লকডাউনে চলে গিয়েছে চাকরি, প্রত্যন্ত দ্বীপে সাইকেলে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ‘ফেরি’ সৌমিত্রের

নদী বিচ্ছিল এই এলাকায় অক্সিজেন পাওয়া সহজ নয়। এখানকার বহু মানুষের কাছে আশার আলো জোগাচ্ছেন সৌমিত্র

লকডাউনে চলে গিয়েছে চাকরি, প্রত্যন্ত দ্বীপে সাইকেলে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর 'ফেরি' সৌমিত্রের
সাইকেলে সৌমিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 24, 2021 | 12:00 PM

কলকাতা: করোনার (COVID 19) দ্বিতীয় ঢেউয়ে এমনিতেই নাজেহাল রাজ্যবাসী। তার ওপর ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ (Yaas)। ঝড়ের তাণ্ডব চলাকালীন ওষুধ বা অক্সিজেনের (Oxygen) জন্য হাহাকার বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়ে যচ্ছে। সেই আশঙ্কার কালো মেঘের মধ্যেই আশা দেখাচ্ছেন গোসাবার সৌমিত্র মণ্ডল।

প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবার দ্বীপে দ্বীপে সাইকেলে অক্সিজেন কন্সেনট্রেটর নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন সৌমিত্র মন্ডল। আসলে শহর বা শহরতলীতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সরবরাহ থাকলেও দুর্গম সুন্দরবনের সরকারি হাসপাতালে ছাড়া অক্সিজেন পাওয়ার তেমন কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এমন পরিস্থিতিতে পরিত্রাতা হিসেবে অক্সিজেনের যোগান দিচ্ছেন সৌমিত্র। নিজের সাইকেলের ক্যারিয়ারে কনসেন্ট্রেটর বেঁধে নিয়ে গ্রামের মানুষকে প্রাণবায়ু জোগানোর চেষ্টা করছে ওই যুবক।

গোসাবার বালি দ্বীপের এই যুবকের কাজ চলে যায় লকডাউনে। করোনার কারণে লকডাউন হয়ে যাওয়ায় একটি স্কুলের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের চাকরি চলে যায় সৌমিত্রের। বর্তমানে কর্মহীন হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মন বিচলিত হয়ে পড়ে সুন্দরবনবাসীর করোনা অতিমারীর জন্য দুর্দশা দেখে। সুন্দরবনের এই অংশের মানুষ গোসাবা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল ও ছোট মোল্লাখালি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওপর মূলত নির্ভরশীল। এই দুই হাসপাতাল ছাড়া আর চিকিৎসার তেমন কোনও ব্যবস্থাই এখানে নেই। দু্ জায়গায় বেড মিললে ভালো, না হলে বাড়িতেই পড়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। আর বাড়িতে অক্সিজেন পাওয়া কার্যত অসম্ভব।

আরও পড়ুন: বুলবুল থেকে আমফান, দক্ষিণবঙ্গকে রক্ষা করেছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ, এবার?

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্বীপ এলাকার মানুষের সমস্যার দিক গুলি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। সেখান থেকেই জোগাড় করেছেন একটি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর। সেই কনসেন্টট্রেটর নিয়েই সৌমিত্র নদী বিচ্ছিন্ন গোসাবার রাঙাবেলিয়া, সাতজেলিয়া, লাহিড়পুর, কুমিরমারির মতো প্রত্যন্ত গ্রামপঞ্চায়েত এলাকাগুলোতে নিজের সাইকেলে কনসেন্ট্রেটর নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন দুয়ারে দুয়ারে। অক্সিজেনের ভান্ডার নিয়ে এইভাবে জীবন বাঁচাচ্ছেন সৌমিত্র। যদিও লকডাউনে নদীতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ, তবে সৌমিত্রর এই উদ্যোগকে মান্যতা দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন খোদ গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র। সৌমিত্র যাতে প্রত্যন্ত দ্বীপগুলিতে সহজেই নৌকায় চেপে চলে যেতে পারেন সেই কারণেই বিডিও নৌকায় যাতায়াতের অনুমতি দিয়ে সাহায্য করেছেন সৌমিত্রকে।