Suicide in Facebook Live: ফেসবুক লাইভে আত্মঘাতী পরিবার! ছাড়া পেলেন পুনম, ঘটনার নেপথ্যে কারা?

Suicide in Facebook Live: অভিযোগ, একটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন পুনম। অভিযোগ, পুনম দেবী ওই সংস্থার প্রায় সাড়ে ন লক্ষ টাকার হিসেব দিতে পারেননি। এরপর থেকেই টাকার জন্য দলের সদস্য ও গ্রামবাসীরা তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। তারপরই আত্মঘাতী হয় পুনমের পরিবার।

Suicide in Facebook Live: ফেসবুক লাইভে আত্মঘাতী পরিবার! ছাড়া পেলেন পুনম, ঘটনার নেপথ্যে কারা?
আত্মঘাতী পুনমের পরিবারের সদস্যরা (অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 10, 2022 | 3:47 PM

ডায়মন্ড হারবার : ফেসবুক লাইভ চালু করে একসঙ্গে আত্মঘাতী একই পরিবারের তিন সদস্য। রবিবারের এই মর্মান্তিক ঘটনা কার্যত নাড়া দিয়েছে গোটা সমাজকে। কী এমন ঘটল যে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হল ওঁদের? কেন একটা পরিবারকে শেষ হয়ে যেতে হল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে শিকড় পাওয়া যেতে পারে অনেক গভীরে। তবে রাতে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর অবশেষে ছাড়া পেলেন ওই পরিবারের মেয়ে পুনম দাস। পুনমের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক টাকা তছরুপের অভিযোগ মিথ্যা, এই বলেই আত্মঘাতী হয় পুনমের পরিবার।

রবিবার দক্ষিণ ২৪ পগরনার কুলপি থানার হাঁড়ার বাসিন্দা ওই পরিবারের তিন সদস্য শ্যামল নস্কর (৬৩),রিতা নস্কর (৪৩) ও অভিষেক নস্কর (২৫) আত্মহত্যা করেন। দিদিকে মিথ্যা অপবাদে ফাঁসানো হচ্ছে, এ কথা ফেসবুক লাইভে জানান তাঁর ভাই অভিষেক। শুধু তাই নয়, তাঁর দিদিকে এই অভিযোগে অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন অভিষেক।

ঠিক কী ঘটেছে?

রবিবার সকালে সপরিবারের বকখালিতে যান অভিষেক ও তাঁর বাবা-মা। সেখানে গিয়ে বনবিবির মন্দির থেকে কিছুটা দূরে সমুদ্রতটে জঙ্গলের ভেতর বসে ফেসবুক লাইভ চালু করেন পুনম দাসের ভাই। তিনি জানান, টাকা তছরুপে তাঁর দিদির কোনও ভূমিকা নেই, তা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাথাদের জড়িত থাকার কথাও বলে গিয়েছেন অভিষেক। তাঁরা জানান, বিচার না পেয়ে মিথ্যা অপবাদ থেকে বাঁচতে এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তাঁদের। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহগুলি উদ্ধার করে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সোমবার কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে তিনজনের দেহের ময়নাতদন্ত চলছে।

ছাড়া পেয়েছেন পুনম, গ্রেফতার ৫ মহিলা

পুনম দাস ও তাঁর স্বামী মিঠুন দাসকে রবিবারই আটক করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে যে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ ছিল, তার ভিত্তিতেই আটক করা হয়। তবে সোমবারই ছাড়া পেয়েছেন তাঁরা। এদিকে, এ দিন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকা কয়েকজন মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরাই পুনমকে মারধর করেছিলেন বলে অভিযোগ। ধৃতরা হলেন শম্পা দাস, সুপর্ণা দাস, দেবারতি দাস , পূরবী দাস ও রিতা দাস। এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩০৭, ৩২৬, ৪৪৮, ৪১  ও ৩৫ ধারায় মামলা হয়েছে। মারধর, খুনের চেষ্টার মতো অভিযোগ থাকলেও, যৌন হেনস্থার কোনও মামলা হয়নি। তবে, পুনমের ভাই মৃত্যুর আগে দাবি করেছেন, তাঁর দিদিকে  যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রেও খবর, যৌন হেনস্থার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কে এই পুনম, কী অভিযোগ?

ডায়মন্ড হারবারের সুলতানপুর এলাকার একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পুনম। মূলত পোষ্য পালনের সঙ্গে যুক্ত ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠী। ওই গোষ্ঠী যে ঋণ পেত, তা পুনমের হাত দিয়েই বিতরণ করা হত। ঋণের টাকা জমা পড়ত ডায়মন্ড হারবারের রত্নেশ্বরপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের শাখায়। সেই শাখার এক কর্মীর নামও উঠে এসেছে এই মামলায়। এখনও সেই কর্মীর খোঁজ পায়নি পুলিশ। অভিযোগ সেই টাকাই নয়ছয় করেন পুনম। তিনি নাকি টাকার কোনও হিসেব দিতে পারেননি।

পাল্টা অভিযোগ কী?

পুনমের প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, এই অভিযোগ নতুন নয়। এ সব নিয়ে আগেও নাড়াচাড়া হয়েছে। ব্লক স্তরে ঘটনা নিয়ে তদন্তও হয়েছে। মাস দুয়েক আগে ব্লক আধিকারিক অভিযোগ খতিয়ে দেখেন। সেই সময় ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়েছিল। তবে পুনমের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি বলেই দাবি প্রতিবেশীদের। স্থানীয়রা অনেকেই বলছেন, আদতে তছরুপের দায় অন্য কারও। স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে থাকা কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত থাকতে পারে বলেও অনুমান করছেন কেউ কেউ।

প্রশ্ন উঠেছে মানবাধিকারের

সমস্যা কতটা কঠিন হলে একটা পরিবার এরকম একটা চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেই প্রশ্ন উঠেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রকট হচ্ছে মানবাধিকারের প্রশ্ন। মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু পরিবারের অন্যতম সদস্য পুনম এখনও জীবিত রয়েছেন, তাই চাইলে তিনি মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারেন। কমিশনে অভিযোগ জানালে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন : Corona Virus: আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ‘হাফসেঞ্চুরি’ পার, সুন্দরবনে ধুঁকছে স্বাস্থ্য পরিষেবা