Tajpur port: টালমাটাল আদানি, তৃণমূলের ‘ট্রাম্পকার্ড’ তাজপুর বন্দর তবে কি বিশবাঁও জলে?

Tajpur port: যদিও শাসকদলের দাবি, সবটাই অপপ্রচার বিজেপির। আদানি গোষ্ঠী কাজ শেষ করবে। অন্যদিকে, শাসকদলের এই আশাকে মিথ্যে বলে দাবি বিরোধীদের।

Tajpur port: টালমাটাল আদানি, তৃণমূলের 'ট্রাম্পকার্ড' তাজপুর বন্দর তবে কি বিশবাঁও জলে?
কী হবে তাজপুর বন্দরের ভবিষ্যত? (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 05, 2023 | 2:11 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: হিন্ডেনবার্গের রিসার্চের রিপোর্ট আসার পর থেকেই বিপাকে পড়েছে আদানি গোষ্ঠী (Adani । আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দর হুড়মুড়িয়ে পড়েছে। গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা দু্র্নীতির অভিযোগের তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। আর এই ‘আদানি ঝড়’ আছড়ে পড়ছে বঙ্গেও। কারণ রাজ্যের উন্নয়ন-কর্মসংস্থানের দিশা তুলে ধরতে বারবার তাজপুর বন্দরের কথা বলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই বন্দরের জন্য ইচ্ছাপত্র তুলেও দেওয়া হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধারের হাতে। ভৌগলিক অবস্থান-সহ একাধিক সমস্যার সমাধান করে বন্দর তৈরির দায়িত্ব নেয় আদানি গোষ্ঠী। তবে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট আসার পরই বিপাকে পড়েছে তারা। তাহলে ঘাসফুল শিবিরের ‘ট্রাম্পকার্ড’ তাজপুর বন্দর কি বিফলে যাবে? জোর জল্পনা। যদিও শাসকদলের দাবি, সবটাই অপপ্রচার বিজেপির। আদানি গোষ্ঠী কাজ শেষ করবে। অন্যদিকে, শাসকদলের এই আশাকে মিথ্যে বলে দাবি বিরোধীদের।

২০২৩ ও ২০২৪ সালে পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচন যথাক্রমে। তাই পদ্ম শিবিরকে টেক্কা দিতে ‘ঘাসফুল’ শিবিরের ‘ট্রাম কার্ড’ তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তাজপুরে আদৌ গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। তারপর বন্দর হলেও তা কে গড়বে, দোলাচল ছিল তা নিয়েও। অবশেষে জট কাটিয়ে তাজপুরে বন্দর তৈরির জন্য আদানি গোষ্ঠীকে দায়িত্ব ভার দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আদানিদের নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় ফের আশঙ্কার মেঘ তাজপুরে।

সূত্রের খবর, রামনগর বিধানসভার শঙ্করপুরে তাজপুর বন্দরের যে সাইট অফিস খোলা হয়েছে সেখানে থাকেন না কেউ। দু’একজন কেয়ার টেকার রয়েছেন এই অফিসে। তিন জন নিরাপত্তারক্ষীর এক কর্মী সর্বক্ষণ থাকেন। তাঁরা জানান, ‘কিছু জানতে হলে দিঘা শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের অফিসে যান আমরা কিছুই জানি না।’

পুজোর আগে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদল ও প্রশাসনের লোকজন এসেছিলেন। বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত কিছু এলাকা ঘুরে দেখেছিলেন তাঁরা। তারপর জমির সীমা নির্ধারণে পতাকা লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এরই মধ্যে আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশ জুড়ে চলা তোলপাড় ও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানা পড়ে ও। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয় সাপেক্ষ। আর্থিক বিপর্যয় কাটিয়ে আদানিরা কি বন্দরের কাজ করবে, বোঝা যাচ্ছে না। শঙ্কায় শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বও।

জানা যাচ্ছে, গত ১২ অক্টোবর সরকারি বিজয়া সম্মিলনীতে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির পুত্র করণ আদানির হাতে তাজপুর বন্দর নির্মাণের সম্মতিপত্র তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রিনফিল্ড প্রযুক্তিতে এই বন্দর তৈরিতে ‘ইন্টেনশন ১৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে। পরিকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ হবে আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

রামনগরে বিধায়ক ও মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, “রাজ্যের বিরোধীরা উন্নয়ন চায় না। তাই শুধুই বিরোধিতা করতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্যে বাংলার উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যারা দায়িত্ব নিয়েছে আমরা আশাবাদী যে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর হবেই।”

‘বিজেপি নেতা ও রামনগরের বিধায়ক স্বদেশ নায়ক জানান, “রাজ্য সরকার কোনও দিন একক ভাবে বন্দর গড়তে পারবে না। তার প্রকৃত পরিকাঠামোই নেই। বার বার বন্দর আর শিল্প গড়ে তোলার নামে রামনগরের মানুষের সঙ্গে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে অন্ধকারে রেখেই এই কাজ হচ্ছে।”

রামনগর ১পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি নিতাই চরণ সার বলেন, “আদানি গোষ্ঠী একটি ব্যাবসায়ী বা শিল্পপতি। ওনারা যখন কাজ নিয়েছে নিশ্চিতরূপে কাজ হবে এখানে ও কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। অনুসারী শিল্প, রেলপথ, সড়কপথ, সার্বিকভাবে বিকাশ হবেই। ইতিমধ্যে ৫ হাজার একর জমি সরকারে হাতেই রয়েছে। বন্দর ছাড়াও ৪ থেকে ৫ হাজার একর জমি সংযুক্তিকরণ হবে বলেই মত।”

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিক বলেন, “প্রথম থেকেই বলে আসছি, তাজপুর বন্দর নিয়ে রাজ্য সরকার জেলাবাসীকে মিথ্যা আশা দেখাচ্ছে। যাই হোক না কেন রাজ্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সরকার কে যে কোনও মূল্যে করতেই হবে। বন্দরের সপক্ষে আমরা আন্দোলনে সামিল হব। আর শ্রমজীবী মানুষের কর্ম সংস্থানের জন্য আমাদের লড়াই চলবে।”

প্রশাসনের ব্যাখ্যা সরকারিভাবে ইচ্ছাপত্র বা ‘ইন্টেনশন অব অ্যাকসেপটেন্স’ দেওয়ার পাশাপাশি বন্দর তৈরির জন্য সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তা এখনও পেরোয়নি। ফলে এখন কোনও পদক্ষেপ করলে আইনি জটে পড়তে পারে বন্দরের ভবিষ্যৎ।

সূত্রের খবর, প্রতিনিয়ত নজরদারি রয়েছে প্রশাসনের। পরিবেশ দফতর, ভূমি দফতরের ছাড়পত্র পেয়েই ইচ্ছাপত্র নিয়েছেন আদানি গ্রুপ। অনুসারী শিল্পের জন্য ৭০০০ হাজার একর জমি রয়েছে সরকারের। এও জানা যাচ্ছে. বেলদা থেকে তাজপুর পোর্ট পর্যন্ত ট্রেন লাইন চাইছে আদানি গোষ্ঠী। যার খরচ বহন করবেন ওই গোষ্ঠীই। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ করে দিতে হবে সরকারকেই। ক্ষতিপূরণ কে দেবে তা এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। বেলদা থেকে রেল লাইনের দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হবে। প্রাথমিক ভাবে ৩০হাজার মেট্রিকটন পণ্য পরিবহণ করা হবে যা পরে বেড়ে দাঁড়াবে ৭০-৮০ হাজার মেট্রিকটন। আশা করা হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে জামড়া শ্যামপুর, লছিমপুর,জলধা,চাঁদপুর, তাজপুর, দাদনপাত্রবাড় প্রভৃতি বন্দর লাগোয়া গ্রামগুলিরও উন্নতি হবে। তাই আদানির ভবিষ্যতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই সব এলাকার মানুষের ভবিষ্যতও।