Purulia: ২৫ বছর পর রায় বুধন শবর মৃত্যু মামলায়, ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড থানার তৎকালীন ওসির
Purulia: দোষী সাব্যস্ত হলেন পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার তৎকালীন ওসি অশোক রায়। আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সোমবার পুরুলিয়া জেলা আদালতের ২ নং ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক জাহাঙ্গীর কবীর এই নির্দেশ দিয়েছেন।
পুরুলিয়া: অবশেষে পঁচিশ বছর পর বুধন শবর মৃত্যু রহস্যের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হল। দোষী সাব্যস্ত হলেন পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার তৎকালীন ওসি অশোক রায়। আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সোমবার পুরুলিয়া জেলা আদালতের ২ নং ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক জাহাঙ্গীর কবীর এই নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া এবং ৩৩০ ধারায় হেফাজতে থাকাকালীন অত্যাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে অশোক রায়কে। সোমবার আদালত চত্বরে এ কথা জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী। আদালতের এই রায় জানানোর পর শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির তরফে আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানানো হয়েছে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আদালতের এই রায়কে জয় হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, বুধন শবরের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। প্রতিবাদে সরব হয়েছিল বিভিন্ন মহল। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন প্রখ্যাত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীও। পরবর্তী সময়ে বুধন শবর মৃত্যকে ইস্যু করে আন্দোলনের পথে নামে পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি। আদালতের নির্দেশে তদন্তভার গিয়েছিল সিবিআই-এর হাতে।
প্রসঙ্গত, ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৮ সালে। সেই সময় অকড়বাইদ গ্রামের বুধন শবরের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। দিনটি ছিল ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। পুরুলিয়া এক ব্লকের অকড়বাইদ গ্রামের বাসিন্দা পেশায় হস্তশিল্পী বুধন শহর ও তাঁর স্ত্রী শ্যামলী শবর এক বিয়েবাড়িতে যাচ্ছিলেন। ভাগ্নীর বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে ভাঙ্গীরডিহি গ্রামে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেখানে যাওয়ার পথে বিকেল চারটে নাগাদ বরাবাজার থানার বামুনডিহা গ্রামের একটি দোকান থেকে পান নিচ্ছিলেন বুধন। সেই সময় পিছন থেকে এক ব্যক্তি বুধনের জামার কলার ধরে টেনে মোটরসাইকেলে বসিয়ে নিয়ে চলে যান। শ্যামলীর স্ত্রী কিছু বুঝে ওঠার আগেও গোটা ঘটনাটি ঘটে যায়। এরপর আকস্মিক ধাক্কা কাটিয়ে শ্যামলী দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ওই ব্যক্তি বরাবাজার থানার পুলিশ ছিলেন।
জানা যায়, এরপর শ্যামলী বরাবাজার থানায় গিয়ে দেখেন, থানার বারান্দায় বুধনকে লাঠি দিয়ে দুই পুলিশ খুব মারধোর করছে। শ্যামলী আটকাতে গেলে তাঁকে গালিগালাজ করা হয় বলেও অভিযোগ। পরে গ্রামের একজনকে থানায় পাঠালে জানানো হয়, ১৯৯৭ সালে দুর্গাপুজোর সময় পুরুলিয়া-বান্দোয়ানগামী একটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিল বুধন। এরপর পুলিশ বুধনকে আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নয়। এরপর আবার পুরুলিয়া কোর্টে বুধনকে যখন পেশ করা হয়েছিল, তখন আদালত তার জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর একদিন সকালে পুরুলিয়ার সংশোধনাগারে শ্যামলী ও তাঁর আত্মীয়রা দেখা করতে গেলে, তাঁদের বলা হয় বুধন আত্মহত্যা করেছে।
এরপর ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির পক্ষে একটি চিঠি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে পাঠানো হয়। হাইকোর্ট এই চিঠিকে রিট পিটিশন হিসেবে গ্ৰহণ করে ও নির্দেশ করেন দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করে অসম্পাদিত রিপোর্ট ও ভিডিয়ো জমা দিতে। পরবর্তীতে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। তারপর দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর এবার বুধন শবর মৃত্যু রহস্যের রায় এল।