Soumen Mahapatra: প্লাবন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেচ দফতরের ছুটি বাতিলের ঘোষণা সৌমেনের
Bengal Flood: দুর্গত এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও এনডিআরএফ টিম।
পূর্ব মেদিনীপুর: প্লাবন পরিস্থিতিতে বিপদের মুখে বঙ্গ। পুজোর আগেই ফের আরও একটি বন্যা সামলাতে কার্যত যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির পথে রাজ্য। সেই মোতাবেক সেচ দফতরের সকল কর্মীদের ছুটি বাতিল করার ঘোষণা করলেন রাজ্য়ের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। পাশাপাশি, আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের নির্দেশ দিলেন সেচমন্ত্রী।
সৌমেন এদিন বলেন, “মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় গতকাল দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার কিউসেক ও পরে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। এই বাড়তি জল ছাড়ায় তার প্রভাব খানাকুল, হাওড়া উদয়নারায়নপুর, আমতা এইসব এলাকায় পড়বে। আমরা ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে নদীবাঁধের উচ্চতা আচমকা বাড়ানো সম্ভব নয়। ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। নানুরে বন্যা এখনও ভয়ঙ্কর রূপ নেয়নি। ইতিমধ্যেই জোনে ভাগ করে মন্ত্রীদের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখবেন। আমরা সেচ দফতরের তরফে সর্বতোভাবে চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যেই সকল আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।”
রাজ্যের বানভাসি পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকেই (DVC) দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ঝাড়খণ্ডের বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাকে।” তিনি অভিযোগ করেন, না জানিয়ে ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া পাপ। পাল্টা, মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) অভিযোগকে সঠিক নয় বলেই দাবি করেছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন তথা ডিভিসি।
ডিভিসি সূত্রে খবর, মাইথন জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিউসেক করা হয়েছে। দিনে মোট দেড় লক্ষ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এই হারেই জল ছাড়ার পরিমাণ বজায় রেখেছে ডিভিসি। অন্যদিকে, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে জল ছাড়া হচ্ছে ৩৫ হাজার কিউসেক হারে। ঝাড়খণ্ডে যদি ফের বৃষ্টি হয় তবে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে বলেই সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে জল ছাড়া হচ্ছে। বঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি ম্যান-ম্যাড বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। আগামিকাল, শনিবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন মমতা।
নবান্ন সূত্রে খবর, আকাশপথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়া, হাওড়া, পুরুলিয়া ও হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখবেন। উল্লেখ্য, দু’মাস আগেই হাওড়ার বানভাসি এলাকা, আমতা পরিদর্শনে গিয়ে ডিভিসিকে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। ২০০০ সালে রাজ্য জুড়ে বন্যার পর মমতা ‘ম্যান মেড’ তত্ত্ব। তার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ২০১৭ সালে এই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়েও এমনটাই বলেছিলেন তিনি।
দু’মাস আগে বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসি ইস্যুতে সরকারিভাবে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। চারপাতা সেই চিঠির প্রথম লাইনেই মুখ্য়মন্ত্রী লিখেছেন এই বন্যা ‘ম্যান মেড’। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক সীমারেখা স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ডিভিসির জল ছাড়ার জন্যই ডুবতে বসেছে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলা। যদিও পাল্টা ডিভিসির পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়েছিল, রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে একটুও জল ছাড়ে না তারা। জল ছাড়ার পুরো বিষয়টিই রাজ্যের গোচরে রয়েছে। এবারও সেই একই তত্ত্ব খাঁড়া করেন মুখ্যমন্ত্রী।
দুর্গত এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও এনডিআরএফ টিম। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে পৌঁছেছে ২ কলম সেনা। দুর্গতদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৮ হাজার মানুষ দুর্গম এলাকা থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। এই খবরটি সম্প্রচারিত হওয়ার সময়ই খবর আসে, হাওড়ার নরনারায়ণচকের একটি বাঁধ ভেঙে ভেসে যায় গোটা গ্রাম।
ইতিমধ্যেই নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। জেলাশাসক ও পুলিশ সুুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় দুর্গতদের উদ্ধারে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, নামানো হয়েছে এনডিআরএফ টিম।
আরও পড়ুন: Adir Chowdhury: ‘দিদির মুখে গ্যাস ভরছেন ঝুলন দাদু’, পিকে-কে তীব্র কটাক্ষ অধীরের
আরও পড়ুন: North Bengal: অজানা জ্বরে জবুথবু উত্তরবঙ্গ, কোন জেলায় কত আক্রান্ত, জানাল স্বাস্থ্য দফতর