Durga Puja 2021: ‘ছোট জাতের’ প্রবেশাধিকার ছিল না, ৩০০ বছর পেরিয়ে সম্প্রীতির বার্তাবাহক দাসবাড়ির দুর্গা

Kanthi: দাস পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, তত্‍কালীন জমিদাররা কাছে ঘেঁষতে দিতেন না তথাকথিত 'ছোটজাতের'  মানুষদের। দূর থেকেই দেখার অনুমতি ছিল মাত্র।

Durga Puja 2021: 'ছোট জাতের' প্রবেশাধিকার ছিল না, ৩০০ বছর পেরিয়ে সম্প্রীতির বার্তাবাহক দাসবাড়ির দুর্গা
চলছে প্রস্তুতি, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 02, 2021 | 10:38 AM

পূর্ব মেদিনীপুর: দুর্গাপুজো (Durga Puja) চলছে। মণ্ডপে, দেবীর শোভিত মূর্তি। ধুপধুনোর গন্ধ। আমোদ-আহ্লাদ। খামতি নেই কিছুর। কিন্তু, মণ্ডপের বাইরে দূর থেকে সেই আমোদের আভাসটুকু পেতেন ‘ছোট জাতের’ মানুষরা। মন্দির থেকে মণ্ডপ প্রাঙ্গণে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। সুুদূর ৩০০ বছরের সেই ফেলে আসা ইতিহাস এখন ধূলিমলিন। জাতপাতের ছোঁয়াচ এড়িয়ে এখন কেবল উত্‍সবের রোশনাই। কাঁথির দাসবাড়ির পুজোয় মিশে এমনই নানা গল্প।

দাসবাড়ির পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, ১৭৩৪ সালে পুজো শুরু হয়। তত্‍কালীন জমিদার কৃষ্ণ চন্দ্র পণ্ডার জমিতেই  জমিদার নন্দদুলাল দাস ও প্রাণ কৃষ্ণ দাসের হাত ধরেই প্রথম পুজোর শুরু। কুলদেবী চণ্ডীর পুজো আগেই হত। পরবর্তীকালে স্বপ্নাদেশ পান নন্দদুলাল। সেই থেকে দেবী দুর্গার পুজোর শুরু। কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের সারদা দাস বাড়ির এই পুজোর বয়স ৩০০ বছরের বেশি। বর্তমানে, ৩০০ সদস্যের এই পরিবার পুজোতেই মিলিত হয়।

দাস পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, তত্‍কালীন জমিদাররা কাছে ঘেঁষতে দিতেন না তথাকথিত ‘ছোটজাতের’  মানুষদের। দূর থেকেই দেখার অনুমতি ছিল মাত্র। মায়ের অঞ্জলি দিতে পারতেন কেবল পরিবারের সদস্যরা। এমনকী, কড়া পাহারার বন্দোবস্তও ছিল। কোনওভাবেই যাতে ‘অব্রাহ্মণ’ কেউ মণ্ডপে না আসতে পারেন। পরবর্তীতে অবশ্য সেই জাতিভেদ উঠে যায়। এখন, বিশাল জমিদার বাড়িতে অনুপ্রবেশে কোনও ‘জাত’ জানতে চাওয়া হয় না।

নিয়ম মেনেই একেবারে সাবেকী ঘরানায় চলে এই বাড়ির পুজো। কথিত রয়েছে সমুদ্র থেকেই দেবীর আবির্ভাব ঘটত বাত্‍সরিকভাবেই। সেই থেকেই মূল মন্দিরের পাশে মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালা দিয়ে প্রথমে পুজো হত। পরে, ট্রাস্টের মাধ্য়মে নাটমন্দিরের পাশেই পাকা বাড়ি নির্মাণ করে পুজো করা হয়।

ট্রাস্ট কমিটির সম্পাদক শ্যামল মাধব দাস বলেন, “আমাদের জমিদারিত্বে প্রথা মেনেই পুজো হয়ে আসছে। প্রতিপদ থেকে শুরু পুজো মূল মন্দিরে। ষষ্ঠিতে বোধন ও সপ্তমী থেকেই পুজো শুরু। এই জমিদারিত্বে প্রথমে পটেই পুজো হত পরে তা মূর্তির আকার নেয়। পরে এই পুজো গ্রামের পরিণত হয়। এখন ফি বছর মেলাও বসে। বৈষ্ণব মতেই মূলত পুজো হয় এখানে।”

জমিদার পরিবারের বংশধর মলয় কুমার দাস বলেন,  “মূল মন্দিরের পুজো শুরু হয়েছে ৩০০ বছরের বেশি। স্বপ্নাদেশ পেয়েই এ বাড়িতে পুজোর শুরু। আতশ কাঁচ দিয়ে সৌররশ্মির মাধ্যমে হোমে অগ্নিসংযোগ করা হয় আমাদের বাড়ির পুজোয়। শুরু হয় পট পুজো দিয়ে,পরে ঘট ও শেষে মূর্তিপুজো। নিত্যদিন মায়ের কাছে ভোগ পড়ে প্রায় ৪ কেজি চালের। দেবত্তর সম্পত্তি যাঁদের তাঁরাও আসেন পুজোতে। হোমযজ্ঞের জন্য কাঠের পরিমাণ নির্দিষ্ট।”

মলয়বাবুর আক্ষেপ, তাঁর শৈশবের মতোও পুজোতে আর জাঁক নেই। নেই আবেগও। নমো নমো করেই যেন পুজো সারা। উপরন্তু, করোনায় আরও বেহাল দশা। গ্রামের মেলাতেই যা স্ফূর্তির লক্ষণ। তবে এ বছর করোনার দাপটে মেলা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিশাল জমিদার বাড়িতে তবু উঁকি দেয় শরতের মেঘ। আগমনীর প্রত্যাশায় ঝলমলিয়ে ওঠে সুপ্রাচীন দাসবাড়ি।

আরও পড়ুন: CM Mamata Banerjee: বাতিল জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক, আকাশপথেই বন্যা কবলিত বাঁকুড়া দর্শন মুখ্যমন্ত্রীর