Bengal BJP: সরানো হল কৃষ্ণকে, এবার কাটোয়া সামলাবেন বিজেপির গোপাল
BJP: একসময় এবিভিপির সদস্য ছিলেন গোপাল চট্টোপাধ্যায়। এরপর থেকে মনেপ্রাণে বিজেপি করেছেন তিনি।
রাজ্য বিজেপির তরফে শনিবারই ৪২টি সাংগঠনিক জেলা সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেই তালিকায় এবার কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হিসাবে নাম উঠে এসেছে গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের। বিজেপির দাবি, দলের নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের পর সভাপতি বদল হয়। সেইমতোই এবার বদল করা হল।
কিন্তু জেলা বিজেপি কর্মীদের একাংশের মতে, একেবারেই হিসাবটা এতটা সরল নয়। কারণ, প্রাক্তন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল দলের অন্দরে। দুর্নীতিতেও নাম জড়িয়েছিল তাঁর। বিজেপি নেতা, কর্মীরাই তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। আন্দোলনে নেমেছিলেন। এমনকী নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাওয়ার পর যখন বিভিন্ন জায়গায় দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তখন কৃষ্ণ ঘোষ তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াননি বলেও অভিযোগ।
গত ২২ অক্টোবর তো সেসব অভিযোগ সীমা পার করে যায়। নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখে পড়েন। দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তিনি দাঁইহাটে ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। দলীয় কার্যালয়ের ভিতরেই বসে ছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে একদল বিজেপি কর্মী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
তাঁদের অভিযোগ ছিল, যে সময় বৈঠকটি হবে বলে ঠিক হয়, তার আগেই তা শুরু করে দেওয়া হয়। কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষই এর জন্য দায়ী বলে সরব হন দলেরই একাংশ। ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে সেদিন বিজেপি কার্যালয়ে। চেয়ার ভাঙচুর, ধাক্কাধাক্কি, চড় চাপাটি থেকে বিজেপির পতাকা লাগানো লাঠি দিয়ে দলীয় কর্মীদেরই মারামারি — অভিযোগ থেকে বাদ যায়নি কিছুই।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য ছিল, “আমাদের কোনও ভাঙচুর হয়নি। প্রতিবাদ একটু চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। আর কিছুই না। আমরা যারা কাউন্টিংয়ে ছিলাম মরতে মরতে বেঁচেছি। ৬৮ জন কর্মী আহত হয়েছেন, ২৬টা বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ৭টা গুমটি ভাঙচুর হয়েছে। জেলা সভাপতি ও মণ্ডল সভাপতিদের বার বার ফোন করলেও আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। আমরা অবহেলিত অবস্থায় ছিলাম।”
বিক্ষোভকারীদের সংযোজন ছিল, ” দলের কর্মীদের বিপদে জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ থেকে শুরু করে জেলা কমিটির কেউ আসেনি। ওরাই চুপি চুপি বৈঠকটা সেরে ফেলতে চাইছিল। ওদের লক্ষ্য কোনও ভাবেই রাজ্য সভাপতির কাছে যাতে বার্তা না যায়, এ জেলার দলের ভিতর বিক্ষোভ আছে। এর জন্য দায়ী দিলীপ ঘোষ। এই জেলা সভাপতিকে বাঁচানোর জন্যই উনি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ঘুরছেন। দিলীপ ঘোষের সায় রয়েছে।”
পাল্টা দিলীপও বলেছিলেন, “আমাদের যাঁরা কর্মী সকলেই ঠিক আছেন। কিছু উটকো লোক নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে ভেবে এসেছিলেন দলে। বিরোধী পক্ষের রাজনীতি করাটা খুব কঠিন কাজ। শাসকদলের নানা অত্যাচার থাকে। এতেই অনেকে হতাশ হয়ে গিয়েছেন। অনেকে একটু ভয় পেয়েছেন। তবে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের বিরোধী দলনেতা, রাজ্য সভাপতি সকলেই তরুণ, লড়াকু। পুরো রাজ্যে দল সুসংহত। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এখানে সভাপতি আছেন, তাঁকে লিখিত জানাতে পারেন। এসব মানা যায় না।”
এসবের মধ্যেই দেখা গেল কাটোয়া জেলা সভাপতি এবার বদল করেছে রাজ্য নেতৃত্ব। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলে ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকবেই। সকলের সব সিদ্ধান্ত ভাল না-ই লাগতে পারে। তবু পরিবর্তন তো হবেই। আজ আমি আছি, কাল অন্য কেউ আসতে পারে। দলের নিয়ম মেনে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁরাই প্রকৃত বিজেপি কর্মী। রাজ্য সভাপতি যেমন বলবেন, সেই মতোই কাজ করব। আমার কাছে নবীন প্রবীণ বলে কিছু নেই। সকলেই বিজেপি কর্মী।”
আরও পড়ুন: Bengal BJP: বিজেপিতে বাড়ছে ‘লেফট’! এবার ছাড়লেন পাঁচ বিধায়ক, বেরিয়ে গেলেন শীলভদ্র-রাজুও