Old woman social work: ৯১-তেও নদী পেরিয়ে গ্রামবাসীর চিকিৎসা করাতে ছুটে যান তমলুকের ‘মাতঙ্গিনী’
Old woman social work: হাওড়া জেলার রূপনারায়ণের তীরের গ্রামগুলিতে যাঁদের বাস, তাঁরা একডাকেই চেনেন 'মাসি'কে।
তমলুক: রূপনারায়ণের তীরে তিনি যেন ত্রাতা। পরিবারে আচমকা বিপদ এলে মুস্কিল আসান একজনই- ‘হাওড়া জেলার মাসি’। ফোন করলেই ছুটে আসেন। অসুস্থ মানুষকে নিয়ে নদী পেরিয়ে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান মাসি। একদিন নয়, প্রতিদিন। ঝড় আসে, বৃষ্টি নামে, সে সব মাথায় করে নৌকার এক কোণে বসে নদী পেরোন রোজ সকালে। নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না কোনওদিন। এভাবেই বয়স পৌঁছেছে ৯১-তে। স্বামী নেই। ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি নিয়ে ভরা সংসার। তবু ক্লান্তি নেই। বিপদে পাশে দাঁড়িয়েই আনন্দ পান গৌরী দেবী। এত বয়সেও কেন আসেন? পরনের সাদা থান মাথায় টেনে হেসে ফেলেন বৃদ্ধা। বলেন, ‘না এসে থাকতে পারি না।’
হাওড়া জেলার রূপনারায়ণের তীরের গ্রামগুলিতে যাঁদের বাস, তাঁরা একডাকেই চেনেন ‘মাসি’কে। ওই সব গ্রামের মানুষ অসুস্থ হলে, চিকিৎসা করাতে যেতে হয় পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। অসুস্থ মানুষকে নদী পেরিয়ে নিয়ে গিয়ে কোথায় ভর্তি করাবেন, কোন ডাক্তারকে দেখাবেন, তা বুঝে উঠতে পারেন না গ্রামের মানুষ। তাই ডাক পড়ে ‘মাসি’র। মাসি সব জানেন। কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, কোথায় বেড মিলবে, কোথা থেকে ওষুধ কিনতে হবে- সব। গ্রামবাসীর কাছে তিনি যেন মাতঙ্গিনী।
সামান্য টাকার বিনিময়ে এভাবেই মানুষকে ভরসা জোগাচ্ছেন তিনি। ৪৫ বছর ধরে করছেন এই কাজ। তিনি থাকলে আর ভয় পান না গ্রামের মানুষ। ব্যবস্থা একটা হবেই! শুধু হাওড়া নয়, তমলুকের চিকিৎসক মহলেও তাঁর বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। ডাক্তাররাও তাঁকে হাওড়া জেলার মাসি নামেই চেনেন। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, ওষুধ দোকান থেকে প্যাথোলজি সেন্টার- সর্বত্রই তাঁর একটাই পরিচয়। তাঁর বাড়ি হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানা এলাকার গ্রামে।
এখন আর শুধু হাওড়া নয়, আশপাশের অন্যান্য় জেলার মানুষও জানেন মাসির কথা। ঘাটালের ঝন্টু গায়েন জানান, ঘাটাল থেকে তমলুকে এসেছেন তিনি, মায়ের চিকিৎসা করাতে। ভরসা সেই মাসি। মাসি থাকলে কোনও বিষয়েই চিন্তা করতে হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি।
গৌরী দেবী জানান, ৪৫ বছর আগে স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রথম তমলুকে যাওয়া। তারপর থেকেই চিকিৎসক মহলে পরিচিতি গড়ে ওঠে তাঁর। কোথায়, কাকে দেখাতে হবে বুঝে যান তিনি। ফোন করলেই তিনি পৌঁছে যান। বৃদ্ধা বলেন, ‘নাতি-নাত বউকে নিয়ে এখন ভরা সংসার। সবাই নিষেধ করে। কিন্তু থাকতে পারি না। আমি রোজ আসি, রোজ।’