Mamata Banerjee In Purulia: ‘হেরে গিয়েছেন তো কী, ঘর থেকে বের হন’, পুরুলিয়ায় দলীয় কর্মীদের মনন-পাঠে নেত্রী
Mamata Banerjee In Purulia: মঞ্চে তখন পুরুলিয়া স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। মাথার ওপর গনগনে সূর্য, খোলা আকাশের নীচে দলীয় কর্মীদের ঠাসা ভিড়।
পুরুলিয়া: বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সমালোচনা তো বটেই, মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মী সম্মেলন যেন ছিল আক্ষরিক অর্থেই ‘কর্মী সম্মেলন’। শুষ্ক ভূমিতে প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করেই কর্মীরা যখন মঞ্চের সামনে হাততালি দিচ্ছেন, নেত্রী তাঁদের উদ্দেশে বললেন, “আপনারাই তো আমার দলের সম্পদ।” গত লোকসভা, বিধানসভায় পুরুলিয়া সে অর্থে ভাল ফল করতে পারেনি তৃণমূল। পরিসংখ্যানের বিচারে, তারা দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু এলাকায় বিজেপিকে হারাতে যে একেবারে নীচু স্তরের সংগঠনকেই মজবুত করতে হবে, তা ভালভাবে বোঝেন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। এদিনের নেত্রীর ভাষণের সিংহ ভাগই তাই জুড়ে ছিলেন কর্মীরাই। হারকে ভুলে দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়াতে নেত্রী বললেন, “আমি আপনাদের পাহারাদার। হেরে গিয়েছেন তো কী, ঘর থেকে বের হন।”
পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে এবারে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন সুজয় বন্দোপাধ্যায়। বিজেপির তরফে লড়েছিলেন সুদীপ মুখোপাধ্যায়। বিজেপির সুদীপ মুখোপাধ্যায় ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তৃণমূল কংগ্রেসের সুজয় বন্দোপাধ্যায় পেয়েছিলেন প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ভাল ফল করেছিল বিজেপি। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া আসনে বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো জয়ী হয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো৷
পুরুলিয়াতে পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছে বিজেপি। আর সেই মাটি টলাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ঘাস ফুল শিবির। পুরুলিয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে মমতা ম্যাজিক সেভাবে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেনি শেষ কয়েক বছরে। তাই সেখানে জনসংযোগ বাড়ানোর ওপরই নজর দিচ্ছেন নেত্রী। দলীয় কর্মীদের উদ্বুব্ধ করতে দিলেন বিশেষ পাঠও।
মঞ্চে তখন পুরুলিয়ার স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। পারদ চড়েছে ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। মাথার ওপর গনগনে সূর্য, খোলা আকাশের নীচে দলীয় কর্মীদের ঠাসা ভিড়। পুরুলিয়ার গরম এমনিতেই শুষ্ক। মঞ্চ থেকে নেত্রী তাঁর কর্মীদের চাঙ্গা করতে বললেন, ” তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা আমাদের দলের সম্পদ। আমি ওঁদের সঙ্গে ভাই বোনের মতো ব্যবহার করি। মঞ্চে নেতা ক’জন বসে আছে গুনুন। বড় জোর ২০ জন হবে। আর নীচে রয়েছেন কয়েক লক্ষ লোক। বড় নেতারা নয়, বড় হচ্ছে আপনারা। আপনারা যাঁরা নীচে থাকেন, আপনারাই সব করেন। আপনারাই সবচেয়ে বড় নেতা।” বিশ্লেষকদের কথায়, ভাল ফল না করতে পেরেও নেত্রীর কাছ থেকে এহেন ‘প্রশ্রয়’ পাওয়া কয়েক লক্ষ কর্মীর কাছে যেন হিম শীতল পরশের অনুভূতির সামিল।
চব্বিশের নির্বাচনের আগে কর্মীদের ফের সর্বশক্তি দিয়ে রণাঙ্গনে নামাতে তৎপর নেত্রী। বললেন, “আমি চাই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা ঘর থেকে বের হন। হেরে গেছেন তো কী আছে, মিউনিসিপ্যালিটিতে তো মানুষ আপনাদের জিতিয়েছে। ঘর থেকে বের হন।” নেত্রীর সংযোজন, “কোন আদিবাসী মানুষ পাট্টা পাচ্ছে না দেখুন, সাইকেল করে গ্রামে গ্রামে যান। গ্রামে গিয়ে বসুন। মানুষের দরজায় গিয়ে খবর নিন। মানুষের কী চায়? আমি চাই আপনারা মানুষের সঙ্গে থাকি। আর আগামী দিন এখান থেকে একটা সিট যেন বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস না পায়, সেটা আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কথাগুলো বলছেন, তখন মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা চোখে পড়ার মতো। মমতা বললেন, “আর ফিরবে না বিজেপি। আমি আপনাদের পাহারাদার, আমি আপনাদের সঙ্গে সবসময় থাকব। আর হিম্মত নিয়ে লড়ব।”
তবে কর্মীরা কোনও ভুল করলে, তাঁর বিরুদ্ধে দল যে কড়া পদক্ষেপ করবে, সেটাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। মমতা বললেন, “দলের কোনও কর্মী যদি আমার ভুল করেন, তাঁকে আমি টেন থাপ্পড় মারতেই পারি। ওঁরা আমার ভাইবোনের মতন।”