‘টাকা দিয়ে কেস মেটাতে বলেছে পুলিশ,’ সিবিআই অফিসারের পা জড়িয়ে বিচার চাইলেন বিজেপি কর্মীর মা

CBI: "উপপ্রধান বলে এত টাকা দেব যে সারাজীবন খেয়ে পরে শেষ হবে না। শুধু ছেলের দেহ নিয়ো না।'' এরপর পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মৃত বিজেপি কর্মীর মা।

'টাকা দিয়ে কেস মেটাতে বলেছে পুলিশ,' সিবিআই অফিসারের পা জড়িয়ে বিচার চাইলেন বিজেপি কর্মীর মা
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 29, 2021 | 9:12 PM

পূর্ব বর্ধমান: ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে সিবিআই (CBI) আধিকারিকের পা জড়িয়ে ধরলেন মৃত বিজেপি কর্মীর মা। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল (TMC) আর পুলিশ (Police) মিলে টাকা দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করে দিতে চাইছে। ‘কিন্তু চোখের সামনে তরতাজা ২২ বছরের ছেলের মরে যাওয়ার দৃশ্য ভুলব কী করে!’ সিবিআই-র কাছে বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা। রবিবার এমনই ঘটনা ঘটল পূর্ব বর্ধমানের কালনার কেতুগ্রামে শ্রীপুর গ্রামে।

ভোট পরবর্তী হিংসা (Post Poll Violence)-র ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই (CBI)। রবিবার হাওড়া, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমানের মতো জেলাগুলিতে যান সিবিআই আধিকারিকরা। এদিন কালনা এলাকায় ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃত বিজেপি কর্মী বলরাম মাঝির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন সিবিআই-র ৩ আধিকারিক। আর তাঁদের দেখামাত্রই পা জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কেতুগ্রামে শ্রীপুরের মৃত বিজেপি কর্মীর মা টুম্পা মাঝি। ছেলের মৃত্যু বিচার চেয়ে অভিযুক্তদের নামও তিনি সিবিআই-র কাছে বলেছেন বলে জানান। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল টাকা দিয়ে ছেলের খুনের তদন্ত চাপা দিতে চাইছে। পুলিশও তাদের সঙ্গে আছে। তার পরে কি আর বিচার মিলবে? কান্নাভরা চোখে প্রশ্ন ২২ বছরে মারা যাওয়া বলরামের মায়ের।

তিনি জানান, সিবিআই আধিকারিকদের পা ধরে তিনি বিচার চেয়েছেন। বলেছেন, তৃণমূল টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে বলেছিল। পুলিশও টাকা দিতে চেয়েছিল। এছাড়াও স্তানীয় পঞ্চায়েত প্রধান প্রচুর টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাপ দিয়েছে। সিবিআই অফিসারের পা ধরে মৃত বিজেপি কর্মীর মা বলেন, “তৃণমূল টাকা দিয়ে পুলিশকে সেট করেছে। তৃণমূল আমাদেরও টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে বলেছিল। পুলিশও টাকা দিতে চেয়েছিল। এছাড়াও স্তানীয় পঞ্চায়েত প্রধান প্রচুর টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাপ দিয়েছে।”

উল্লেখ্য, গত ২ মে একুশের ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর জেলায় জেলায় হিংসার খবর পাওয়া যায়। গত ৪ মে এমনই এক রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ২২ বছরের বিজেপি কর্মী বলরাম মাঝির। বিজেপির অভিযোগ, কয়েকটি বুথে বিজেপি ভোটে লিড পাওয়ায় কর্মী তো বটেই বিজেপি সমর্থকদের বাড়িতেও হামলা হয়। সেদিন ভাঙচুর হয় ৫০টিরও বেশি বাড়ি। আহত হন একাধিক বিজেপি সমর্থক। সেদিন রক্তাক্ত বলরামকে উদ্ধার করে কাটায়ো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে সেখান থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে ফেরানো যায়নি বলরামকে। পরের দিন অর্থাৎ, ৫ মে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর।

এদিকে এদিন সিবিআই আধিকারিকদের তদন্তের পর সাংবাদিকদের মৃত বলরামের মা জানান, হাসপাতাল থেকে তাঁর ছেলের মরদেহ আনতেই বাধা দেয় তৃণমূল। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে একই সুরে কথা বলে বর্ধমান পুলিশও। তাঁর কথায়, “আমার ছেলে সেদিন ন’টায় মারা যায়। তার দেহ আনতে বাধা দেয় তৃণমূল। তখন থেকেই পুলিশের সঙ্গে তৃণমূলের উপ-প্রধান ছেলেকে আনতে দেয়নি। বলে দিদি, ছেলে নিয়ে যেয়োনা। ছেলে নিয়ে গেলে অনেক দূর জল গড়িয়ে যাবে।” তার পরেও তিনি ছেলের মরদেহ আনতে চাইলে তাঁকে টাকাপয়সার লোভ দেখানো হয় বলে অভিযোগ। বলরামের মায়ের কথায়, “উপপ্রধান বলে এত টাকা দেব যে সারাজীবন খেয়ে পরে শেষ হবে না। শুধু ছেলের দেহ নিয়ো না।” এরপর পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মৃত বিজেপি কর্মীর মা। বলেন, “বর্ধমান থানার পুলিশও তো টাকা দিয়ে ছেলেকে কিনতে চেয়েছিল। আমার ছেলে যে শাহ হোসেন আমার ছেলেকে মেরেছে। আমাকে অস্ত্র দিয়ে আটকে দেয়। আমি কি বিচার পাব না?” ফের কান্নায় ভেঙে পড়েন ২২ বছরের ছেলের মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখা জননী।

যদিও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহনেয়াজের দাবি, ভোট পরবর্তী হিংসায় নয়, পারিবারিক বিবাদেই খুন হয়েছিলেন ওই যুবক। আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে সিবিআই, পাশে দাঁড়িয়ে ভিডিয়ো রেকর্ডিং পুলিশের! তীব্র ভর্ৎসনা