Howrah Businessman Murder: গ্রামের বাড়়ির অদূরেই সেচ জমিত উদ্ধার অস্ত্র-পিস্তল ভর্তি ব্যাগ! হাওড়ার ব্যবসায়ী খুনে নয়া মোড়
Purbo Bardhaman: প্যান্টটি ব্যাগ থেকে বের করতেই তিনি দেখেন পিস্তল ভরা আছে তাতে। তারপর তিনি গ্রামে ফিরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উৎপল মালিককে বিষয়টি জানান।
বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের (Purbo Bardhaman) রায়নায় হাওড়ার (Howrah) ব্যবসায়ী খুনে (Howrah Businessman Murder) নয়া মোড়। নিহত ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলের গ্রামের বাড়ির অদূরেই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় একটি কালো ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে ছিল দুটি পিস্তল, পাঁচ রাউণ্ড গুলি, একটি ভোজালি ও একটি প্যাণ্ট।
শনিবার দুপুরে রায়নার উচিতপুর গ্রামের বাসিন্দা বিজন ঢালি তাঁর ধানের জমি দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানেই একটি কালো রঙের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখতে তিনি। ব্যাগটি বর্ধমান কাড়লাঘাট রোডের ধারে সেচখালের জলে পড়েছিল। বিজন ঢালির বয়ান অনুযায়ী, ব্যাগের চেন খোলা ছিল। তিনি ব্যাগের ভিতর হাত দিয়ে দেখেন ব্যাগটি বেশ ভারী। ব্যাগের ওপরের দিকেই একটি প্যাণ্ট ছিল পলিথিনে মোড়া। প্যান্টটি ব্যাগ থেকে বের করতেই তিনি দেখেন পিস্তল ভরা আছে তাতে। তারপর তিনি গ্রামে ফিরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উৎপল মালিককে বিষয়টি জানান।
এরপর পঞ্চায়েত সদস্য থানায় ও মুগরা পঞ্চায়েতে বিষয়টি জানান। রায়না থানার পুলিশ গিয়ে ব্যাগটি জল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। মুগরা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিক্রম গুহ ও পঞ্চায়েত সদস্য উৎপল মালিক জানান, ব্যাগের মধ্যে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি মোবাইল চার্জার,একটি প্যাণ্ট,পাঁচ রাউন্ড গুলি ও একটি ধারাল ছুরি বা ভোজালি ছিল। পুলিশ ব্যাগটি উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। দেরিয়াপুর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে এই ব্যাগটি সেচখালের জলে ভাসছিল। দুটি পিস্তলের মধ্যে একটি ওয়ান শার্টার ও একটি সেভেন এমএম।
এরপরই রবিবার সকালে সিআইডির চার সদস্যের টিম সব্যসাচী মণ্ডলের দেরিয়াপুরের বাড়িতে যায়। পরিবারের দুই মহিলা সদস্যাকে খুনের রাতের ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী অফিসাররা। যান ফরেনসিক টিমের সদস্যরাও। তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সিঁড়ি ও ছাদের বিভিন্ন জায়গার নমুনা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক টিম।
গত শুক্রবার কলকাতার এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার গ্রামের বাড়িতে। সব্যসাচী মণ্ডল নামে বছর চুয়াল্লিশের ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি রায়নার দেরিয়াপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি থাকেন হাওড়ার শিবপুরে। সেখানে তাঁর পলিথিনের ব্যবসা রয়েছে।
শুক্রবার সব্যসাচী মণ্ডল এক বন্ধুকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি দেরিয়াপুরে যান। তদন্তে নেমে এ পর্যন্ত পুলিশ জানতে পেরেছে, রাতে বাড়ির ছাদে রান্না হচ্ছিল। সেই সময় সব্যসাচী মণ্ডলের গাড়ির চালক তাঁকে ছাদ থেকে নীচে ডেকে নিয়ে যান। সব্যসাচীর খোঁজে কেউ এসেছেন বলে গাড়ি চালক জানান।
পরিবারের দাবি, তারপরই সব্যসাচীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন তাঁর বন্ধু রাজবীর সিং ও রাধুনি পার্থ সান্ন্যাল। তাঁরাই সব্যসাচীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় গাড়ির চালক ও রাঁধুনি, দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। এরই মধ্যে মৃতের বাবা দেবকুমার মণ্ডল একটি চাঞ্চল্যের দাবি করে বসেন। তাঁর দাবি, তাঁদের পরিবারে সম্পত্তি নিয়ে চরম বিবাদ চলেছে। ২০১৬ সালে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর ভাইপোরা তাঁর ছেলেকে শ্মশানে বেধড়ক মারধর করেন।
সব্যসাচীর বাবার ধারণা, তাঁর দুই ভাইপো দীনবন্ধু এবং সোমনাথ সুপারি কিলার লাগিয়ে তাঁর ছেলেকে গুলি করে কুপিয়ে খুন করিয়েছেন। শনিবার রায়না থানায় তাঁর ছোট ভাই গৌরহরি মন্ডল, ভাতৃবধু পূর্ণিমা মন্ডল, ভাইপো দীনবন্ধু ও সোমনাথের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তাঁর আবেদন, দ্রুত অপরাধীরা শাস্তি পাক।
সব্যসাচীর বাবা বলেন, “আমার বাড়িতে অনেক ঝামেলা রয়েছে। ভাই ভাইয়ে সম্পত্তি নিয়ে এসব হয়েছে। আমার ছেলেটাকে সুপারি কিলার লাগিয়েই খুন করা হচ্ছে। নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। দোষীরা যাতে ধরা পড়ে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সম্পত্তি নিয়ে ভাই ভাইয়ে ঝামেলা ছিল। আমার ছোট ভাইয়ের ছেলের এসব কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে। এটাই আমার আইডিয়া। এটা সুপারি কিলার দিয়েই করানো হয়েছে। আগেও আমার ভাইয়ের ছেলেরা আমার ছেলেকে মারধর করেছে। আমি ভাইয়ের পা ধরে বলেছিলাম, আমার ছেলেকে ছেড়ে দে… জুতো পরে লাথি মেরেছিল। এটা ২০১৬ সালে মহালয়ার আগের দিনের ঘটনা। আমার এই ভাইপো দুটোই এই কাজ করেছে।” ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই সব্যসাচীর বাবা। তবে বিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারস্থ তিনি।