Abhishek Banerjee at Shyamnagar: ‘আমার অধিকার রয়েছে, আমি কোনও বিচারের সমালোচনা করতেই পারি’, শ্যামনগরের সমাবেশ থেকে সুর চড়ালেন অভিষেক

Abhishek Banerjee: এদিন একাধারে বঙ্গ বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন অভিষেক।

Abhishek Banerjee at Shyamnagar: 'আমার অধিকার রয়েছে, আমি কোনও বিচারের সমালোচনা করতেই পারি', শ্যামনগরের সমাবেশ থেকে সুর চড়ালেন অভিষেক
শ্যামনগরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ফেসবুক।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 30, 2022 | 9:24 PM

উত্তর ২৪ পরগনা: সাংসদ অর্জুন সিংয়ের তৃণমূলে ফেরার এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যারাকপুরে জনসভা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার শ্যামনগরের স্টেশন সংলগ্ন অন্নপূর্ণা কটন মিলের মাঠে এই সমাবেশে যোগ দেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এই মঞ্চেই অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেন পানিহাটির নিহত কাউন্সিলর অনুপম দত্তের স্ত্রী। এদিন সাংসদের বক্তব্যে উঠে আসে রাজ্যপালের প্রসঙ্গ। হলদিয়ার সমাবেশে তিনি ঠিক কী বলেছিলেন, সে প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেন, ‘আমার অধিকার রয়েছে, আমি কোনও বিচারের সমালোচনা করতেই পারি।’

কী বললেন অভিষেক

  1. বক্তব্যের শুরুতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তিন বছর আগে এই ৩০ মে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বিজেপির দর্প চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছে। বিজেপি ছেড়ে সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চলে আসছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরাই তৃণমূলের সবথেকে বড় সম্পদ। বিজেপির কাছে অর্থ আছে, এজেন্সি আছে, যা পারছে তাই করছে কিন্তু একটা জিনিস বিজেপির কাছে নেই। তা হল কর্মী।
  2. বিজেপি আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “বাংলায় গোহারা হেরেছে একুশের মে মাসে। বলেছিল, অবকি বার ২০০ পার। ৭০-এ আটকে গেছে। তাই এখন চাইছে যে করে হোক বাংলার মানুষকে মারতে। ভাতে মারবে, পাটে মারবে। চটকল শিল্পের প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির কারণে গত ৬ মাসে কাজ হারিয়েছেন।”
  3. দু’দিন আগে বিচারব্যবস্থা নিয়ে একটা মন্তব্য করেছিলাম বলে মহামান্য রাজ্যপাল আমাকে বলেছেন, আমি নাকি সীমারেখা অতিক্রম করেছি। সীমারেখা কে অতিক্রম করছে? আমি কী বলেছি? বিচারব্যবস্থায় ৯৯ শতাংশ লোক খুব ভাল। ১ শতাংশ লোক কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক বা যাঁরা সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার ভূমিকায় রয়েছে তাঁদের কথা শুনে কিছু লোককে নিরাপত্তা দিচ্ছে। আমার অধিকার রয়েছে, আমি কোনও বিচারের সমালোচনা করতেই পারি। যদি কোনও বিচারে কেউ বলে মার্ডার কেসে তদন্ত হবে না, সেটা ঠিক না ভুল? যদি বলে ভবিষ্যতে কোনও এফআইআর হবে না, এটা ঠিক না ভুল? আমি জনতার দরবারে জানতে চাই? তা হলে সীমারেখা কে অতিক্রম করছে? আমি বিচারব্যবস্থার এক শতাংশ নিয়ে যদি বলি, তার উত্তর দিচ্ছেন রাজ্যপাল। তার মানে ঠিক জায়গায় গিয়ে ঢিলটা পড়েছে। মৌচাকে ঢিল পড়েছে। বাকি আর আমি কিছু বলব না।
  4. আমি বিচারব্যবস্থাকে সম্মান করি। বলছে, এসএসসি নিয়ে সিবিআই দিয়েছে বলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে জ্বালা। আরে আমার কোনও গায়ে জ্বালা নেই। এসএসসি, পিএসসি, সারদা,নারদা যা ইচ্ছে সিবিআই দাও। আমার কাঁচকলা। কিচ্ছু যায় আসে না। সবে সিবিআই দাও। কিন্তু সিবিআইয়ের গ্রহণযোগ্যতা  কী? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরির তদন্ত তো ১৮ বছর হয়ে গেল। ২০০৪ সাল থেকে চলছে। ফিরিয়ে আনতে পেরেছ? এই সারদায় যাদের বিরুদ্ধে সুদীপ্ত সেন চিঠি লিখে বলেছিল, দোষী বলেছে, একদিনের জন্য ডাকেনি।
  5. এদিকে মদন মিত্র সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে বসেছিল বলে, তিন বছর জেলে রেখেছে। নীরব মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী একই মঞ্চে ছিল, তাঁর জেল হবে না কেন? এই দ্বিচারিতা কেন? কিন্তু কেউ যদি ভাবে একটা লোককে আমি প্রোটেকশন দেব বলে যা খুশি করব, আমরা তাঁর বিরুদ্ধে বলতে পারি না? আমাদের অধিকার নেই জাজমেন্টকে ক্রিটিসাইজ করার?
  6. আমরা বিচার ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানাই, ৯৯ শতাংশ লোক এখনও মেরুদণ্ড সোজা রেখেছে বলে সকলে বেঁচে আছেন। সুপ্রিমকোর্টের মেরুদণ্ডটা সোজা, তাই ভারতবর্ষ ধ্বংস হয়ে যায়নি। যারা ভাবছে আমাকে ভয় দেখিয়ে ধমকে চমকে…। আমি তো একজনকে বলেছি, অন্যজন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে কেন? ঠাকুর ঘরে কে আমি তো কলা খাইনি। আমি তো রাজ্যপালকে কিছু বলিনি। উনি বলছেন কেন, আমি সীমারেখা অতিক্রম করেছি? আমি তো কোনও বিচারপতি নিয়ে কোনও কথা বলিনি।
  7. ভুলবেন না আপনি সকলের রাজ্যপাল। দিলীপ ঘোষ যখন বলেন, পুলিশকে দিয়ে পা চাটাব আপনি ক’বার নিন্দা করেন? শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতা যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কুরুচিকর শব্দ প্রয়োগ করেন, আপনি ক’বার নিন্দা করেন? হেমতাবাদকাণ্ডের পর দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্টে গিয়ে কোনও লাভ নেই । তখন ওনাকে কিছু বলেননি কেন?
  8. কোনও রাজনৈতিক দল বিজেপির সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পারে না। একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মীরা করেছেন। আমরা করেছি। আমরা মেরুদণ্ড বিক্রি করিনি, আত্মসমপর্ণ করিনি। দিল্লির কাছে বশ্যতা স্বীকার করিনি। যারা তৃণমূল থেকে গেছিল, তারা ভেবেছিল বিজেপি সত্যি বোধহয় আচ্ছে দিন আনবে। এই যে অর্জুন সিং ফিরে এসেছেন, কারণ একটাই, তিনি বুঝেছেন বিজেপিতে যাওয়া, বাংলার জন্য খাল কেটে কুমীর আনা এক। আজ তিনি চটকল শিল্প নিয়ে সরব হয়েছিলেন, তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।
  9. এখনও অনেক গদ্দার, মীরজাফর, দু’নম্বরিরা লাইনে আছে। আমি আপনাদের বলছি, দরজা বন্ধ করে রেখেছি। আমার কথা বোঝেন তো? আমি আছি বলে একটু চাপে আছে। দরজা বন্ধ। আপনারা কি চান দরজা খুলব? নাকি বন্ধ রাখব? আমরা দরজা খুলে দিলে ওই দলটাই উঠে যাবে। এই যে বড় বড় ভাষণ দেয় সব যাবে। এই যে কথায় কথায় বলে সবথেকে বড় দল। তা ছোট্ট দলে নাম লেখানোর জন্য বড় দল থেকে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, বড় দলের লোকেরা কী করছেন?
  10. এমন এমন লোক লাইনে আছে যদি নাম বলি, সাংবাদিকবন্ধুরা যাঁরা চেয়ারে বসে, সকলে উঠে পড়বেন। শুধু বলব, আগামিদিনে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা সকলে তাকিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। শূন্য করতে হবে বিজেপিকে বাংলার মাটিতে।
  11. বিজেপি সবাইকে ইডি সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে আটকে রেখেছে। আমায় ক’বার ডেকেছে, আমি দু’বার দিল্লি গেছি। কোনও প্রোটেকশন ছাড়াই গেছি। আমি নিরাপত্তা চাইওনি। আমি প্রথম দিন যা বলেছি, আজও তাই বলছি। আমার বিরুদ্ধে যদি কিছু প্রমাণ করতে পার, কোনও ইডি সিবিআই লাগবে না। ফাঁসির মঞ্চ করবে আমি মৃত্যুবরণ করব। দেড় বছর আগে বলেছিলাম, আজও এটাই বলছি।
  12. হেরে যাওয়ার পর চারটে মন্ত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করল। কেন, তাঁদের নারদায় দেখা গিয়েছে। কেন তোমার সবথেকে বড় তোলাবাজ হিরো, তোমার সবথেকে বড় তোলাবাজির নায়ক তাঁকে গ্রেফতার করা হল না? সুদীপ্ত সেন যাঁর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে চিঠি লিখে গিয়েছে। এই সিবিআই নিরপেক্ষ? মুখ্যসচিবকে অ্যাটাচ করে করে দিল। বাংলার উপনির্বাচনে একের পর এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় দেখে সমস্ত বরাদ্দ টাকা বন্ধ করে দিল। ১০০ দিনের কাজের টাকাও বন্ধ। বাংলায় হেরেছে বলেই দু’বার পেট্রোলের দাম কমিয়েছে।
  13. আমি জয় হিন্দ জয় বাংলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জয় শ্রীরামের রাজনীতিতে নই। যদি কেউ তৃণমূল কংগ্রেসে ঢোকে, আমরা তৃণমূলের আদর্শ বদলাব না। সে আদর্শ পাল্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তৃণমূলে ঢুকছেন। আমরা আদর্শ পাল্টাই না।