School Students: ‘পেন্সিল বক্স দিতে পারেনি বাবা’, ‘মিস করি মা-কে’ ছোট্ট হৃদয়ের খবর রাখে কে? ড্রপবক্স খুলে স্তম্ভিত শিক্ষকরা
School Students: অভিভাবকরাও স্কুলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সংসারের চাপে সব সময় ছেলেমেয়েদের মনের কথা আমরা শুনে উঠতে পারেন না তাঁরা।
সুন্দরবন: সকাল হলেই স্কুল ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়া। টিফিন ভাগ, কাটাকুটি খেলা, কিচির-মিচির গল্প, সামান্য আনন্দে হেসে গড়িয়ে পড়া শিশুদের মনেও কি বাসা বাঁধে বিষাদ! সন্তানকে ‘দুধে-ভাতে’ রাখার লড়াই লড়তে গিয়ে সে খবর রাখা হয় না বাবা-মায়েরও। সেই শিশুদের মনের খবর নিতে গিয়ে চোখে জল এসে গেল প্রধান শিক্ষকেরও। ছোট্ট হৃদয়ে এত অভিমান, এত না-পাওয়া জমা হয়েছে, তা ভাবতে পারেননি তিনিও। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক স্কুলে সম্প্রতি ধরা পড়ল সেই ‘মনের কথা।’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির দিঘিরপাড় বকুলতলা প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য একটি ড্রপবক্স রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আর সেখানেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা একগুচ্ছ চিরকূট জমা পড়েছে।
সস্প্রতি মিডে-ডে মিল প্রকল্প খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় দল আসার আগে রাজ্যের স্কুলগুলির কাছে কিছু নির্দেশিকা আসে। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়, পড়ুয়াদের নিজস্ব কথা জানানোর জন্য স্কুলে একটি ড্রপবক্স রাখতে হবে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাখা হয় সেই ড্রপবক্স, নাম দেওয়া হয় ‘মনের কথা’। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের মনের কথা লিখে জমা দিতে বলা হয় ওই বাক্সে। শিক্ষকদের কথা মতো প্রায় ২০ জন পড়ুয়া তাদের মনের কথা লিখে ওই ড্রপবক্সে জমা করে।
ড্রপবক্স খুলে রীতিমতো স্তম্ভিত শিক্ষকরা। ছেঁড়া কাগজের টুকরোয় আঁকাবাকা হরফে ফুটে উঠেছে তাদের মনের কথা। কেউ লিখেছে, ‘বাবা-মা কেউ আমাকে ভালবাসে না’, কেউ লিখেছে, ‘আমি নাচ শিখতে চাই, কিন্তু আমাকে নাচের স্কুলে ভর্তি করা হচ্ছে না’। কারও চিরকূটে জমা কষ্ট ফুটে উঠেছে। সে লিখেছে, ‘বাবাকে একটি পেন্সিল বক্স কিনে দিতে বলেছিলাম, কিন্তু বাবা গরীব বলে কিনে দিতে পারেনি।’ কেউ আবার জানিয়েছে, মায়ের কাজের এত চাপ যে কাছেই পায় না সে।
প্রতিটি কথাই অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিলকুমার সামন্ত সবকটি চিরকুট পড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি চাইছেন, অভিভাবকদের নিয়ে একটি বৈঠক করতে। পাশাপাশি স্কুল পরিদর্শককেও বিষয়টি জানাতে চান তিনি। প্রধান শিক্ষক বলেন, এই মনের কথাগুলি এত বেদনার ও কষ্টের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এগুলি সমাধানের চেষ্টা করব। কথাগুলো হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে।
অভিভাবকরাও স্কুলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সংসারের চাপে সব সময় ছেলেমেয়েদের মনের কথা আমরা শুনে উঠতে পারেন না তাঁরা। সবকিছু দেওয়ার সামর্থ্যও নেই সবার। উল্লেখ্য, বছরে একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও করোনা মহামারির জেরে ব্যাপকভাবে ব্যহত হয়েছে সুন্দরবনের স্কুল শিক্ষা। পরবর্তী সময়ে পঠন পাঠন শুরু হলেও পড়ুয়াদের মনের কষ্ট ও আশা আকাঙ্খার বাস্তবচিত্র ভাবাচ্ছে শিক্ষামহলকে।