‘ভুল করলে গালে একটা থাপ্পড় মেরো, মুখ ফিরিয়ে নিও না মা গো’

অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে মমতা হঠাৎ সামনে বসে থাকা জনতার উদ্দেশে বলে ওঠেন, "আমি এখানে একটা কথা বলতে চাই। আপনারা অভয় দিচ্ছেন তো!"

'ভুল করলে গালে একটা থাপ্পড় মেরো, মুখ ফিরিয়ে নিও না মা গো'
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 18, 2021 | 10:54 PM

নন্দীগ্রাম: সে দিনও ছিল শীতকাল। ডিসেম্বরের শেষের দিক। ২০১৬ বিধানসভা ভোট হতে তখনও তিন-চার মাস বাকি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সভা চলছে নন্দীগ্রামের তেখালিতে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের লড়াই নিয়ে বলতে গিয়ে আবেগঘন মুহূর্তে মশগুল মমতা। পাশে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী। সে দিনও কাক-পক্ষী টের পায়নি এরপর কী হতে চলেছে…

অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে মমতা হঠাৎ সামনে বসে থাকা জনতার উদ্দেশে বলে ওঠেন, “আমি এখানে একটা কথা বলতে চাই। আপনারা অভয় দিচ্ছেন তো!” হতবাক জনতার ‘হ্যাঁ’ শুনে মমতা সে দিন ঘোষণা করেন, “আমি চাই শুভেন্দু আমার মন্ত্রিসভায় কাজ করুক। নন্দীগ্রামের হয়ে কাজ করুক।” করজোড়ে মমতার সেই আদেশ মাথা পেতে নিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মেদিনীপুরের সাংসদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নন্দীগ্রামের মানুষের হয়ে সেই কাজ করা শুরু তাঁর।

এরপর ৫টা বছর কেটে গিয়েছে। আরও একবার বিধানসভা নির্বাচন। সেই নন্দীগ্রাম, সেই মমতা। তাঁর পাশে নেই শুধু শুভেন্দু অধিকারী। পাঁচ বছর পর এই প্রথম নন্দীগ্রামে এসে ঠিক সে দিনের মতোই আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করে সবাইকে চমকে দিলেন মমতা। ঘোষণা করলেন, এ বার তাঁর ‘লাকি’ নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়তে চান তিনি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ, মমতার বক্তৃতার শেষ পংক্তি। জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভুল করলে গালে একটা থাপ্পড় মেরো, মুখটা ফিরিয়ে নিও না মা গো। তোমাদের পাহারাদার হয়েই থাকব। শুধু ভালবেসো।”

এ দিন এ কথাগুলো বলতে বলতে মমতার গলার স্বর ভারী হয়ে আসে। তাঁর দল যে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক সঙ্কটে, মমতার এ সব কথার মধ্যেই স্পষ্ট বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রশ্ন উঠছে, নন্দীগ্রামের মানুষ কি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন, এমন আগাম আভাস পেয়েই মমতা ক্ষমা চেয়ে নিজের জমি পোক্ত করার চেষ্টা করলেন। তবে, এই প্রথম বার নয়, এর আগেও একাধিকবার ‘ভুল স্বীকার’ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬ সালেও তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ২৯৪ আসনে মমতাই প্রার্থী। যদি কিছু ভুলচুক হয়ে থাকে ক্ষমা করে দেবেন।

আরও পড়ুন- দেশে টিকা পেলেন ৩ লক্ষ ৮১ হাজার মানুষ, ৫৮০ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ব্যতিক্রম ছিল না ২০১৯-এও। সারদা, নারদা, কাটমানি-সহ একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে দলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় মমতা নিজের ভাবমূর্তিকেই মূলধন করে ভোটের ময়দানে নামেন। দলের কিছু ‘ভুল’ অকপটে স্বীকার করে জনতার দরবারে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। দেখা যায়, প্রতিবারই তাঁকে শূন্য হাতে ফিরেতে হয়নি। এবারেও কি সেই পথে হাঁটলেন তৃণমূল সুপ্রিমো? তবে, আর কয়েক মাস পর সে উত্তর দেবে নন্দীগ্রামই।