি ঠাঁই ১৭ মিনিট মঞ্চে বসেছিলেন। সে সময় তাঁকে একাধিক প্রশাসনিক কর্তা বোঝাতেও এসেছেন। কিন্তু সে প্রচেষ্টা বিফলে যায়।

মমতাকে এদিন বলতে শোনা যায়, “পুলিশ দোষ করলে, আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপে, সরকার দোষ করলে, আমার ঘাড়ে দোষ পড়ে, অথচ আমি কিছুই জানি না…” এদিনের গোটা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মমতার এ বক্তব্যও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, আদতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে চেয়েছেন, যাঁদের জন্য যে পরিষেবা পাঠানো হচ্ছে, তাঁরা সেটা পাচ্ছেন কিনা, তা দেখতে হবে সরকারি আধিকারিকদেরই।

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের গোটা ভূমিকা নিয়ে সরব বিরোধীরা। গোটা বিষয়টি ক্যামেরার সামনে বলে কটাক্ষ করলেন বিজেপি নেতা শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, “এগুলো হচ্ছে ক্যামেরার সামনে মুখ্যমন্ত্রীর নাটক। এই নাটক করেই মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন। এর আগে যতগুলি প্রশাসনিক সভায় এই ধমক দিয়েছেন, তা পরবর্তীকালে খতিয়ে দেখা হয়, তাহলে দেখা যাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভায় যা কথা বলেন, তা পালন করা হয় না।”

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “ওঁ সব বুঝতে পারছেন, ধরা পড়ে যাচ্ছেন। তাই নাটক করতে হবে। হঠাৎ বসে পড়লেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দেওয়া মেটেরিয়াল সময় মতো না পান, তাহলে কি ওঁ বুঝতে পারছেন, এই পঞ্চায়েত মারফত চলতে চলতে অস্থিরতায় ভুগছেন। পুলিশ বাহিনী ওঁর দুষ্কৃতীদের পাহারা দিতে দিতে ক্লান্ত। পুলিশকে তাই ধমক দিচ্ছে।” এ বিষয়ে বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “এই সরকারের সব কিছু আনপ্ল্যানড। সেটা সভা থেকে বোঝা যাচ্ছে। ওঁ কিছু ভাবেন, আর হঠাৎ হঠাৎ বলেন, সেটা এই সভা থেকে বোঝা যাচ্ছে। পরিণাম পরে ভুগতে হয়। অফিসারদের যোগ্যতা রাজনৈতিক কাজ করতে করতে কমে যাচ্ছে।”