Panihati Chaos: টিভির পর্দায় খবরটা দেখেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল পাল পরিবারের, দণ্ড মহোৎসবে একই গ্রামের তিনজন শেষ…

Purbasthali: তিনজনই পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমার পূর্বস্থলীর বাসিন্দা। পূর্বস্থলীর যোগেশ্বরপুর গ্রাম। সেখানেই তাঁদের বাড়ি।

Panihati Chaos: টিভির পর্দায় খবরটা দেখেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল পাল পরিবারের, দণ্ড মহোৎসবে একই গ্রামের তিনজন শেষ...
ছায়া দাসের নাতনি পিঙ্কি দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 13, 2022 | 12:51 AM

পূর্ব বর্ধমান: পানিহাটির দণ্ড মহোৎসব ঘিরে রবিবার দুপুর থেকে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য। উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির ৫০০ বছরের পুরনো এই মহোৎসবে যোগ দিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ গিয়েছিলেন। এলাকার কারও কারও কাছে দণ্ড মহোৎসব দই চিঁড়ে মেলা হিসাবেও পরিচিত। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এই মেলায়। করোনার কাঁটা পার করে এবার সে ভিড় আরও কিছু বেশিই হয়েছিল। এদিকে তীব্র অস্বস্তিকর গরমে হাসফাঁস করে শেষ হয়ে যায় তিনটি টাটকা প্রাণ। তিনজনই পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমার পূর্বস্থলীর বাসিন্দা। পূর্বস্থলীর যোগেশ্বরপুর গ্রাম। সেখানেই তাঁদের বাড়ি। মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছতেই শোকের ছায়া গ্রামজুড়ে। দিনভর টেলিভিশনের পর্দায় চোখ ছিল যোগেশ্বরপুরের মানুষের। চেনা মুখগুলো যে এভাবে এত দূরের হয়ে যাবে, এখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাঁরা।

যোগেশ্বরপুর গ্রামের সুভাষ পাল (৭৩) ও তাঁর স্ত্রী শুক্লা পাল পানিহাটির এই মেলায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন গ্রামের ছায়া দাস নামে আরেকজনের। তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে এদিন। সুভাষ পালের ভাই রণজিৎকুমার পাল। রণজিৎবাবু বলেন, “দাদার বড় মেয়ে এসেছিল ষষ্ঠীর দিন। হইহই হল। এরপর পানিহাটিতে ওদের একটা ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানে চলে যায়। আমার সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছিল। ওরা গীতা পাঠ করে, ওদের একটা দল আছে এখানে। তাদের অনেককেই বলেছিল পানিহাটির দণ্ড উৎসবে যাওয়ার জন্য। সেখানে চিঁড়ে দই খাওয়া হয়, বড় মেলাও হয় শুনেছি। গ্রাম থেকে অনেকে আজ ভোরে গিয়েছেন। এরইমধ্যে এই খবর পাই।”

রণজিৎবাবু জানান, প্রথমে বিশ্বাস হয়নি তাঁর। টিভিতে স্থির দৃষ্টি ছিল। এরইমধ্যে মোবাইল ফোনে ছবি আসে। তিনি বলেন, “মোবাইলের ছবিতে দাদাকে দেখে চিনতে পারি। বৌদিও ছিল। আরেকজনকেও দেখলাম। দাদাকে ভালভাবেই চিনেছি। ভিড়ের চাপে এমনটা হয়েছে শুনলাম। এমনিতে দাদার একটু শ্বাসকষ্ট ছিল। হতে পারে দাদার এই অবস্থা দেখে বৌদিও হয়ত হার্টফেল করেছে।”

অন্যদিকে ছায়া দাসের নাতনি পিঙ্কি দেবনাথ দিদার মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পিঙ্কি বলেন, “আজ ভোরে দিদা সোদপুরে গিয়েছিল। পাল মামারা বারবার যেতে বলেছিল, ওখানে অনুষ্ঠান আছে। ওখানে ওরা নতুন ফ্ল্যাট নিয়েছে। এদিকে দুপুরের দিকে ছেলেদের কাছে পাল মামাদের খবরটা প্রথম পাই। এরপরই কেমন একটা লাগছিল। এরইমধ্যে দিদার খবরও আসে।”

রণজিৎবাবুর অভিযোগ, “প্রশাসনের অবশ্যই গাফিলতি আছে। এত মানুষ একসঙ্গে যাচ্ছে। আরও জোরদার ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। শুনলাম মেলায় মাত্র দু’টো রাস্তা। একদিক দিয়ে মানুষ ঢুকছে, অন্যদিক দিয়ে বেরোচ্ছে। এত লোক একসঙ্গে। জ্যাম পুরো। কারও এগোনো পিছনোর জায়গা ছিল না। হতে পারে প্রশাসন বোঝেনি এত লোক হবে। তারাও হয়ত অতটা গুরুত্ব দেয়নি।” একই সুর পিঙ্কি দেবনাথের গলায়ও। তিনি বলেন, “সমস্ত জায়গায় প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে। এখানেও রাখা উচিৎ ছিল। কেন রাখা হল না জানি না। উচিৎ ছিল একটা ব্যবস্থার। তাহলে মনে হয় না এমন হতো। তেমন অসুস্থও ছিল না দিদা।”