বাংলা মাটিতে সোনার ধান ফলাতেই আমেরিকা পাড়ি দিচ্ছেন বর্ধমানের আকাশ
কম জলে কী ভাবে ফলবে ধান, সেই নিয়েই গবেষণা করবেন আকাশ।
বর্ধমান: আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। কিন্তু মাটিতে সোনা ফলানোর স্বপ্ন দেখেন ক’জন! প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। যারা অন্ন জোগায়, তাদের ঘরে কতটুকু অন্ন পৌঁছয় সে খবরই বা রাখে কে? বাংলার মাটিতে ফসল ফলিয়ে যাতে লাভের মুখ দেখতে পারেন তাঁরা, সেই জন্যই ধান চাষকেই গবেষণার বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন বর্ধমানের আকাশ দত্ত। আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিচ্ছেন তিনি।
আমেরিকার রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ধান গবেষণায় এশিয়া মহাদেশ থেকে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র দু’জন। যার মধ্যে একজন বাংলাদেশের নাগরিক ও অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের আকাশ দত্ত। ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন বর্ধমান শহরের ৪ নম্বর ইছলাবাদ এলাকার বাসিন্দা আকাশ। বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে পরিস্থিতি বদলে যাওয়া আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে উন্নতমানের উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনের লক্ষ্যেই তার এই গবেষণা বলে জানিয়েছেন আকাশ।
গবেষণা শেষ করে এ দেশের মাটিতে তাঁর গবেষণার ফল প্রয়োগ করতে চান তিনি। আকাশ বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে খরা এবং অতিবৃষ্টির জন্য আমাদের রাজ্যে প্রচুর ধান নষ্ট হয়, সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় চাষিদের। তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যাতে চাষের কোনও অসুবিধা না হয়, চাষিরা যাতে ঠিক মতো ফসল উৎপাদন করতে পারেন, মূলত সেদিকেই নজর দেবেন তিনি।’ তিনি চান যাতে কম জলে ধান ফলানো সম্ভব হয়। পাশাপাশি বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি। গবেষণা শেষে দেশে ফিরে বাংলার মাটিতে কৃষি নিয়েই কাজ করবেন তিনি।
আকাশ জানিয়েছেন, ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি প্রজেক্ট জমা দিতে বলা হয়। গবেষণা সংক্রান্ত সেই প্রজেক্টের ভিত্তিতেই ১০০ শতাংশ স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন তিনি। মূলত পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত হয় এমন ধান নিয়ে গবেষণা করতে চান তিনি। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে ধান গাছের জেনেটিক ম্যানুপুলেশনই হলো তাঁর গবেষণার বিষয়।
তিনি জানান, এ বিষয়ে সবথেকে বেশি উৎসাহ পেয়েছেন তাঁর বাবা তারাপদ দত্তের কাছ থেকে। তারাপদ বাবু জানান, তিনি নিজে একজন কৃষক পরিবারের মানুষ। এমনকি নিজে এখনও চাষবাস দেখাশুনো করেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন কৃষি দফতরে কর্মরত ছিলেন। তাই তাঁর ছেলে এ রকম একটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ায় তিনি যথেষ্ট খুশি। এতবড় আন্তর্জাতিক গবেষণার ক্ষেত্রে সু্যোগ পাওয়ায় খুশি পরিবারের সকলেই। তাই আকাশের বাড়ি জুড়ে এখন বিদেশ যাত্রার তোড়জোড়। আরও পড়ুন: ঝড়বৃষ্টি কিছুটা কমতেই উঠে আসছে তাণ্ডবলীলার চিত্র, বন্যায় মৃত ১৪৯, নিখোঁজ শতাধিক