Shyamnagar Murder: জলের ট্যাঙ্কে ভাসছিল অন্তঃসত্ত্বার দেহ, স্বামীর মানিব্যাগটাই ধরিয়ে দিল কালপ্রিট!
Crime News: শ্যামনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতা প্রিয়াঙ্কার স্বামী আবির তাঁর অফিসেই এক সহকর্মীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেই নিয়ে স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বেশ খিটিমিটি লাগতই।
উত্তর ২৪ পরগনা: বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয়েছিল ওদের। তারপর থেকে অশান্তি-ঝামেলাতেই কাটছিল জীবন। কিন্তু কে জানত অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির এই হাল হবে। স্বামী রোষের কোপে পড়তে হবে তাঁকে। অকালেই চলে যাবে নির্মম একটি প্রাণ। একটা মানিব্যাগই ধরিয়ে দিল দোষীকে। মৃতার স্বামীর উপর প্রথম থেকে সন্দেহ ছিলই। পুলিশের হাতে মানিব্যাগটা আসতেই সব কিছু জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।
শ্যামনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতা প্রিয়াঙ্কার স্বামী আবির তাঁর অফিসেই এক সহকর্মীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেই নিয়ে স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বেশ খিটিমিটি লাগতই। নিজের মানিব্যাগে তাঁর প্রেমিকার ছবিও রাখতেন আবির। পুলিশের হাতে এসে পৌঁছয় সেই মানিব্যাগ। তদন্তকারীরা ছবিটি পেয়ে আবিরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জেরার মুখে অবশেষে আবির কবুল করেন সত্যিটা। জানান, তিনিই তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছেন।
মৃতার পরিবার প্রথম থেকেই অভিযোগ করেছিলেন, মেয়ে প্রিয়াঙ্কা বিয়ে করে সুখী হননি। স্বামীর সঙ্গে তাঁর প্রায়শই ঝামেলা লেগে থাকত। নিজের সহকর্মীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জন্য প্রিয়াঙ্কাকে মারধর করতেও পিছপা হতেন না আবির। শেষের দিকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যও চাপ দিচ্ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, নানা সময়েই বাপের বাড়ি থেকে টাকাপয়সা চেয়ে আনতে প্রিয়াঙ্কাকে জোরও করতেন আবির বলে অভিযোগ। টাকা না দিলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলত বধূর উপর।
জগদ্দল থানার শ্যামনগর শান্তিগড় স্ট্রিট। সেখানেই থাকতেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা পুরকাইত (৩৩)। ২০১৬ সালে শান্তিগড় স্ট্রিটের বাসিন্দা আবির পুরকাইতের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। আবির পেশায় ইছাপুর মেটাল ফ্যাক্টরির কর্মচারী। ঠিক কীভাবে খুন করেছিলেন আবির?
মৃতার পরিজনদের দাবি, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। বিয়ের পর থেকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হত তাঁকে। অভিযোগ, বুধবার কাজ থেকে ফিরে আবির প্রিয়াঙ্কাকে খুন করে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন। এরপর নাটক করে স্ত্রী-কে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
ওই একই এলাকায় থাকতেন প্রিয়াঙ্কাদেবীর মাসি রানি মণ্ডল। হঠাৎ করে মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে প্রিয়াঙ্কার শ্বশুরবাড়িতে হাজির হন তিনি। উপস্থিত হন মাসির ছেলের বউও। সম্পর্কে সে প্রিয়াঙ্কার বউদি। তিনিও আবিরকে গিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন কোথায় গিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। অভিযোগ, সেই সময় আবির জলের রিজারভারের কাছে গিয়ে বলতে থাকেন এইখানেই পড়ে রয়েছে দেহ।
এরপরই চিৎকার শুরু হয়। আশেপাশের লোকজন এলাকায় জমায়েত করতে শুরু করেন। গৃহবধূকে খুনের অভিযোগে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বাড়িটিকে ঘিরে রাখেন।
এই ঘটনায় প্রিয়াঙ্কা দেবীর বউদি বলেন, “আমি বাজারে গিয়েছিলাম। ঘরে এসে দেখি আমার শাশুড়ি নেই। ফোন করার পর তিনি বলেন প্রিয়াঙ্কাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গে-সঙ্গে আমি এখানে চলে আসি। সেই সময় আবির বলতে থাকে আমার চল্লিশ হাজার টাকা চুরি হয়ে গিয়েছে। ওই সময় আমি বিছানায় রক্ত দেখতে পাই। রক্ত দেখেই আমার সন্দেহ হয়। আমি সঙ্গে-সঙ্গে খাটের তলা, বিছানা, বাথরুম খুঁজে দেখতে শুরু করি। এমনকী বাড়ির উপরের জলের ট্যাঙ্ক খুঁজেও আমি কিছু পাইনি। এরপর হঠাৎ আমার চোখ যায় নীচে রাখা জলের ট্যাঙ্কে। তখন আমি জিজ্ঞাসা করি এইখানে কী আছে? এরপর আবির নিজেই জলের ট্যাঙ্কের ঢাকা সরিয়ে উঁকি মেরে দেখল। তারপর বলতে শুরু করল প্রিয়াঙ্কাকে কেউ মেরে ট্যাঙ্কের ভিতর ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছে। এই একই কথা বারবার বলে চলে। প্রথম থেকেই ও আমার ননদকে ভীষণ মারধর করত।”
শুধু প্রিয়াঙ্কা নয়, তাঁর বউদির দাবি তাঁকেও নাকি বেধড়ক মারধর করে অভিযুক্ত। এদিকে, ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বাড়িটিকে ঘিরে রাখেন। জগদ্দল থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত স্বামীকে পুলিশ পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনায় জড়িত স্বামীর কঠোর শাস্তির দাবি করেন মৃতার আত্মীয়-পরিজনরা।অবশেষে, শুক্রবার অভিযুক্তকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: BJP meet Narendra Modi: মোদী সাক্ষাতে বিজেপির বঙ্গব্রিগেড, সিএএ-র বাস্তবায়নে জোর